Published : Tuesday, 13 September, 2022 at 12:00 AM, Update: 13.09.2022 12:50:44 AM
তানভীর দিপু:
বাল্য
বিয়ের কারণে এসএসসি পরীক্ষার আগেই ঝরে পড়ছে বেশির ভাগ মেয়ে শিক্ষার্থী।
নবম শ্রেণিতে পরীক্ষার জন্য রেজিষ্ট্রেশন করলেও বিয়ে হয়ে যাবার কারণে
পরীক্ষায় বসা হচ্ছে না এসব শিক্ষার্থীর। বেশির ভাগের কেউই ফিরছেন না শিক্ষা
জীবনে। এবছর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে মেয়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া হার ১৯ দশমিক
৭ শতাংশ; যা আশংকাজনক। বোর্ডের অধীনে কুমিল্লাসহ ৬ জেলায় এই বাল্যবিবাহের
হার রোধে স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
মাধ্যমিক
ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কুমিল্লা অঞ্চলের উপ-পরিচালক ও নবাব
ফয়জুন্নেছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোখসানা ফেরদৌসী মজুমদার
জানান, ঝরে পড়া এসব মেয়েদের শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে যাওয়া তার ভবিষ্যত
প্রজন্মের উপর প্রভাব ফেলবে। করোনা মহামারির কারণে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে
বাল্যবিয়ের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এই প্রবণতা বেড়েছে।
কুমিল্লা মাধ্যমিক ও
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ আবদুস ছালাম বলেন,
বাল্যবিয়ে ঠেকাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা
এখানে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ
কামরুল হাসান বলেন, আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের আহ্বান করবো- তারা
যেন আমাদের বাল্যবিয়ের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন। তাহলে স্থানীয় প্রশাসন
বাল্য বিবাহ সহজে রোধ করতে পারবে।
কুমিল্লা বোর্ডের ২০২২ সালে এসএসসি
পরীক্ষার রেজিষ্ট্রেশন এবং ফরম পূরণের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কুমিল্লা
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে. কুমিল্লা ফেণী, নোয়াখালী,
চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং লক্ষীপুর জেলায় এসএসসির জন্য মোট
রেজিষ্ট্রেশনকারীর সংখ্যা ২ লাখ ২০ হাজার ২৮৮ জন। রজিষ্ট্রেশন করা ১ লাখ ৩০
হাজার ৭০৭ জন ছাত্রীর মধ্যে ফরম পূরণ করেছেন ১ লাখ ৪ হাজার ৯৪৭ জন; এর
মধ্যে ঝরে পড়েছে ২৫ হাজার ৭৬০ জন। জানা গেছে, মেয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার
সংখ্যা প্রত্যন্ত এলাকায় খুবই বেশি। কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার লক্ষণপুর
উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে এসএসসি পরীক্ষার জন্য রজিষ্ট্রেশন করেন ২৪২ জন ছেলে ও
মেয়ে শিক্ষার্থী। যার মধ্যে পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেন নি ৭১ জন
শিক্ষার্থী। যার অধিকাংশই মেয়ে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম শেখ কামাল
জানান, যে ৭১ জন পরীক্ষা দিচ্ছে না তার মধ্যে ৫০ জনই মেয়ে। তাদের
অধিকাংশেরই বাল্য বিবাহরে কারণে পরীক্ষা দেয়া হচ্ছে। আর ছেলে পরীক্ষা
ছেড়েছে অর্থনৈতিক কারণে, অনেকেই বিদেশে চলে যায়, আবার কেউ কেউ ছোটখাট আয়
উপার্জনে জড়িয়ে পড়ে।
অপর দিকে লাকসাম পাইলট গার্লস স্কুলে খোঁজ নিয়ে
জানা গেছে, এবছর এসএসসির জন্য রেজিষ্ট্রেশনকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫১ জন,
ফরম পূরণ করেছেন ২৩৯ জন শিক্ষার্থী। কিন্তু যে ১২ জন পরীক্ষা দিচ্ছেন না
তাদের ১০জন পরীক্ষায় না বসার কারণ- বিয়ে।
কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ
মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ আবদুস ছালাম বলেন, আমরা
আমাদের পক্ষ থেকে সব সময় অভিভাবকদের সচেতন করার চেষ্টা করছি। করোনার কারণে
বাল্যবিবাহের প্রবণতা বাড়লে, আশা করছি তা কমে আসবে। আর এক্ষেত্রে স্থানীয়
প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে।