চৌদ্দগ্রাম
প্রতিনিধি: মাত্র এক শতক জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে
ইসরাফিল (২৮) নামে এক যুবককে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের
লোকজন। এ সময় ইসরাফিলের মা ও চাচাতো ভাইসহ আরো তিনজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায়
পুলিশ নারী-পুরুষসহ একই পরিবারের চারজনকে আটক করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে রোববার
দুপুরে উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা। নিহত ইসরাফিল ওই গ্রামের
হানিফ মিয়ার ছেলে। তাঁর ঈশান নামে দশ মাস বয়সী এক শিশু সন্তান রয়েছে।
স্থাানীয়
স‚ত্রে জানা গেছে, ইসরাফিলের পিতা হানিফ মিয়া ও পাশ^বর্তী মোক্তল হোসেনের
সাথে মাত্র এক শতাংশ জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। রোববার দুপুরে মোক্তল
হোসেনের ছেলে সজিব, বোন নাসরিন, আইরিন ও মা রহিমা বেগম বিরোধকৃত ওই জায়গায়
খড়ের গাঁদা(ছিন) তৈরি করছিল। এ সময় ইসরাফিল ও তার ভাই সালমান বাধা দিলে
কিছু বুঝে উঠার আগেই মোক্তল হোসেনের ছেলে সজিব ইসরাফিলকে হাতে থাকা কুড়াল
দিয়ে গাঁড়ে ও মাথায় আঘাত করে। ইসরাফিলের চিৎকারে তার চাচাতো ভাই রামীম, মা
রিনা বেগম ও চাচী আয়েশা বেগম এগিয়ে আসলে মোক্তল হোসেনের ছেলে ও মেয়েরা
তাদেরকেও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। তাদের চিৎকার শুনে স্থাানীয়রা এগিয়ে এসে
আহতদেরকে উদ্ধার শেষে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্যা কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ইসরাফিলকে মৃত ঘোষণা করেন।
চৌদ্দগ্রাম
উপজেলা স্বাস্থ্যা কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডাঃ রিফাতুল
হক বলেন, ‘নিহত ইসরাফিলের গাঁড়ে ও মাথায় ভারী ধারালো অস্ত্রের গভীর ক্ষত
রয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়’।
নিহত
ইসরাফিলের চাচাতো ভাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রামীম বলেন, ‘ঘাতক সজিব প‚র্ব
থেকে পরিকল্পনা করে বিরোধকৃত জায়গায় খড়ের ছিন দিচ্ছিল। আমরা বাধা দিই এবং
পুলিশকে খবর দিই। পুলিশ আসার আগেই ঘাতক সজিব ইসরাফিলকে কুপিয়ে হত্যা
করেছে’।
ইসরাফিলের ছোট ভাই সালমান বলেন, ‘এ জায়গা নিয়ে আমাদের সাথে
ঘাতক সজিবের বাবা মোক্তল হোসেনের বিরোধকে কেন্দ্র করে আদালতে মামলা চলমান
রয়েছে। রোববার প‚র্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা আমার ভাই ইসরাফিলকে কুপিয়ে
হত্যা করে এবং মা, চাচাতো ভাই ও চাচিসহ আরও তিনজনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত
করে’।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইসরাফিলের মা রিনা বেগম বলেন, ‘আমি ঘরের
বাইরের চিৎকার শুনে গিয়ে দেখি ঘাতক সজিব আমার ছেলেকে কুড়াল ও তার বোনেরা
ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাচ্ছে। আমার চোখের সামনে তারা আমার কলিজার টুকরো
কুপিয়ে হত্যা করেছে’।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্যা কমপ্লেক্সের
চিকিৎসক ডাঃ আবুল হাশেম সবুজ বলেন, ‘আহত রামীম, আয়েশা বেগম ও রিনা বেগমের
অবস্থাা আশঙ্কাজনক। তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে’।
এদিকে ইসরাফিলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে
উত্তেজিত গ্রামবাসী ইসরাফিলের চাচা মোক্তল হোসেন, তার মেয়ে নাসরিন, আইরিন ও
মা রহিমা বেগমকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
কনকাপৈত ইউপি চেয়ারম্যান
জাফর ইকবাল বলেন, ‘মোক্তল হোসেনের সাথে নিহত ইসরাফিলের বাবা হানিফ মিয়ার
জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছে। এ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে একাধিকবার
শালিশী সভা হয়। মোক্তল হোসেন শালিশ অমান্য করে এবং নকল দলিল সৃজন করে।
বিরোধটি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আমরা উ”চতর আদালতে বিষয়টি প্রেরণ করি। রোববার
প‚র্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মোক্তল হোসেনের সজিব ওই জায়গাতে খড়ের ছিন তৈরি
করছিল। বাধা দেয়ায় তারা ইসরাফিলকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে’।
চৌদ্দগ্রাম
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন,
‘জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে হামলায় ইসরাফিল নামে এক যুবক নিহত
হয়েছে। লাশ উদ্ধার শেষে থানায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা মোক্তল হোসেন, তার
স্ত্রী ও মেয়েসহ চারজনকে আটক করি। এছাড়া প্রধান অভিযুক্ত সজিবকে
গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে’।