
ঘূর্ণিঝড়
সিত্রাংয়ের আঘাতে উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যার
পর এটি স্থলভাগে আছড়ে পড়ে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের
অগ্রভাগ স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০
কিলোমিটার। পটুয়াখালী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিস্তীর্ণ উপকূলে ঝড়ের
পাশাপাশি পাঁচ থেকে সাত ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে।
প্রায় ২৫ লাখ
মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তার পরও ঝড়ের আঘাতে গাছ চাপা
পড়ে, নৌকা ডুবে, দেয়াল ধসে মোট ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা
গেছে। কক্সবাজারের টেকনাফে ২০টি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে গেছে। জেলেদের
ভাগ্যে কী ঘটেছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পুরোটাই
জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। ঝড়ে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে
অন্যান্য ফসলেরও। উপকূলীয় এলাকার ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। অনেক স্থানে
বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
বাংলাদেশকে বলা হয় প্রাকৃতিক
দুর্যোগের দেশ। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ
মোকাবেলা করেই এখানকার মানুষ টিকে আছে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, জলবায়ু
পরিবর্তনের কারণে সামনের দিনগুলোতে এসব দুর্যোগের সংখ্যা যেমন বাড়বে,
তেমনি বাড়বে তীব্রতা। তার প্রমাণও আমরা পাচ্ছি। ১৯৯১, ১৯৯৭ ও ২০০৭ সালে বড়
ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল। তার পর থেকে দুই-এক বছর পর পর বড় ঘূর্ণিঝড় আঘাত
হানছে। আর গত চার বছরে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হেনেছে কিংবা বড় ধরনের
প্রভাব ফেলেছে সাতটি বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড়। এর মধ্যে আছে ঘূর্ণিঝড় ফণী,
বুলবুল, আম্ফান, ইয়াস, গুলাব, জোয়াদ ও সর্বশেষ সিত্রাং। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা
অনুযায়ী নিকট ভবিষ্যতে ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসের সংখ্যা ও তীব্রতা বৃদ্ধি
থেকে উপকূলীয় জনজীবন রক্ষায় আমাদের আরো উদ্যোগী হতে হবে। ১৯৯২ সালে জাতীয়
বিশেষজ্ঞ কমিটি সুপারিশ করেছিল উপকূল রক্ষা বাঁধগুলো আরো উঁচু ও মজবুত করে
গড়ে তোলার জন্য। এ ছাড়া উঁচু ও বড় ঢিবি তৈরি করে গবাদি পশু রক্ষার ব্যবস্থা
করা এবং ব্যাপক সংখ্যায় আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা। দেখা গেছে, মানুষ গবাদি
পশু ও সহায়-সম্পদ ফেলে দূরের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চায় না। দুঃখজনক হলেও সত্য
যে ৩০ বছরেও এ ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি কম। বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে
অত্যন্ত ধীরগতিতে। বাঁধ নির্মাণের মান নিয়েও আছে প্রশ্ন। নির্মাণকাজ শেষ না
হতেই অনেক জায়গায় বাঁধ ধসে গেছে কিংবা ফাটল দেখা দিয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে
আশ্রয়কেন্দ্রও আমরা নির্মাণ করতে পারিনি।
ডেল্টা পরিকল্পনাসহ উপকূলীয়
জনজীবন রক্ষায় যেসব পরিকল্পনা ও প্রকল্প নেওয়া হয়েছে তার সবই সময়োপযোগী ও
গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাস্তবায়নের যে ধীর গতি রয়েছে তা দূর করতে হবে।
পাশাপাশি কাজের মান নিয়ে কোনো ধরনের আপস করা চলবে না। আমরা মনে করি,
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ক্ষয়ক্ষতির পর্যালোচনা দ্রুততর করতে হবে এবং
ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে। ছিন্ন হওয়া বিদ্যুৎ সংযোগ দ্রুততম সময়ে
প্রতিস্থাপন করতে হবে। পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা আরো
বাড়াতে হবে।