দেশের আইন-শৃঙ্খলা
পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ডাকাতি-ছিনতাইয়ের
ঘটনা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও ধর্ষণ-পরবর্তী
হত্যার ঘটনা। বাড়ছে পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে খুনের ঘটনাও। শুধু গতকাল
মঙ্গলবারের কালের কণ্ঠে এ ধরনের বেশ কিছু খবর রয়েছে।
সোমবার ভোরে
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নে ফার্নিচার ব্যবসায়ী সুমনকে
হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সিলেটের জৈন্তাপুরে জমিসংক্রান্ত বিরোধে দুই
গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে রবিবার দিবাগত রাতে আট ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলে।
এতে একজন নিহত হন। চাঁদপুরে পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের কারণে আবুল বাশার নামে
একজনকে মুঠোফোনে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। সোমবার সকালে শরীয়তপুরের
ভেদরগঞ্জ উপজেলার তারাবুনিয়া ইউনিয়নে বাজারের টয়লেটের পাশ থেকে ছয় বছরের এক
শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মাদারীপুরের শিবচরে পারিবারিক কলহের জের ধরে
সোমবার রাতে স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ হাসপাতালে রেখে পালিয়ে গেছেন অটোচালক
স্বামী।
সন্ত্রাস, খুনাখুনির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সমাজে নিরাপত্তাজনিত
উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। উদ্বেগের মাত্রা আরো বাড়িয়েছে পুলিশের সঠিক ভূমিকার
অভাব। সারা দেশে, এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মাদকের বিস্তার ভয়ংকর রূপ
নিয়েছে। মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবীরা জড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের সন্ত্রাসে।
অনেকে ভাড়াটে হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। গতকালের কালের কণ্ঠে প্রকাশিত অন্য এক
প্রতিবেদনে জানা যায়, রাজধানীসহ সারা দেশেই পেশাদার সন্ত্রাসী তৈরি হয়েছে,
যারা অর্থের বিনিময়ে সন্ত্রাস করে, খুন করে। বিশেষ করে রাজনৈতিক বিরোধ,
ঠিকাদারি বিরোধসহ আরো বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভাড়াটে সন্ত্রাসী বা খুনিদের
ব্যবহার করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ঘটনায় পারিবারিক বিরোধেও ভাড়াটে খুনি
ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বিদেশে বা কারাগারে থাকা কিছু শীর্ষ
সন্ত্রাসীর গোপন নেটওয়ার্কের সঙ্গেও এরা যুক্ত। চাঁদাবাজি, অপহরণসহ আরো
অনেক অপরাধ করছে এরা। ধারণা করা হয়, রাজধানীর আটটি অপরাধপ্রবণ এলাকায় এমন
সন্ত্রাসীর সংখ্যা শ খানেক কিংবা তারও বেশি হতে পারে। এমনই কয়েকজন অপরাধী
১৫ লাখ টাকার চুক্তিতে গত মাসে প্রকাশ্য রাস্তায় গুলি করে হত্যা করেছে
মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু ও এক
কলেজছাত্রীকে। এর আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নে স্ত্রীর ভাড়া
করা তিন সন্ত্রাসীর হাতে খুন হন স্বামী আনোয়ার হোসেন। গত ১০ জানুয়ারি
যশোরের অভয়নগরে নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য উত্তম সরকারকে গুলি করে হত্যা করেছে
প্রতিপক্ষের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা। ৭ মার্চ খুলনায় ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের
গুলিতে নিহত হন রাজু শেখ নামের এক যুবক। এমন ঘটনা এখন অহরহ ঘটছে।
অপরাধ
পরস্পরসম্পর্কিত। অতীতে অপরাধীদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতাও দেশে অপরাধ
বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। অনেকেই মনে করছেন, মাদকের বিস্তার অপরাধ বৃদ্ধির
একটি বড় কারণ। সেই সঙ্গে সমাজের ক্রমবর্ধমান অস্থিরতাও দেশকে ক্রমেই ভয়ংকর
অপরাধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বাহিনীর অদক্ষতা এবং
পেশাদারির অভাবকেও অনেকে অপরাধ বৃদ্ধির কারণ বলে মনে করেন। সমাজকে
অপরাধমুক্ত করতে হলে সামগ্রিকভাবে প্রয়াস চালাতে হবে। পাশাপাশি দ্রুততম
সময়ে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।