সোমবার
রাতে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে। সেই বৃষ্টির প্রভাব সকালেও ছিল।
আকাশের গোমড়া মুখ দেখে বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমে অস্বস্তি বাড়াই স্বাভাবিক।
বৃষ্টির প্রভাবে শ্রীলঙ্কা দল উইকেট থেকে না আবার বাড়তি সুবিধা আদায় করে
নেয়। তবে সূর্যের তেজ বাড়ার সঙ্গে দুচিন্তা উড়ে যায়। দেখা মেলে সোনালি এক
দিনের। যেখানে আক্ষেপ কিছুটা মিশে থাকলেও প্রাপ্তির আনন্দই বেশি। তামিম
ইকবালের সেঞ্চুরি কিংবা মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস ও মাহমুদুল হাসান জয়ের
হাফসেঞ্চুরিতে সাগরিকায় উঠেছে আনন্দের ঢেউ। তাছাড়া অপেক্ষার খুশিও তো বাড়তি
রসদ জোগাচ্ছে!
২৭ মাস ধরে ঘরের মাঠে জয়হীন বাংলাদেশ। তবে চট্টগ্রাম
টেস্টে যা অবস্থা তাতে এই ম্যাচে ফল পাওয়া বেশ কঠিন। জয় না হলেও মুমিনুল
হকদের মনের মতো কন্ডিশনে অন্তত ড্র প্রত্যাশা করাই যায়। তৃতীয় দিন শেষে
ম্যাচ সেদিকেই এগোচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার স্কোরবোর্ডে ৩ উইকেট হারিয়ে ৩১৮ রান
করে দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে করেছে ৩৯৭ রান।
৭৯
রানে পিছিয়ে থেকে বুধবার চতুর্থ দিন শুরু করবে স্বাগতিকরা। অপরাজিত আছেন
মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। অবিচ্ছিন্ন ৯৮ রানের জুটি নিয়ে চতুর্থ দিন শুরু
করবেন তারা। তার আগে ওপেনিং জুটিতে দারুণ শুরু পায় বাংলাদেশ। গত ৫ বছরে
ওপেনিং জুটিতে শততম রান হয়নি। ৬১ ইনিংস পর জয়কে সঙ্গে নিয়ে তামিম গড়েন ১৬২
রানের জুটি। টেস্ট ইতিহাসে বাংলাদেশের এটি অষ্টম শততম জুটি। এই জুটির ওপর
ভর করেই বড় সংগ্রহের ভিত পেয়েছে স্বাগতিকরা।
তামিম, জয়, মুশফিক ও লিটন
সেরাটা দিতে পারলেও পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন মুমিনুল ও নাজমুল হোসেন শান্ত।
এই দুই ব্যাটার দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছানোর আগেই ফিরেছেন সাজঘরে। তিন নম্বরে
নামা শান্ত ১ রান করে ‘কনকাশন সাব’ হিসেবে নামা কাসুন রাজিথার বলে নিরোশান
ডিকবেলাকে ক্যাচ দেন। অফফর্মে থাকা অধিনায়ক মুমিনুলও বেশিক্ষণ টিকতে
পারেননি। একই বোলারের বলে লাইন মিস করে বোল্ড। দক্ষিণ আফ্রিকায় আগের চার
ইনিংসের মতো আজও দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি মুমিনুল। শান্ত-মুমিনুলের
হতাশাজনক ব্যাটিং ছাড়া বাকি সময়ের পুরোটাই বাংলাদেশের।
গত কয়েক বছর ধরে
টেস্টে তামিম-মুশফিকের লড়াই চলছে। লড়াইটা ব্যক্তিগত রানের। একবার তামিম
এগিয়ে যান তো আরেকবার মুশফিক। চট্টগ্রাম টেস্ট শুরুর আগে দুই অভিজ্ঞ
ক্রিকেটার ৫ হাজার রানের ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তামিম ১৫২ রান দূরে
থেকে ইনিংস শুরু করেন। ৩৫ রান নিয়ে মঙ্গলবার ব্যাটিংয়ে নেমে ক্যারিয়ারের
দশম সেঞ্চুরি তুলে নেন এই ওপেনার। ১৩৩ রান নিয়ে রিটার্ড হার্ট হয়েছেন তিনি।
আর ১৯ রান করতে পারলেই অভিজাত এই ক্লাবের সদস্য হতে পারবেন তামিম।
আজই
হয়তো মাইলফলকে পৌঁছে যেতেন। কিন্তু দ্বিতীয় সেশনে ৫৮তম ওভারে রমেশ
মেন্ডিসের একটি বল কাট করতে গিয়ে তার কব্জি ঘুরে যায়। নন-স্ট্রাইক প্রান্তে
আসতে আসতে পড়ে যাচ্ছিলেন। প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা দলের খেলোয়াড়রা এসে সহায়তা
করেন তাকে। হাত টেনে দিয়ে তাৎক্ষণিক তামিমকে সারিয়ে তোলার কাজ করেন। পরে
ফিজিও বায়েজিদ আহমেদ নেমে তামিমকে ফিট করার চেষ্টা চালান। মূলত চট্টগ্রামের
প্রচণ্ড গরমে দেড়’শ ওভারের বেশি ফিল্ডিং করার পর ৫ ঘণ্টা ৯০ মিনিট ব্যাটিং
করার প্রভাব পড়েছে তার শরীরে। ফলে চা বিরতিতে গিয়ে আর মাঠে ফেরেননি
বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। বুধবার অবশ্য সুযোগ আছে বাকি ১৯ রান করে ৫
হাজার ক্লাবের সদস্য হয়ে যাওয়ার।
তবে তার আগেই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে
এই মাইলফলকে পৌঁছে যেতে পারেন মুশফিক। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার ৫৩ রান নিয়ে
অপরাজিত আছেন। বুধবার সকালে ১৫ রান করলেই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই কীর্তি
গড়বেন। তৃতীয় দিন শেষে মুশফিকের টেস্ট রান ৪ হাজার ৯৮৫।
ব্যাটিংয়ে থাকা
মুশফিক কিংবা রিটার্ড হার্ট হয়ে ডেসিং রুমে থাকা তামিম, যেই আগে ৫ হাজার
রানের ক্লাবে যোগ দিন না কেন, লাভটা তো বাংলাদেশেরই। তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা
তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের ব্যাটাররা যেভাবে দিন পার করেছেন, খুব বেশি এমন দিন
আসেনি। তবে সুন্দর এই দিনে আক্ষেপ হয়ে থাকবে মুমিনুল ও শান্তর হতাশাজনক
ব্যাটিং। যদিও সব ছাপিয়ে সাগরিকায় আনন্দের ঢেউ তুলেছে তামিম-মুশফিকদের
ব্যাটিং। যাদের আলোতে উজ্জ্বল বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট!