শুল্ক কমানোর প্রভাব চালের বাজারে
Published : Saturday, 9 January, 2021 at 12:00 AM
চালের আমদানি শুল্ক কমানোর খবরে চালের বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকা চালের দাম শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) আর বাড়েনি। বরং সামান্য হলেও কমেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুক্রবার খুচরা ও পাইকারি দুই বাজারেই চিকন ও মাঝারি চালের কেজিতে কমেছে ২ টাকা করে।
কাওরান বাজারের চাল ব্যবসায়ী কবির উদ্দিন বলেন, ‘অচিরেই আমদানিকৃত চাল বাজারে চলে আসবে এমন খবর আমরা পাচ্ছি। এর একটা প্রভাব পড়েছে বাজারে। গত সপ্তাহের চেয়ে ও মাঝারি চালের কেজিতে ২ টাকা করে কমেছে। প্রতিকেজি সরু চাল ৫৮-৬৪ টাকা দরে বিক্রি করছেন। মাঝারি মানের চাল ৫০-৫৮ টাকা কেজি এবং মোটা চাল বিক্রি করছেন ৪৬-৫০ টাকা কেজি। অর্থাৎ চিকন ও মাঝারি চালের দাম কমলেও মোটা চালের দাম এখনও নাগালের বাইরে রয়েছে।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি’র হিসাবে, গত ৭ জানুয়ারি থেকে সরু ও মাঝারি চালের দাম কমেছে ৪ শতাংশেরও বেশি। যদিও দু’দিন আগেও খুচরা বাজারে চিকন ও মাঝারে চালের কেজি প্রায় ৭০ টাকায় পৌঁছায়।
প্রসঙ্গত, এর আগে বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) সরকার ঘাটতি মেটাতে চালের আমদানি শুল্ক কমিয়েছে।
বাদামতলী ও বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘চালের বাজার এখন শান্ত। তিনি উল্লেখ করেন, চালের বাজারে যখন সরবরাহ বাড়ে, তখন আপনা আপনিই দাম কমে আসে। চালের আমদানি শুল্ক কমানোর যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাতে বাজারে অচিরেই চালের সরবরাহ বেড়ে যাবে। আর চালের সরবরাহ বাড়লে দাম আরও কমে আসবে।
চালের দাম কমতে শুরু করায় ক্রেতাদের মধ্যেও স্বস্তি আসতে শুরু করেছে। এ প্রসঙ্গে রাজধানীর মানিকনগর এলাকার বাসিন্দা আজিজুর রহমান বলেন, ‘৭০ টাকা কেজি চাল খাওয়া অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। যেভাবে দাম বাড়ছিল তাতে চালের দাম নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন ছিল। অতি সামান্য হলেও চালের দাম কমেছে। এখন ধীরে ধীরে চালের দাম নাগালের মধ্যে আসতে হবে। তবেই স্বস্তি।’
এদিকে দাম কমার তালিকায় শুধু চালই নয়, পেঁয়াজ, রসুন, আলু, আদা ও জিরাও রয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ভোজ্যতেল ও চিনি। চিনির কেজিতে ২ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি এখন ৬৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আর বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। প্রতি লিটার তেল কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ১১০-১১২ টাকা। খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দামও বেড়েছে লিটারে ২ টাকা করে।
তবে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ৫ টাকা। আর আমদানি পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ৩-৪ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি, এর সঙ্গে সম্প্রতি ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নতুন দেশি পেঁয়াজে এখন বাজার ভরপুর। আমদানি পেঁয়াজের সরবরাহ রয়েছে প্রচুর। এতে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩৫-৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যদিও এই পেঁয়াজ গত সপ্তাহে ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ আগের মতোই ২০-২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে আলু এখন ২৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। গত সপ্তাহেও এই আলু ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। রাজধানীর মতিঝিল এলাকার ব্যবসায়ী আওলাদ হোসেন বলেন, দুই সপ্তাহ আগে যে আলু ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে, এখন সেই আলু ২৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে বাজারে শীতের সবজির দামও কমেছে। বেশিরভাগ শীতকালীন সবজি ২০-৩০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মুলা, শালগমের সরবরাহ বেড়েছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। ২০ টাকা কেজি শালগম। মুলা ১০-১৫ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে। ৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে বড় লাউ। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি। বেগুনের কেজি ৩০ টাকা, করলার কেজি ৩০ টাকা। সব ধরনের শাক বিক্রি হচ্ছে ৫-১০ টাকা আঁটি। তবে শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে এখনও ৩০-৫০ টাকা।