ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
দাউদকান্দিতে হারিয়ে গেছে ঘরে ভাজা মুড়ি
Published : Thursday, 28 April, 2022 at 12:00 AM
আলমগীর হোসেন,দাউদকান্দি।।
'খালা বলো ফুফু বলো মায়ের সমান নয়-মুড়ি বলো চিড়া বলো ভাতের সমান' নয়। চিরায়ত এ প্রবাদটির মত মায়ের বিকল্প  যেমন নাই সত্য তেমনি  খালা-ফুফু ছাড়াও আত্মীয়তার সম্পর্ক অচল। বাঙালির তিন বেলা ভাতা ছাড়া পেট চলেনা, মনও ভরেনা। তারপরও কবে থেকে যে মুড়ি-চিড়া-পিঠা-পুলি বাঙালির জীবনের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেছে তা গবেষণার বিষয়। এক সময় ঘরে ঘরে হাতে ভাজা  মুড়ি-চিড়া ছিল জীবনের আনন্দ উপভোগের বিষয়। সকালের মুঠি  দিনের খুটি মানে বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে এক মুঠি কোন কিছু খেয়ে বেরুলে সারাদিন আর খানা নিয়ে চিন্তা ছিলো না। কথায় আছে পেটে খেলে পিটে সয়। ক্ষুধা নিবারণের  জন্য নাস্তা হিসেবে মুড়ি-চিড়া ছিল অনিবার্য। অন্যদিকে বাড়িতে মুড়ি-চিড়া ভাজা উপলক্ষ্যে পারিবারিক উৎসব হতো। পাশের বাড়ির লোকজনও মুড়ি  উৎসবে যোগ দিত।
বাংলাদেশ পরিবেশ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা দুইবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক এবং জাতীয় পরিবেশ পদক প্রাপ্ত সমাজ বিশ্লেষক মতিন সৈকত জানান, বাড়িতে গরম ভাজা মুড়ি কিশোর তরুণরা লুঙ্গির কোচায় ভরে হাটতো আর মুঠো-মুঠো করে মুখে পুরে দিতো। বন্ধুুদের নিয়ে দলবেঁধে  মজা করে খেতো। গৃহস্ত কৃষক পরিবারে মুড়ি-চিড়া ছিল সারা বছরের নাস্তা। বিশেষ করে শীতের দিন সকালে  মুড়ি নাস্তা করে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করত। বড়'রা ক্ষেতে-খামারে, কাজে যাওয়ার সময় মুড়ি খেয়ে কাজে যেতো। কলসি, টিন, ড্রাম ভর্তি ঘরে তৈরি  মুড়ি মাসের পর মাস  সংরক্ষিত রেখে অতিথি আপ্যায়নের ঘাটতি ছিলোনা। মাটি এবং সিলভারের কলসিতে ভরে মুড়ি বিয়ে বাড়িতে এবং জামাই বাড়িতে পাঠানোর পুরানো রেওয়াজ ছিল। অবস্থাপন্ন গৃহস্থ পরিবারে হাতে তৈরি  মুড়ি-মোয়া, চিড়া,পিঠাপুলির বাহারি আয়োজন ছিল। সময়ের ব্যাবধানে মানুষের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে এবং হাতের কাছে নানারকম উপাদান না থাকার কারণে কষ্ট করে ঝুঁকি নিয়ে  মহিলারা মুড়ি চিড়া পিঠা পুলি আয়োজন করতে পারছেনা। বাড়িতে মুড়ি-চিড়া পিঠা-পুলি আয়োজন করতে অনেক কষ্ট, খরচ এবং সময় ব্যায় হয়। বাজার থেকে মুড়ি চিড়া পিঠা পুলি সব কিনতে পাওয়া যায়। এখন সবায় রেডিমেট জিনিস খুঁজে। এতে খরচ কম,ঝামেলা কম। তবে স্বাস্থ্য সম্মত নিরাপদ খাবার পাওয়া যায়না।'
দাউদকান্দির মালীগাওঁ ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ মোঃ আল-আমিন মিয়াজী বলেন, মুড়ি অ্যাসিডটি রোধ করে,  শরীরে যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে, যাদের অ্যাসিডিটি হয়, তাদের ক্ষেত্রে মুড়ি খুবই উপকারী। তাই নিয়মিত মুড়ি খেলে অ্যাসিডিটি কমবে। পেটের সমস্যায় শুকনো মুড়ি কিংবা ভেজা মুড়ি খেলে তাৎক্ষণিক উপকার পাওয়া যায়। মুড়িতে ভিটামিন বি ও প্রচুর পরিমাণে মিনারেল থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পাশাপাশি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। মুড়ি চিবিয়ে খেতে হয়। এর ফলে দাঁত ও মাড়ির একটা ব্যায়াম হয়। নিয়মিত মুড়ি খেলে দাঁত ও মাড়ি ভাল থাকে। মুড়িতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ফাইবার, যা হাড় শক্ত করে। এছাড়া মুড়িতে রয়েছে শর্করা, যা প্রতিদিনের কাজে শক্তি যোগান দেয়। কম ক্যালরির খাবার খাবেন, আবার পেটও ভরবে, যদি এমনই আপনার ইচ্ছা হয় তাহলে মুড়ি খেতে পারেন। সারাদিন বাড়িতে, অফিসে যখনই হাল্কা ক্ষুধা পাবে, তখন মুড়ি খেয়ে নিলে ক্ষুধা মিটবে, ক্ষতিও হবে না।যাদের পেটের সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে মুড়ি বিশেষ উপকারি। এছাড়া মুড়িতে সোডিয়ামের পরিমাণ অত্যন্ত কম থাকে। যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন, তারা মুড়ি খেতে পারেন।