ভারতের
আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের প্রায় পুরোটাই ভয়াবহ বন্যাকবলিত। বন্যায় আসামে ১২
জন এবং মেঘালয়ে ১৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। সেসব এলাকায় দুই দশকের মধ্যে
সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সেই পানি নামতে শুরু করায় এবং একই
সঙ্গে ভারি বৃষ্টি হওয়ায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি
হয়েছে।
বন্যাদুর্গতদের উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা
হয়েছে। রানওয়েতে পানি ওঠায় সিলেটের এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে
সব ধরনের বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে
পড়েছে। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শিগগিরই ঢাকার সঙ্গে
সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। একই সময়ে নেত্রকোনা, শেরপুর, কুড়িগ্রামসহ
পুরো উত্তরাঞ্চলেই বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। বানভাসি বহু মানুষ
স্কুল-কলেজ কিংবা উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। ত্রাণ তৎপরতা প্রয়োজনের তুলনায়
অতি সামান্য।
এ বছর আরেক দফা বড় বন্যার শিকার হয়েছিল সিলেট ও
সুনামগঞ্জ। এপ্রিলের শুরু থেকেই হাওরাঞ্চলে দেখা দিয়েছিল আগাম বন্যা। এতে
বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সবজিসহ অন্যান্য ফসলেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে। সেই
বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আরেক দফা বন্যায় সিলেট ও
সুনামগঞ্জের মানুষ এখন চোখে অন্ধকার দেখছে। দুই জেলার সব কটি উপজেলাই
বন্যাকবলিত। প্রায় ৩০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট চরমে উঠেছে। গতকাল প্রকাশিত খবরে দেখা যায়,
হবিগঞ্জ শহরেরও বেশির ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। শহরের ভেতরেও নৌকা
চলছে। এদিকে আবহাওয়ার তথ্যে বলা হয়েছে, দেশের ভেতরে এবং উজানে ভারি
বৃষ্টিপাত আরো কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। এর অর্থ, বন্যা পরিস্থিতির আরো
অবনতি হতে পারে। এই পানি নামার সময় ক্রমে মধ্যাঞ্চলেও বন্যা পরিস্থিতির
অবনতি হতে পারে। এ ছাড়া শেরপুর, কুড়িগ্রাম, রংপুরের মিঠাপুকুর, বগুড়ার
ধুনট, নীলফামারীর ডিমলা, লালমনিরহাট, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ও সিরাজগঞ্জের
কাজিপুরে বন্যা দেখা দিয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে
আবহাওয়া ক্রমেই চরম ভাবাপন্ন হয়ে উঠছে। এতে একসময় বৃষ্টিপাত প্রবল হবে।
একসময় খরায় ফসলহানি হবে। বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের সংখ্যা ও তীব্রতা দুটিই
বাড়বে। হচ্ছেও তাই। উজানের পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে প্রবল বৃষ্টিপাত হলে সেই
পানি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়বে-এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। একে
ঠেকানো যাবে না। সমস্যা হচ্ছে, আগে নদীগুলোর গভীরতা ছিল। সেই পানির বড় অংশ
নদী দিয়েই যেতে পারত। এখন নদীগুলো ভরাট হয়ে গেছে। নদী সেই পানি ধারণ করতে
পারছে না। ফলে নদীর দুই কূলে থাকা জনপদ, ফসলের মাঠ প্লাবিত হচ্ছে। এতে
হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। নদী অববাহিকার মানুষের জীবন-মানের
অবনতি হচ্ছে।
ভাটির দেশ হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই আমাদের
বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রথমেই খননের
মাধ্যমে নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি নদীর তীর রক্ষার
উদ্যোগ নিতে হবে। এর আগে বন্যা উপদ্রুত এলাকার দুর্গত মানুষকে রক্ষার
উদ্যোগ নিতে হবে।