করোনার
অভিঘাত কাটিয়ে যখনই দেশের শিল্প খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তখনই গ্যাসের সংকট
অশনিসংকেত দিচ্ছে। গ্যাস-সংকটের কারণে কেবল শিল্প খাতে উৎপাদন কমে যাওয়ার
পাশাপাশি রোজার দিনে অনেক বাসাবাড়িতে রান্নাবান্নায় বড় ধরনের সমস্যা তৈরি
করেছে।
অনেক দিন থেকেই গ্যাসের সংকট চলছিল। শিল্প খাত, পরিবহন ও
বাসাবাড়িতে যে পরিমাণ গ্যাসের প্রয়োজন, আমরা তা উত্তোলন করতে পারছি না,
যদিও বহু বছর আগে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ গ্যাস রপ্তানির খোয়াবও দেখিয়েছিলেন।
গ্যাসের বাকি চাহিদা পূরণ করা হয় বিদেশ থেকে তরলীকৃত গ্যাস আমদানি করে।
সম্প্রতি চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে অতিরিক্ত গ্যাস
উত্তোলন করতে গিয়ে বিপত্তি ঘটে। গ্যাসক্ষেত্র থেকে বালু উঠতে থাকে; যে
কারণে ছয়টি গ্যাসকূপ তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করতে হয়। বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের
সক্ষমতা দৈনিক ১২০ কোটি ঘনফুট। গত শনিবার ১২৭ কোটি ঘনফুট উত্তোলন করতে গিয়ে
বিপর্যয় ঘটে। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে সমুদ্র উপকূলের একমাত্র গ্যাসক্ষেত্র
সাঙ্গুতে অতিরিক্ত গ্যাস উত্তোলন করতে গিয়ে বন্ধ হয়ে যায়।
একসঙ্গে ছয়টি
কূপের গ্যাস উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্যাস–সংকট মারাত্মক রূপ নেয়। এরপর
ঢাকা শহরের অনেক বাসাবাড়িতে চুলা জ্বলেনি, সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ
অনেক এলাকার শিল্পকারখানায়ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় অথবা ব্যাপকভাবে কমে
যায়। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পোদ্যোক্তারা সময়মতো রপ্তানি পণ্য সরবরাহ করা যাবে
না বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
মঙ্গলবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ
মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেওয়ায়
জরুরি মেরামতের কাজ করতে হয়েছে। ফলে গত দুই দিন কোনো কোনো এলাকায় গ্যাসের
চাপ কম ছিল। অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের নিরলস পরিশ্রমের ফলে ধীরে ধীরে সংকট কেটে
উঠতে শুরু করেছে। তাঁদের দাবি, শেভরন পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে
দৈনিক ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো। সমস্যা দেখা দেওয়ায় উৎপাদন ৮০
কোটি ঘনফুটের নিচে নেমে এসেছিল। বর্তমানে ১১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা
হচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের হিসাবেই দিনে ১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস ঘাটতি আছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বন্ধ হয়ে যাওয়া ছয়টি গ্যাসকূপের মধ্যে চারটি চালু
করা সম্ভব হয়েছে। বাকি আরও একটি শিগগিরই চালু হবে। অবশিষ্ট কূপের
অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, গ্যাস-সংকটের কারণে
ইতিমধ্যে শিল্প খাতে অভিঘাত শুরু হয়েছে। অনেক কারখানার উৎপাদন অর্ধেকে
নেমে এসেছে। রপ্তানিমুখী শিল্প, বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্প চাহিদামতো পণ্য
সময়মতো চালান করতে পারবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে
করেন, আমাদের মাটি ও সমুদ্রের নিচে আরও অনেক গ্যাস মজুত আছে। এর সদ্ব্যবহার
করতে প্রয়োজন ছিল অধিক অনুসন্ধান ও উত্তোলন। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা
সেদিকে না গিয়ে এলএনজি আমদানি করার ভুল নীতি নিয়েছেন, যে কারণে দেশে যথেষ্ট
গ্যাস সম্পদের মজুতের প্রাক্কলন থাকা সত্ত্বেও জ্বালানি খাত ক্রমেই
পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে এলএনজির দামও বেড়ে গেছে। আজ এলএনজিবাহী
জাহাজ বন্দরে আসার কথা আছে। সে ক্ষেত্রে হয়তো সাময়িক সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব
হবে।
কিন্তু গ্যাস সমস্যার সমাধান করতে হলে আমাদের নতুন নতুন
গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও গ্যাস উত্তোলনের দিকে মনোযোগ বাড়াতে হবে। আরেকটি
বিষয় হলো যেখানে পেট্রোবাংলার গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা আছে, সেখানে বিদেশি
কোম্পানিকে দিয়ে গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও উত্তোলনের প্রয়োজন আছে কি না,
তা–ও ভাবতে হবে।