পবিত্র রমজান মাস কাছাকাছি চলে এসেছে। এরই মধ্যে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দিতে নানা রকম তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে। নতুন পেঁয়াজ উঠছে। তার পরও দাম না কমে ক্রমাগতভাবে বাড়ছে।
গত তিন দিনে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে বেড়েছে মাছ, মাংস, মুরগি ও ডিমের দাম। কয়েক দিন আগেই বেড়েছে ভোজ্য তেলের দাম। চাল, ডাল, আদা, রসুনসহ আরো অনেক পণ্যের দামই বাড়তি। এমনকি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সবজির দামও। কয়েক দিনে বিভিন্ন সবজির দাম কেজিপ্রতি ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতেও সরকার কিংবা বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর কার্যত কোনো ভূমিকা নেই বলেই জানান ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।
রোজার মাসকে কেন্দ্র করে অসাধু ব্যবসায়ীদের এমন তৎপরতা নতুন কোনো ঘটনা নয়। অতীতে দেখা যেত, রোজার মাস শুরু হলে কিংবা তার সামান্য আগে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যেত। সাম্প্রতিক সময়ে রমজান মাস শুরু হওয়ার মাস দুয়েক আগে থেকেই এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ও তাদের নানা ধরনের সিন্ডিকেট বাজার অস্থির করার অপচেষ্টা শুরু করে দেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এর পেছনে ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার অনৈতিক ইচ্ছাই মূলত দায়ী। এ জন্য বাজারে যে ধরনের তদারকি বা নজরদারি থাকা প্রয়োজন ছিল, বাস্তবে তার কোনো অস্তিত্বই নেই। ফলে সুযোগ বুঝে বাজারে জিনিসপত্রের দাম ইচ্ছামতো বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিবছরই রমজানের আগে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয়, সব পণ্যেরই পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে এবং দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। বাস্তবতা হলো, প্রতিবছরই দাম বাড়ে এবং বেশির ভাগ ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যায়। একই ধারায় এ বছরও নানা রকম আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। ক্রেতারা এগুলোকে তাদের সঙ্গে করা ‘নিষ্ঠুর তামাশা’ বলেই ধরে নিচ্ছে। প্রতিবারই বলা হয়, টিসিবির মাধ্যমে বাজারে হস্তক্ষেপ করা হবে এবং পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কিন্তু টিসিবি গুটিকয়েক ট্রাকের মাধ্যমে কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির যে উদ্যোগ নেয়, তা এতটাই নগণ্য যে বাজারে এর কোনো প্রভাবই পড়ে না। ধারণা করা হচ্ছে, এবারও টিসিবির উদ্যোগ বাজারে কোনো প্রভাবই ফেলবে না। তাই বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, টিসিবির উদ্যোগ অনেক গুণ বাড়াতে হবে। রমজান শুরুর অন্তত দুই মাস আগে থেকেই টিসিবির পণ্য বাজারে ছাড়তে হবে। একই সঙ্গে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের উদ্যোগ থাকতে হবে।
সাধারণ মানুষ বা ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। তাই সরকারকে এ ব্যাপারে আরো উদ্যোগী হতে হবে। অবিলম্বে বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিতে হবে। মূল্যবৃদ্ধির যেকোনো কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করতে হবে এবং অনৈতিক মুনাফাকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা আশা করি, রোজার আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে।