জিলিানী আলম ||
সময়
এবং দূরত্ব কবি লেখক শিল্পীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কবি পিয়াস মজিদ
তাঁর কর্ম জীবনের কারণে ঢাকায় অবস্থান করেন। প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন
স্থানে এবং বিদেশে অবিরাম সফর করছেন। সময় এবং দূরত্বের কথা বলছিলাম, কবি
এক সময় কুমিল্লায় ছিলেন। ত্রিশ বছর ছিলেন। এই কুমিল্লা তিনি ছেড়ে গেছেন
বলেই ছেড়ে যেতে পারেন নি। অন্যরুপে অন্য অনুভবে বারবার তিনি কুমিল্লায়
অবস্থান করেন। কুমিল্লায় রয়েছে তাঁর জীবন অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতাই এক সময়
অভিজ্ঞান হয়। পিয়াস মজিদের হয়েছে কবিতা। কাব্যজলে তিনি সাঁতার পারঙ্গম।
তাই কুমিল্লাবাসী তাদের পরিচিত শহরকে একজন কবির অভিজ্ঞানের ভেতরে নতুন করে
বুঝে নেবার সুযোগ পান। আমি (জিলানী আলম) শুধুমাত্র এর বাহির রাঙিয়েছি।
অন্তর রাঙিয়েছেন কবি পিয়াস মজিদ। আমি এর সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আনন্দিত।
পিয়াস মজিদের পরিচয় ম-লে অনেক শিল্পী ছিলেন,কোন একজনকে বললেই রাঙিয়ে দিতেন।
কারণ কবি অনেকগুলো কাব্যগ্রন্থ এবং গদ্যগ্রন্থের স্রষ্ঠা। ইতোমধ্যে তাঁর
পরিচয়ের ব্যপ্তি বেড়েছে। কিন্তু কবি পিয়াস মজিদ কুমিল্লা শহর ভুলতে পারছেন
না বলেই বোধ হয় আমাকেও তুলি ধরতে হয়েছে।
এর ছবি তোলার কাজটি দক্ষ হাতে করেছেন ডাক্তার কায়সার হেলাল।
গোমতী
নদী, দাদার দোকান, ভিক্টোরিয়া কলেজ নানুয়া দিঘি, রাণীর দিঘি, জিলা স্কুল,
ডেলনি হাউস, রাজগঞ্জ বাজার, ঈশ্বর পাঠশালা Ñ এমন পনেরোটি কবিতা রয়েছে
পনেরোটি চার রঙা চিত্রসহ। হয়তো অদূর ভাবিকালে, কালের লোকদের অবাক হতে
হবে, যখন নুতুন কোন প্রয়োজনে এসব বদলে যাবে কিন্তু এ কাব্যগ্রন্থ থেকে
যাবে।
আমরা পিয়াস মজিদের কিছু কাব্যোদ্ধৃতি দেখি: তিনি তাঁর গোমতী কবিতায় বলেন,
‘শুধু এই জলজনমে
তোমাকে অতিক্রম করার মতো
ডাঙার জন্ম যেন না হয়।’
‘
জিলা স্কুল’ কবিতায় তিনি আমৃত্যু বালক বাউল থাকতে চান। ‘ ডেলনি হাউস’
কবিতায় তিনি ব্যক্তিগত বন্দিত্বের প্রশ্ন তুলেছেন মীরা মল্লিকা পল ডেলনির
নিকট। একই সঙ্গে জানতে চেয়েছেন,
‘আমাদের কয়েকশ বছরের বুকের ভেতর
কতটা গার্বেজ কয়টা পুর্ণিমা।’
‘রাজগঞ্জ
বাজার’ কবিতায় বিশ্ব বাজার , ছোট মাছ, লেবু পাতা ইত্যাদি এমন নরম সরল
সহজভাবে বলেছেন, বাজার নিয়ে এমন কবিতার পাঠ পূর্বে আমার শিকে ছিঁড়েনি। কবি
বলেন,
‘বাজার শাসিত দুনিয়ায়
আমার বাজারের ধারণা
ছোট মাছ লেবু আর ধনে পাতা
এই কিছু কেনাকাটা টুকটাক’
একটু
বাড়তি কথা বলতে হয়, সভ্যতা আজ বেপরোয়া Ñ বাজার আধিপত্যের সিনাসিনি। বাজার
যেন বলছে, সবার উপর বাজার সত্য তাহার উপর নেই। কিন্তু আমাদের প্রিয় কবি
পিয়াস মজিদ যেন বলেন, রাজগঞ্জ বাজারের ধনে পাতা লেবু ছোট মাছ, শুধু জিবে
লেগে থাকবে না। মগজেও লেগে থাকবে কাব্যাকারে।
বাজার আধিপত্য ধনে পাতা পর্যন্ত না পৌঁছলে হয়।
‘ঈশ্বর পাঠশালা মাঠ’ কবিতায় কেউ নিশ্চয় বলেছেন,
‘পিয়াস সবুজ ঘাসের মতো উঁচু হউ
আজদাহ দালানের মতো নীচু আর ধূসর দাস হয়ো না’
‘নানুয়া দিঘি’ কবিতায় কবি Ñ সাদিক ও জেবার বাসায় ‘গৃহী আর অতিথি শব্দের বিলুপ্তি ঘটিয়েছেন। তিনি তাঁদের আত্মার মানুষ।
২.
বইটির সঙ্গে নানাভাবে জড়িয়ে আছেন, নামলিপিতে হিমেল হক। চুলাস গ্রামে কবি বসে আছেন, ভেতরের ফ্যাপে, ছবিÑতাইফুল নিষাদ।
বিশেষভাবে
উল্লেখযোগ্য বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে, সময়ের তিন তুমুল আড্ডাবাজ জসিম উদ্দিন
অসীম, মামুন সিদ্দিকি এবং কাজী মোহাম্মদ আলমগীর, তিন বন্ধুকে। বইটির
প্রকাশক, সত্তর বছরের অভিজ্ঞতা ঋদ্ধ, স্টুডেন্ট ওয়েজ, প্রকাশক মোহাম্মদ
লিয়াকতউল্লাহ। বইটি সঙ্গে রইলে মনে হয় ছোটখাটো একটা কুমিল্লা শহর সঙ্গে
আছে। চার রঙা, অফসেট গ্লসি পেপারে ছাপনো, ছবি ও কবিতা হাত ধরাধরি করে চলা এ
বইটির মূল্য দুইশত টাকা। কুমিল্লায় সম্ভাব্য প্রপ্তিস্থানঃ নির্বাচিত।
আমি কবির সাফল্য ও বইটির প্রসার কামনা করছি।
লেখক: শিক্ষক, চারুকলা।