*নগরীর পানি নিষ্কাশনের প্রধান খালটি এখন যেন ময়লার ভাগাড়
*পচা-নোংরা পানির দুর্গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে তৈরি করছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
কুমিল্লা
সিটি কর্পোরেশনের পানি নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম কান্দিখাল এখন আর খাল নয়,
এটি পরিণত হয়েছে ময়লা ও বর্জ্যরে ভাগাড়ে। ময়লা-নোংরা ও পচা পানির দুর্গন্ধ
বাতাসে মিশে নগরবাসীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে খালটি। একসময়ের প্রশস্ত
খালটি দিনে দিনে দখল-দূষণে সরু ড্রেনে রূপান্তরিত হয়েছে। কুমিল্লা সিটি
কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে দখল-দূষণ প্রতিরোধে কোনো উদ্যোগ তো নেওয়া হয়ইনি।
সরেজমিনে
দেখা যায়, নগরীর নওয়াববাড়ি চৌমুহনী থেকে সালাউদ্দিন মোড়, টমছম ব্রিজ, পানি
উন্নয়ন বোর্ড, কুমিল্লা বিভাগীয় বন বিভাগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ),
কুমিল্লা মডার্ন হাসপাতাল হয়ে নোয়াগাঁও চৌমুহনী পর্যন্ত খালের প্রায় শতাধিক
স্থানে ময়লা-আবর্জনা জমে ভরাট হয়ে আছে। খালে পানির স্বাভাবিক গতি না থাকায়
আবর্জনা পচে বাতাসের সাথে মিশে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। খালটির পাশ দিয়ে
ব্যস্ত সড়ক থাকায় পচা পানির উৎকট গন্ধে নগরবাসীকে নাক টিপে চলাফেরা করতে
হয়।
কুমিল্লার সচেতন নগরবাসীর অভিযোগ, শহরের পানিপ্রবাহের সবচেয়ে বড়
মাধ্যম কান্দিখাল দীর্ঘদিনের দখলবাজিতে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। ভারী বর্ষণ হলেই
পানি ফুলেফেঁপে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। নানা
প্রকল্পের মাধ্যমে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি কর্পোরেশন ড্রেন নির্মাণের
কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু প্রধান খাল ও ড্রেনগুলো খনন ও পরিষ্কার না করায়
অল্প বৃষ্টিতেই নগরীতে পানি জমতে শুরু করে। তাই নগরবাসীর জোর দাবি, ময়লার
ভাগাড়ে পরিণত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ খান্দিখালটি পরিষ্কার করে সুন্দর পরিবেশ
তৈরি করা হোক।
এদিকে খালে ময়লার স্তূপ ও পচা পানির দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ
হয়ে কুমিল্লা বিভাগীয় বন বিভাগের কর্মকর্তা নুরুল করীম তার ফেজবুক ওয়ালে
লেখেন, ‘কুমিল্লা শহরের কান্দিখাল ৭০ ভাগ আবর্জনায় পূর্ণ। এটা কি
দায়িত্বশীল নাগরিকের মনোভাব? আমরা কিভাবে এই নগরবাসীকে সাথে নিয়ে উন্নত দেশ
গড়ব? আশা করি, খালটি পরিষ্কারে সিটি কর্পোরেশন উদ্যোগ নেবেন।
এই
পোস্টের কমেন্টে কামরুল হাসান নামে একজন লেখেন, কোনো শহর অঞ্চলে যেকোনো
ধরনের অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি তৈরির জন্য নগরবাসী ও পৌর কর্তৃপ সমানভাবে
দায়বদ্ধ। কুমিল্লাসহ বাংলাদেশের অন্য শহরগুলোতেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার টেকসই
সমাধান হিসাবে উপযুক্ত প্রকল্প হাতে নেয়া প্রয়োজন।
ইয়াসমিন নামে এক
পথচারী কুমিল্লার কাগজকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ড্রেনটি পরিষ্কার করা হচ্ছে
না। আমি অফিস থেকে প্রতিদিনই সড়কের পাশ ধরে যাতায়াত করি। ময়লা ও পচা পানির
দুর্গন্ধে কাপড় দিয়ে নাক টিপে ধরা ছাড়া চলাচল সম্ভব হয় না।’ তিনি বলেন,
‘সিটি কর্পোরেশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, তারা যেন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে
পরিণত হওয়া খালটি দুর্গন্ধমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’
জানতে
চাইলে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, সড়ক ও জনপথ
বিভাগ সড়ক প্রশস্তের কাজ করতে গিয়ে খালের কিছু অংশ ব্যবহার করছে, যার কারণে
পানি প্রবাহে খাল তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলেছে। এ কারণে ময়লা জমে
দুর্গন্ধ সৃষ্টি হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবছর বর্ষার আগে আমরা
কান্দিখাল খননসহ নগরীর সকল ড্রেন পরিষ্কার করি। এ বছর খান্দিখাল খনন ও
পরিষ্কারের কাজ শুরু করবো চলতি মাসে।’