Published : Tuesday, 10 May, 2022 at 12:00 AM, Update: 10.05.2022 12:48:21 AM
তানভীর
দিপু: কুমিল্লার বুড়িচংয়ে মালবাহী একটি ট্রেনের তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে
প্রায় ১০ ঘন্টা চট্টগ্রামের সাথে ঢাকা ও সিলেটের রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিলো।
সোমবার (৯ মে) ভোর ৪ টার দিকে বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর রেলওয়েস্টেশন এলাকায় এ
ঘটনা ঘটে। পরে উদ্ধার কাজ শেষে দুপুর পৌনে ২টায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিকে বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় নোয়াখালী থেকে ঢাকাগামী উপকূল এক্সপ্রেস লাকসাম
রেলওয়ে জংশনে এবং শশিদল স্টেশনে তুর্ণা নিশিতা এক্সপ্রেস আটকা পড়ে। টানা
১০ ঘন্টা একই স্থানে আটকে থেকে চরম ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা।
সরেজমিনে
গিয়ে দেখা যায়, বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর রেলষ্টেশনের আনুমানিক তিন শ গজ
দক্ষিণে ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবল লাইন থেকে ছিটকে পরে আছে চট্টগ্রাম থেকে
ঢাকাগামী মালবাহী একটি ট্রেনের দু’টি বগি। আরো একটি বগি রেললাইনের ট্র্যাক
থেকে নেমে যায়। প্রায় আড়াই শ মিটার এলাকাজুড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় রেললাইন। এই
দুর্ঘটনায় কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায় নি। কুমিল্লার রেলওয়ে পথ কর্মকর্তা
মো. লেয়াকত আলী জানান, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা মালবাহী একটি ট্রেন ভোর
৪টার দিকে রাজাপুর রেলস্টেশন এলাকায় পৌঁছলে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তিনটি
বগি লাইনচ্যুত হয়। খবর পেয়ে লাকসাম ও আখাউড়া রেলওয়ে জংশন থেকে দুইটি
উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়।
স্থানীয়রা জানান, রাত আনুমানিক ৪
টায় দুর্ঘটনা ঘটলেও সকাল ৭টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় উদ্ধারকারী ট্রেন।
আখাউড়া জংশন থেকে আসা উদ্ধারকারী ট্রেনটি এসে প্রথমে উদ্ধার কাজ শুরু।
দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ রেললাইন মেরামতের পর লাকসাম থেকে আসা উদ্ধারকারী
ট্রেনটি এসে যোগ দেয়। দুইটি উদ্ধারকারী ট্রেনের যৌথ প্রচেষ্টায় রেললাইন
থেকে বগিগুলো সরিয়ে নেয়ায় ১০ ঘন্টা পর দুপুর দুইটার দিকে এই রুটে ট্রেন
চলাচল শুরু হয়।
দুর্ঘটনার কারণে বিভিন্ন ষ্টেশনে আটকে পরা যাত্রীদের
চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। প্রচন্ড গরমে নারী ও শিশু যাত্রীরা বেশি
ভোগান্তিতে পড়েন । গতকাল দুপুরে কুমিল্লার শশীদল ষ্টেশনে আটকে পরা ঢাকা
থেকে চট্টগ্রামগামী তূর্ণা নিশিতা ট্রেনের যাত্রী রানু সাহা জানান, ঘন্টার
পর ঘন্টা একই জায়গায় আটকে আছি। কেউ বলেনি কখন লাইন ঠিক হবে, আবার কখন
যাত্রা শুরু হবে।
চট্টগ্রামের যাত্রী আবির জানান, আমার স্ত্রী সন্তান
সম্ভবা। তিনি এক জায়গায় বসে থেকে অসুস্থ হয়ে পরেছেন। রাত ৪ হঠাৎ ট্রেন থেমে
গেলে আমাদের শুধু জানানো হয় সামনে দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনা ঘটেছে ভোররাত
চারটায়, এর প্রায় আড়াই তিন ঘন্টাপর উদ্ধারকারী ট্রেন গিয়েছে। দেরী করে
উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছানোয় রেল চলাচল শুরু হতে দেরী হয়।
একই
ট্রেনের যাত্রী ইউসুফ আবেদীন জানান, রেল কর্তৃপক্ষ যদি জানাতো যে দীর্ঘ ১০
ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে, তাহলে আমরা বিকল্প পথে রওনা হতে পারতাম। কিন্তু না
জানায় অনেকেই দ্বিধাদ্বন্ধে পড়ে এক জায়গায়ই বসে আছে। আর এসি বগিগুলোর
যাত্রীরা কিছুটা স্বস্তিতে থাকলে সাধারণ বগির যাত্রীরা গরমে কষ্ট পেয়েছেন।
এর মধ্যে কোন এক সময় ট্রেনের পাখাগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
দুপুরে শশীদল
ষ্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে বেশির ভাগ যাত্রীই ট্রেন থেকে নেমে প্ল্যাটফর্মে
বসে আছেন। কেউ কেউ স্টেশনের পাশে ঘাসের উপর বিশ্রাম নিচ্ছেন।
রাজাপুরে
উদ্ধার কাজ তদারকি করতে আসা বাংলাদেশ রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয়
ব্যবস্থাপক আবুল কালাম চৌধুরী জানান, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বিভাগীয়
পরিবহন কর্মকর্তাকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা
হয়েছে।