তানভীর দিপু:
কুমিল্লায়
ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবি পণ্য বিক্রির কার্যক্রম
শুরু হয়েছে। কুমিল্লা জেলায় মোট দুই ধাপে ২ লক্ষ ৬৪ হাজার ৭শ ২৪জন এই
কার্ডের মাধ্যমে কেজি প্রতি চিনি ৫৫ টাকা, মশুর ডাল ৬৫ টাকা এবং সয়াবিন তেল
লিটার প্রতি ১১০ টাকা মূল্যে সংগ্রহ করতে পেরেছেন। দ্বিতীয় ধাপে ৫০ টাকা
কেজি দরে ছোলাও বিক্রি করা হবে। প্রথম দিনে কার্ডধারীরা পণ্যগুলো ২
কেজি/লিটার পরিমাণে ক্রয় করতে পেরেছেন।
ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে
ভর্তুকি মূল্যে টিসিবি পণ্য বিক্রির কার্যক্রম নিয়ে গতকাল রবিবার সকালে
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান। জেলা প্রশাসক বলেন, পণ্য বিতরনে কোন
অনিয়ম হলে অথবা পণ্যের দাম বেশী নিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিবার
প্রতি ৬কেজি পণ্য ও রমজানে ২কেজি বাড়িয়ে ৮কেজি পণ্য ক্রয় করতে পারবেন এ
কার্ডধারীরা।
জেলা প্রশাসন থেকে জানা যায়, কুমিল্লা জেলায় মোট দুই ধাপে
২লক্ষ ৬৪হাজার ৭শ ২৪জন এরমধ্যে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৫৩ হাজার
২শ ২৮জন জন ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে টিসিবি পণ্যের ভর্তুকি মূল্যে পণ্য
কেনার সুবিধা ভোগ করবেন। জেলার ১৭টি উপজেলার, ৮টি পৌরসভা ও কুমিল্লা সিটি
কর্পোরেশন এলাকার ২৩টি স্পটে এ পণ্য বিক্রী করা হবে। ১১৭ জন ডিলারের
মাধ্যমে এসব পন্য বিক্রির কার্যক্রম চলছে।
এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক
(সার্বিক) মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক শওকত
ওসমান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকিয়া আফরিন উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে
কুমিল্লা নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে টিসিবি পন্য ক্রয় করতে গিয়ে হয়রানির
শিকার হয়ে পণ্য না নিয়েই ফিরে এসেছেন শতাধিক কার্ডধারী। দীর্ঘ সময় লাইনে
দাড়িয়ে ফেরত যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে। আবার একই পরিবারের সদস্যরা
৪/৫টি কার্ড পাওয়া, আবার অনেকে কার্ড না পাওয়া নিয়েও হতাশা বোধ করছেন
অনেকে।
নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মুরাদপুর বটতলা এলাকার বাসিন্দা
ষাটোর্ধ্ব কলি বেগম জানান, বয়স্ক মানুষ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে টিসিবির পন্য
ক্রয়ে হাউজিং এস্টেট গিয়ে ছিলেন সকাল সাড়ে আটটায়। দীর্ঘ লাইন শেষে পণ্য
ক্রয় করতে গেলে তালিকায় নাম নেই বলে তাকে পন্য দেওয়া হয়নি। রোদে দীর্ঘ সময়
দাড়িয়ে পন্য না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা
নুরু মিয়া বলেন , ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর থাকেন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে তার
বাসা সংলগ্নে টিসিবির পন্য বিক্রয় করায় অনেক বয়স্ক প্রতিবন্ধী লোকদের দীর্ঘ
পথ অতিক্রম করে যেতে হয়। আমাদের ওয়ার্ডে শেষ প্রান্তে অন্য ওয়ার্ডের
সীমায় কেন্দ্রটি স্থাপন করায় আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। এ কেন্দ্রটি
যেন ওয়ার্ডের মধ্যস্থানে স্থাপন করা হয়।
আরেক বাসিন্দা আব্দুল জলিল
জানান, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরের দেওয়া কার্ড প্রাপ্ত সকলকে ফেরত দেওয়া
হচ্ছে তাদের নাম তালিকায় নেই বলে। আবার অনেকের কার্ড নাম্বারের রয়েছে গড়
মিল। তারা দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করে ফেরত আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
মোঃ
ইদ্রিস মিয়া বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছ থেকে টিসিবির পন্য ক্রয়ের কার্ড
সংগ্রহ করেছি। আমাদের আজকে পন্য ক্রয় করতে বলা হয়েছিলো। তিনি বলেন আমি
একজন ক্ষুদ দোকানি। দোকান বন্ধ করে পন্য ক্রয় করতে গিয়ে দীর্ঘ লাইনে পার
হয়ে ফেরত আসতে হয়েছে। আমার কার্ড আছে। তালিকায় নাকি নাম নাই।
নগরীর
বউবাজার এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম বলেন, আমাদের প্রতিবেশি একই পরিবারের
চারজন কার্ড পেয়েছে। অথচ আমাদের পরিবারের কেউ কার্ড পায়নি। আবার একজনের
নাম দুবার ও তালিকায় রয়েছে।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ও
১৩,১৪,১৫ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর নুরজাহান আলম পুতুল বলেন, আমার
দেওয়াকার্ড প্রাপ্তদের ১৪ নম্বরওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের সামনের
টিসিবি’র ট্রাক থেকে ফেরত দেওয়া হয়েছে তালিকায় তাদের নাম নেই বলে। টিসিবির
পণ্য ক্রয় করতে গিয়ে ফেরত আসা উত্তেজিত শতাধিক ব্যাক্তি আমার বাসার সামনে
এসে জড়ো হয়। আমি তাদের কোন সদোত্তর দিতে পারি নি। বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনের
প্রধান নির্বাহীকে জানিয়েছি।
১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সেলিম খান বলেন,
সিটি কর্পোরেশন থেকে ডিলারদের কাছে পণ্য ও তালিকা দেওয়া হয়েছে। এখানে
অনেকের তালিকা বাদ পড়ায় মানুষ এসে ভোগান্তিতে পড়েছে। তালিকার নামের বিষয়ে
আমার কিছু করার নাই। আমি শুধু তদারকি করছি।
পণ্য বিক্রয়ের এজেন্ট
মের্সাস দিবা এন্টারপ্রাইজের মোহাম্মদ আরিফুল হক বলেন, সিটি কর্পোরেশন থেকে
দেওয়া তালিকা অনুযায়ী পন্য বিক্রয় করা হচ্ছে। বাদ পড়া বিষয়টি আমাদের না।
অভিযোগো
প্রেক্ষিতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, যারাই
কার্ড পেয়েছেন তারাই এই পণ্য কেনার সুবিধা পাবেন। কারো কোন অভিযোগ থাকলে
আামাকে লিখিত অভিযোগ জানালে- আমি সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো।