কয়েক দিন আগেই
বোরো ধান উঠেছে। সাধারণত এ সময়টায় চালের দাম কম থাকে। কিন্তু এবার বোরোর
ভরা মৌসুমেও চালের দাম ক্রমেই বাড়ছে। গত দুই মাসে সরু চালের দাম কেজিপ্রতি
১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
বেড়েছে মাঝারি ও মোটা চালের দামও।
অন্যদিকে পেঁয়াজের বাজারও হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠতে থাকে। এ অবস্থায় সরকার আবার
চাল ও পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়। চাল আমদানিতে শুল্ক ৬২.৫ শতাংশ থেকে
কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে। এর ফলও ফলতে শুরু করেছে। সোমবার পেঁয়াজ আমদানি শুরু
হয়েছে। মঙ্গলবার দেশের প্রধান পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা ফরিদপুরের পাইকারি
বাজারে পেঁয়াজ এক হাজার ৭০০ টাকা থেকে কমে এক হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি
হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে আমদানি করা চালও দেশে পৌঁছাবে। তখন চালের দামও
কমবে বলে আশা করছেন চাল ব্যবসায়ীরা।
উৎপাদন মৌসুমে কৃষক যাতে ন্যায্য
মূল্য পান সে জন্য সরকার পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছিল। চালের ওপর অতিরিক্ত
শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। আর সেই সুযোগের অপব্যবহার করেছে এক শ্রেণির
ব্যবসায়ী। তাঁরা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাজারে ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে
গেছেন। পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। খুচরায় মোটা চাল স্বর্ণার দাম
ওঠে কেজিপ্রতি ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা, পাইজাম ৫২ টাকা ও আটাশ চাল ৫৪-৫৫ টাকা। আর
চিকন চালের মধ্যে মিনিকেট ৬৬ থেকে ৭২ এবং নাজিরশাইল ৬৮ থেকে ৮৮ টাকায়
বিক্রি হতে দেখা যায়। এরই মধ্যে দুই দফায় সাড়ে ছয় লাখ টন চাল আমদানির
অনুমতি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। পর্যায়ক্রমে আরো অনুমতি দেওয়া হবে। আগামী
১১ আগস্টের মধ্যে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাল আমদানি করতে বলা হয়েছে।
শর্ত দেওয়া হয়েছে, আমদানি করা চাল গুদামজাত করার তথ্য জেলা প্রশাসককে
জানাতে হবে। আমদানি করা চাল স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠানের নামে পুনরায়
প্যাকেটজাত করা যাবে না, আমদানির বস্তায় রেখেই বিক্রি করতে হবে। নির্ধারিত
সময়ের মধ্যে এলসি খুলতে না পারলে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ আদেশ
বাতিল হয়ে যাবে বলেও শর্তে উল্লেখ আছে। আশা করা যায়, শিগগিরই চালের বাজারেও
সরকারের এই উদ্যোগের সুফল পাওয়া যাবে।
সাধারণ মানুষ বা ভোক্তাদের
স্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। আমাদের বাজারে যেহেতু ব্যবসায়ের অনেক
নিয়ম-নীতিই অচল, নৈতিকতার বালাই কম, নানা ধরনের সিন্ডিকেটের কারসাজি রয়েছে,
কোনো কারণ ছাড়াই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়, তাই বাজারে সরকারের আরো বেশি
হস্তক্ষেপ থাকা প্রয়োজন। অবৈধ মজুদ, সিন্ডিকেট ও অন্যায্য মূল্যে পণ্য
বিক্রির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ
বা টিসিবিকে আরো সক্রিয় করতে হবে। স্বাধীনতার পর চালু হওয়া কসকরের মতো
ব্যবস্থা আবারও চালু করা যায় কি না ভেবে দেখতে হবে। রেশনিংব্যবস্থা
প্রবর্তন বা কার্ডের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির উদ্যোগ আরো
বাড়ানো যেতে পারে। আমরা আশা করি, শুধু কিছু উপলক্ষ নয়, সারা বছরই বাজার
নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ থাকবে।