ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
লেনদেন ভারসাম্যে রেকর্ড ঘাটতি
Published : Thursday, 10 March, 2022 at 12:00 AM
মহামারীর ধাক্কা সামলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করায় আমদানির চাপে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ঘাটতিতে পড়েছে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্য।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুন-জানুয়ারি) এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬ কোটি ২০ লাখ ডলার।
আগের অর্থবছরে এই সময়ে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত ছিল ১৫৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আর পুরো ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বছরে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪৫৮ কোটি ডলার। তার আগে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ছিল ৫৪৪ কোটি ডলার।
দেশের ইতিহাসে লেনদেন ভারসাম্য বা ব্যালেন্স অব পেমেন্টে এত বড় ঘাটতি আর কখনও হয়নি। এর আগে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের ৯৫৬ কোটি ডলারের ঘাটতিই ছিল সবচেয়ে বড়।
সাধারণভাবে কোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে ঋণ নিতে হয়।
অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত বলেন, “ঘাটতির একটি কারণ হচ্ছে বাংলাদেশে আমদানি যতটা বেড়েছে, রপ্তানি ততটা বাড়েনি। আর একটি কারণ হচ্ছে রেমিটেন্স বৃদ্ধির হার কমে গেছে।”
চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৭৯৮ কোটি ডলার; আর আমদানি হয়েছে ৪ হাজার ৬৬৭ কোটি ডলারের পণ্য। তাতে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে প্রায় ১ হাজার ৮৬৯ কোটি ডলার।
আগের অর্থবছরে প্রথম সাত মাসে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছিল ১ হাজার ২৭ কোটি ডলার। চলতি বছরে রপ্তানির তুলনায় আমদানি খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় ঘাটতি বেড়েছে।  
২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রেমিটেন্স এসেছে ১ হাজার ২৩৩ কোটি বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের এই সময়ের তুলনায় ২৯৯ কোটি ডলার কম।
সামনে এই ঘাটতি আরও বাড়বে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত।
তিনি বলেন, “আগে যেসব কারণে ঘাটতি বাড়ছিল এর সাথে আবার যোগ হয়েছে যুদ্ধ। তাতে আন্তর্জাতিক বাজার বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে। বিশেষ করে তেলের দাম বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ যদি আগের মতই তেল আনে, তাহলেও আগের চেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা দিতে হবে। চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতি আরও বেড়ে যাবে।”
অবশ্য আমদানি খরচ বৃদ্ধির কারণে যে ঘাটতি বাড়ছে, সেটা নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তার কিছু নেই বলে মনে করেন জায়েদ বখত।
তার ভাষায়, “করোনাভাইরাসের কারণে অনেকদিন দেশে বিনিয়োগ বন্ধ ছিল। সেই বিনিয়োগগুলা এখন হচ্ছে তাই আমদানি বাড়ছে।
“এছাড়া রপ্তানি বাড়ছে, সেজন্যও আমদানি বাড়ছে। ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং কাঁচামাল আনার জন্য যদি আমদানি বাড়ে, তাহলেতো সেটা খুশির বিষয়। দেশি বিনিয়োগ হচ্ছে, উৎপাদন হচ্ছে।”
দেশে অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, দেখা গেছে বাণিজ্য ঘাটতির চেয়ে যখন রেমিটেন্সের পরিমাণ বেশি হয়, তখন চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত থাকে।
“সমস্যা হচ্ছে, আপনি এটার খরচটা মেটাতে পারছেন না। আমরা সাধারণত রেমিটেন্স দিয়ে এই (বাড়তি আমদানির) ঘাটতিটা মিটিয়ে ফেলি। এই কারণে আমাদের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত থাকে।
“এই মুহুর্তে একটু চাপ আছে। এই চাপ মিট-আপ করার জন্যই তো ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ গড়ে তোলা হয়। আমাদেরতো ৪৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে। সেটা না হয় কমে ৪০ বিলিয়ন হল। তাতে খুব বেশি ক্ষতি হবে না।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস শেষে দেশে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চিতি ছিল প্রায় ৪৪ দশমিক ৯৫ কোটি ডলার।
তবে পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশ মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, “সরকারকে এখন বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার ব্যবস্থাপনায় মনোযোগী হতে হবে। পাশাপাশি আমদানি কীভাবে কমানো যায়, সেদিকে মনোযোগী হতে হবে।”
২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সরকার মূল্যস্ফীতিকে ৫ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখার পরিকল্পনা করলেও গত অগাস্টের পর থেকে তা বাড়তির দিকে।
বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে জানুয়ারিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। যদিও সরকারের এ হিসাব নিয়ে অর্থনীতিবিদদের অনেকের সংশয় আছে।