জাতীয়
পতাকা একটি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদার প্রতীক। দেশপ্রেমিক
প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য জাতীয় পতাকার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা।
প্রতিটি দেশে জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য কিছু বিধি-বিধান
থাকে, বাংলাদেশেও রয়েছে। সেসব বিধি-বিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা
জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শনেরই শামিল। সাম্প্রতিক সময়ে এ ক্ষেত্রে
এমন কিছু ব্যত্যয় ঘটেছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং তা করেছেন উচ্চপর্যায়ের
বেশ কিছু সরকারি কর্মকর্তা। তাঁরা যদি না জেনে তা করে থাকেন, সেটিও অন্যায়।
কারণ ডিসি-এসপিদের মতো উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পতাকা প্রদর্শন
সংক্রান্ত বিধিমালা ভালোভাবে জানা থাকা প্রয়োজন। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর
থেকে জানা যায়, এ জন্য ডিসি-এসপিদের সতর্ক করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে
একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। জানা গেছে, এর পরও কোনো কর্মকর্তা বিধিমালা
লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটালে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৯৭১ সালে
দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন
হয়েছে। আমরা নিজেদের পতাকা পেয়েছি। এই পতাকার প্রতি দেশের ১৬ কোটি মানুষের
আবেগ জড়িত। এই পতাকার অসম্মান কোনোভাবেই কাম্য নয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে
গত ৩১ ডিসেম্বর জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের
জাতীয় পতাকা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদার প্রতীক। এর
মর্যাদা সমুন্নত রাখা প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। বাংলাদেশের
পতাকা বিধিমালা, ১৯৭২-এ (২০১০ সালের মে পর্যন্ত সংশোধিত) জাতীয় পতাকা
সংক্রান্ত বিধানাবলি সন্নিবেশিত রয়েছে, যার প্রতিপালন বাধ্যতামূলক। পতাকা
বিধিমালা, ১৯৭২-এ উল্লিখিত দিবসসমূহে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলনের বিষয়ে
সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে।’ বাংলাদেশ পতাকা বিধিমালা, ১৯৭২-এর ৭(২৫) ধারা
অনুযায়ী, “যে ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পতাকা’ উত্তোলন করা হয়, সেই
ক্ষেত্রে একই সঙ্গে জাতীয় সংগীত গাইতে হইবে। যখন জাতীয় সংগীত বাজানো হয় এবং
‘জাতীয় পতাকা’ প্রদর্শিত হয়, তখন উপস্থিত সকলে পতাকার দিকে মুখ করিয়া
দাঁড়াইবেন। ইউনিফর্মধারীরা স্যালুটরত থাকিবেন। ‘পতাকা’ প্রদর্শন না করা
হইলে, উপস্থিত সকলে বাদ্যযন্ত্রের দিকে মুখ করিয়া দাঁড়াইবেন,
ইউনিফর্মধারীরা জাতীয় সংগীতের শুরু হইতে শেষ পর্যন্ত স্যালুটরত অবস্থায়
থাকিবেন।” বিধি অনুযায়ী, জাতীয় দিবসে জেলাপর্যায়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা
উত্তোলনের সময় বাদ্যযন্ত্রে জাতীয় সংগীত বাজার সঙ্গে ইউনিফর্মধারীদের
স্যালুটরত অবস্থায় পতাকার দিকে তাকিয়ে থেকে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। আর
ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) পতাকা উত্তোলন করবেন। কিন্তু সম্প্রতি জাতীয় দিবসে
অনেক জেলায় ডিসিদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এসপিরাও একসঙ্গে পতাকা উত্তোলন করছেন।
বিধি অনুযায়ী ইউনিফর্মধারী পুলিশ কর্মকর্তা তা করতে পারেন না। আমরা আশা
করি, ভবিষ্যতে আর কোথাও পতাকাসংক্রান্ত বিধিমালা অনুসরণের ব্যাপারে
সংশ্লিষ্ট সবাই আরো যতœবান হবেন।