নিজস্ব প্রতিবেদক, কুবি ||
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশেপাশের এলাকায় ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারনে ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত সংশ্লিষ্টরা। একই সময় আবাসিক হল ও আশেপাশের ছাত্রাবাস ও মেসগুলোতেও বিদ্যুৎ না থাকায় খাবার ও পানির সংকটসহ পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এমনকি মোমবাতি জ্বালিয়ে পরীক্ষা নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
গত বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ভোর পাঁচটা থেকে প্রায় রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ অনিয়মিত ছিল। মাঝে বেলা দেড়টার দিকে স্বল্প সময়ের জন্য সরবরাহ চালু হলেও তা বেশিক্ষণ ছিল না। সাড়ে আটটায় পুনরায় সরবরাহ চালু হবার পরও রাত ১১টা নাগাদ ঘন ঘন লোডশেডিং দেখা যায়।
এভাবে গত কয়েকদিনই বেশ বড় একটা সময় বিদ্যুৎ না থাকায় প্রশাসনিক কাজে বিঘ্নতার পাশাপাশি একাডেমিক কাজে বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনারেটরের ব্যবস্থা বা আলাদা বিদ্যুতের সাবস্টেশন স্থাপনের কথাও জানায়।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী গুলশান পারভীন বলেন, বিদ্যুৎ না থাকার কারণে একটা ক্লাস করাই সম্ভব হয়নি। পুরো একটা কর্মদিবস নানা ঝামেলায় গিয়েছে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ না থাকার কারণে। অনেক পরীক্ষার্থীও ছিল যাদের পরীক্ষা সময়কালীন সমস্যা পোহাতে হয়েছে। একদিন বিদ্যুৎ সমস্যা থাকলেই যদি শিক্ষার ব্যাঘাত ঘটে তাহলে খুবই দুঃখজনক। প্রশাসনের উচিত এদিকে জোরদার নজর দেয়া।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া সুলতানা বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় আজকে আমাদের পরীক্ষা চলাকালে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাছাড়া ঝড় বৃষ্টি যখন হয় তখন ব্যাক আপ প্লান রাখা উচিত।
একইদিন (বুধবার) লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতোকোত্তরের একটি সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেয়া হয় মোমবাতি জ্বালিয়ে। এই বিভাগের শিক্ষার্থী সুজন আহমেদ বলেন, আমাদের সেমিস্টার ফাইনাল চলছিল। বিদ্যুৎ ছিল না, আবার আকাশও মেঘাচ্ছন্ন থাকায় কিছুটা অন্ধকার থাকায় মোমবাতি জ্বালিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি।
লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রশিদুল ইসলাম শেখ বলেন, কমপক্ষে যদি একটা জেনারেটর কিংবা আইপিএসের ব্যবস্থা করা যায় তবে অন্তত শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পাড়বে। বিদ্যুৎ না থাকায় মোমবাতি জ্বালিয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিতে হয়েছে। প্রশাসন দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবে বলে আশা করছি।
বিদ্যুতের এমন সমস্যার কারন কি জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এস এম শহিদুল হাসান জানান, পিডিবির যে লাইনে সমস্যা হয়েছে বলেই এমন হয়েছে। এখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু করণীয় নেই।
তিনি আরো বলেন, পিডিবির কোটবাড়ির সাবস্টেশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যুত আসে। এর মাঝে বার্ড, পলিটেকনিক কলেজ, ক্যাডেট কলেজ ও জাদুঘরসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো পার হয়ে আমাদের এখানে আসে। মাঝে লাইনে কোথাও সমস্যা হলে বাকি পুরোটাতেই বিদ্যুত সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা সাবস্টেশন স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, সাবস্টেশন স্থাপনের বিষয়টি পিডিবির বিষয়। আমাদের ইন্টারনাল সাবস্টেশন আছে। কিন্তু পিডিবির প্রধান লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো সমস্যা হলে সেটাতে আমাদের কিছু করার থাকে না। এধরনের জরুরী মূহুর্তে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে সেই বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবো।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ আবদুল মঈন বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীর সাথে কথা বলেছি দ্রুত সমাধানের জন্য। এরপর পিডিবির সাথে কথা বলে তাদেরকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছি। কিন্তু তাদের কোনো এক জায়গায় নাকি তার ছিঁড়ে যাওয়ায় তারা এর সমাধান দিতে দেড়ি হচ্ছে। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছে দ্রুত এর সমাধান দিবে।