দেশ-বিদেশের ২০০ অ্যাথলেট দৌড়াবেন বঙ্গবন্ধু ম্যারাথনে
Published : Saturday, 9 January, 2021 at 12:00 AM
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশসহ ১১টি দেশের ২০০ অ্যাথলেটের অংশগ্রহণে রোববার ভোরে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন’। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্যোগে এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সমন্বয়ে এ ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হবে। এতে সহযোগিতা করবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি।
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন’ উপলে শুক্রবার বিকালে ঢাকার খিলেেত রিজেন্সি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
সংবাদ সম্মেলনে পুরো আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরেন সেনা সদরের আইটি পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক। ফুল ম্যারাথন, হাফ ম্যারাথন এবং ডিজিটাল ম্যারাথন- এই তিন ক্যাটাগরিতে ম্যারাথন পরিচালনা করা হবে।
৪২.১৯৫ কিলোমিটারের ফুল ম্যারাথন এবং ২১.০৯৭ কিলোমিটারের হাফ ম্যারাথন- উভয়টিতেই ১০০ জন করে দেশি-বিদেশি দৌড়বিদ অংশগ্রহণ করবেন।
আর ডিজিটাল ম্যারাথন ৫ কিলোমিটার ও ১০ কিলোমিটারের হবে। ডিজিটাল ম্যারাথনের শ্লোগান হবে ‘মুজিববর্ষে ডিজিটাল বাংলাদেশে ডিজিটাল ম্যারাথন’। ডিজিটাল ম্যারাথনে দৌড়বিদরা ১০ জানুয়ারি থেকে ৭ মার্চের মধ্যে সুবিধাজনক স্থানে দৌড় সম্পন্ন করবেন। ফুল ম্যারাথন টেলিভিশন দর্শকদের জন্য সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই ম্যারাথনে ফ্রান্স, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, বাহরাইন, বেলারুশ, ইউক্রেন ও মরক্কো থেকে রানার এবং মালদ্বীপ, নেপাল, ভারত, লেসেফো, স্পেন থেকে সাফ রানারসহ মোট ৩৭ জন দৌড়বিদ অংশ নেবেন।
তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সাধারণ দৌড়বিদদের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও আনসারের সদস্যরা এতে অংশ নেবেন। এই ম্যারাথনে অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল ম্যারাথন অ্যান্ড ডিসটেন্স রেসেস (এইমস) এবং আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিকস অ্যাসোসিয়েশনের (এএএ) অনুমোদন পাওয়া গেছে।
আগামী ১০ জানুয়ারি ফুল ও হাফ- দুই ক্যাটাগরির ম্যারাথন রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে হাতিরঝিল গিয়ে শেষ হবে।
ম্যারাথনের রুট হবে বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়াম-কাকলী রেল ক্রসিং-কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ- গুলশান ২- গুলশান ১- পুলিশ প্লাজা- হাতিরঝিল। হাতিরঝিল পৌঁছে সম্পূর্ণ হাতিরঝিল পাঁচ বার চক্কর দিয়ে শেষ হবে ফুল ম্যারাথন, দুইবার চক্কর দিয়ে শেষ হবে হাফ ম্যারাথন।
ফুল ম্যারাথন শুরু হবে সকাল সাড়ে ৬টায়, আর হাফ ম্যারাথন শুরু হবে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে। সবাইকে করোনাভাইরাস পরীা করিয়ে নেগেটিভ সনদ দেখিয়ে ম্যারাথনে অংশ নিতে হবে।
ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারী বিদেশি অ্যাথলেটদের মধ্যে ফুল ম্যারাথনে ৩১ জন এবং হাফ ম্যারাথনে ছয়জন অংশ নেবেন।
ডিজিটাল ম্যারাথনে অংশ নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করেছেন আয়োজকরা। দেশি দৌড়বিদদের জন্য ১০০ ও ২০ টাকা এবং বিদেশি দৌড়বিদদের জন্য ৫ ডলার করে নিবন্ধন ফি রাখা হয়েছে।
গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করে অংশ নিতে পারবেন দৌড়বিদদরা। ইতোমধ্যে প্রায় দেড় লাখ আবেদন পাওয়া গেছে। ১০ লাখ আবেদনকারী ডিজিটাল ম্যারাথনে অংশ নেবেন বলে আয়োজকরা আশা করছেন।
ফুল ম্যারাথনে পুরুষ ও নারী বিদেশি এলিট বিভাগে চ্যাম্পিয়ন ১৫ হাজার মার্কিন ডলার করে, রানার আপ ১০ হাজার ডলার করে, তৃতীয় স্থান অধিকারকারী পাঁচ হাজার ডলার করে, চতুর্থ চার হাজার, পঞ্চম তিন হাজার, ষষ্ঠ দুই হাজার এবং সপ্তম স্থান অর্জনকারী এক হাজার ডলার করে পুরস্কার পাবেন।
সার্কভুক্ত দেশ ও বাংলাদেশের পুরুষ ও নারী দৌড়বিদদের মধ্যে চ্যাম্পিয়নরা পাঁচ লাখ টাকা করে, রানার আপ চার লাখ টাকা করে, তৃতীয় স্থান অর্জনকারী তিন লাখ, চতুর্থ স্থান অর্জনকারী দুই লাখ এবং পঞ্চম স্থান অর্জনকারী এক লাখ টাকা করে পাবেন।
অপরদিকে হাফ ম্যারাথনে পুরুষ ও নারী দুই বিভাগেই বিদেশি এলিট বিভাগের চ্যাম্পিয়ন দুই হাজার ৭০০ ডলার, রানার আপ এক হাজার ৫০০ ডলার, তৃতীয় হওয়া দৌড়বিদ ৭৫০ মার্কিন ডলার পাবেন।
বাংলাদেশি অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন আড়াই লাখ টাকা করে, রানার আপ দুই লাখ করে, তৃতীয় দেড় লাখ করে এবং চতুর্থ ও পঞ্চম স্থান অর্জনকারী ১০ হাজার টাকা করে পাবেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন-২০২১ আয়োজনের ল্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক বলেন, “রেসটির মূল ল্য হল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনটিকে তাৎপর্যপূর্ণ ও মহিমান্বিত করা। ম্যারাথনের মাধ্যমে প্রশিতি অ্যাথলেটদের পাশাপাশি দেশের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রাণবন্ত পরিবেশ তথা উজ্জ্বীবিত হওয়ার অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করা।
“এই ম্যারাথনের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক তথা যুব সমাজকে খেলাধুলার একটি স্বাস্থ্যকর ও সক্রিয় জীবনযাত্রার পথে প্রদর্শিত করা। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সোনার বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে সারা বিশ্বের নিকট উন্মোচিত করা।”
তিনি জানান, এখন থেকে প্রতি বছর ১০ জানুয়ারি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন’ আয়োজন করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ।
রোববার ভোর ৬টায় আর্মি স্টেডিয়ামে ম্যারাথনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকব্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।
বেলা ১১টায় হাতিরঝিলের এম্ফি থিয়েটারে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ।
ম্যারাথন উপলে রোববার ভোর থেকে ঢাকার র্যাডিসন হোটেল থেকে বনানী পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ম্যারাথন গুলশানে পৌঁছালে খুলে দেওয়া হবে এয়ারপোর্ট রোড। ম্যারাথন চলাকালে হাতিরঝিলে যান চলাচল বন্ধ থাকবে। বেলা সাড়ে ১১টায় আয়োজন শেষ হলে যান চলাচলের জন্য হাতিরঝিল খুলে দেওয়া হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন-২০২১ আয়োজক কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সালীম আহমেদ খান, সদর দপ্তর ৮৬ স্বতন্ত্র সিগন্যাল ব্রিগেডের কমান্ডার জেনারেল তামজিদুল হক চৌধুরী, সেনাসদরের এমটি পরিদপ্তরের স্টাফ কর্নেল মো. শওকত ওসমান, স্পোর্টস ভিশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন সাইফুর রহমান, বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।