শাহীন শাহ্ ||
কবি
গুরু আজ আপনি নেই, তবুও আপনি আছেন এবং থাকবেন। এই বিশ^ ব্রক্ষ্মা-ে কেউই
চিরকালের বাসিন্দা হতে পারেননি। আপনি ও তাঁর ব্যতিক্রম নন। আপনি আপনার
সৃষ্টকর্ম সাহিত্য রেখে গেছেন, রেখে গেছেন আপনার জীবনকেও। চলে গেলেন দূর
সীমান্তে। সেখান থেকে কেউ কোনদিন ফিরে আসে না। আপনি ও ফিরে আসবেন না, আসা
সম্ভব নয়। যতদিন বাংলা তথা ভারতবর্ষের নীল আকাশে রাশি রাশি নক্ষত্র জ¦ল জ¦ল
করবে, প্রমত্তা পদ্মা-মেঘনা-যমুনার বুকে খর¯্রােতা জল বইবে,যতদিন ঘণ
বর্ষার কদম জলে মানুষেরা সিক্ত হবে, আষাঢ়ের জলে কদম ফুয়ারায় কিংবা
বটবৃক্ষের ছায়া-শীতল শ্যামল আবেশ যতদিন বইবে, এই গগণের মহাতাঁরকা হিসেবে
বাঙালির কুসুম- কোমল হৃদয়ে ততদিন ঠাঁই হয়ে থাকবেন কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর। জানি আমরা কেউই কবি গুরুর মতো হতে পারব না। তাঁর মেধা-মনন এবং
সৃজনশীলতা আমাদের নেই, তাঁর পথে আমরা অগ্রসর হতে পারি। তাঁর দেখানো পথটি
হচ্ছে হৃদয়বান মানুষ হবার পথ। তিনি বলেছেন- একই সঙ্গে হৃদয়বান ও বুদ্ধিমান
হতে। তিনি আরো বলেছেন- উদারচিত্ত ও সাহসী হতে। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর মাত্র
ছয় বছর পর দেশ ভাগ হয়েছে। দেশ ভাগ হয়েছে এ কথাটি সত্য বটে কিন্তু তিনি ভাগ
হননি। ভারতের যেমন বাংলাদেশেরও তেমনি জাতীয় সঙ্গীত তাঁর রচনা থেকেই এসেছে।
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের গান গাইতে গাইতেই স্বাধীন হয়েছে আমাদের প্রিয়
মাতৃভূমি বাংলাদেশ। পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে রূপান্তর এই একটি গানের
ভূমিকা অনস¦ীকার্য। সার্বজনীন এই গানটি বাঙালি হৃদয়ের বিশালতা দিয়েছে,
দিয়েছে দেশপ্রেমের উজ্জ্বল শিখা। আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি
গানটি গাইতে গাইতে স্বাধীনতাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে শহীদ হয়েছেন শত-সহ¯্র
দেশপ্রেমিক মুক্তি সেনা। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি, ছিলেন
বাংলা ভাষার একজন শ্রেষ্ঠ কবি। তিনি কবিদের কবি ছিলেন, ছিলেন সাহিত্যিকের
সাহিত্যিক। কথাটি সর্বজন স¦ীকৃত। রবীন্দ্রনাথ বেঁচে ছিলেন ৮০ বছর। তিনি গত
হয়েছেন ৮০ বছর। সেই ১৯৪১ আজকে ২০২১ পার্থক্য ফল ৮০। অশীতিপর সময়ের ব্যবধানে
রবীন্দ্রবিহীন একা মনে হয় না। তিনি আছেন সমগ্র বাঙালির হৃদয়ে। তাঁর
সৃষ্টকর্ম ধারণ করে বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উজ্জ¦ল প্রভায়
বিভোর। (১৮৬১-১৯৪১) এই সুদীর্ঘ ঘটনাবহুল জীবনের উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে তিনি
প্রিয়জন বিয়োগে বির্মষিত হয়েছেন বহুবার। শোকে জর্জরিত হয়েছেন প্রিয়তমা
স্ত্রী, আদরের সন্তান এবং ভাতৃবধূর মৃত্যুতে। দুঃখকে বহন করার, দুঃখকে সয়ে
নেবার মতো তাঁর ধৈর্যশীলতা ছিল অসীম। শত দুর্ঘটনা দুর্বিপাকে ভেঙে পড়েন নি
কখনো, ছিলেন দারুণভাবে রোমান্টিক এবং তিনি সব সময়ই ছিলেন আশাবাদী।
রবীন্দ্রনাথ ভারতবর্ষের নীল আকাশের নিচে জীবনের ৮০টি বছর পার করেছিলেন এক
অনন্য মানুষ হিসেবে। তাঁর মতো এই ভারতবর্ষে অনেকেই ৮০ বছর বেঁচে ছিলেন।
কিন্তু তাঁর তুলনায় কেহ আসতে পারেন নি। রবীন্দ্রনাথ তাঁর নিজ হাতে সাড়ে তিন
হাত দৈর্ঘ্যরে একজন মানুষ ছিলেন বটে। তাঁর দেহে, তাঁর আত্মায়, তাঁর হৃদয়ে
মানুষের প্রতি অনুরাগই তাকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। তাঁর ভাবনার
জায়গাটায় মানুষই তাঁর পরম আত্মীয়। তাঁর চাওয়া-পাওয়ার জায়গাটায় মানুষকে
নিয়ে। মানুষের প্রতি অসীম দরদই তাঁর আসল মূলধন। তিনি চেয়েছিলেন
রাষ্ট্রকাঠামো দূর্বল হতে। সমাজ কাঠামো শক্তিশালী করতে। সামাজিক কাঠামো
সমৃদ্ধশালী হলে মানুষের মানবিক জায়গাটা উন্নত হবে এটা তাঁর আদর্শিক ধারণা।
কেহ কেহ বলেন ৪৭ এরপর রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে রবীন্দ্রনাথই ভারতের প্রথম
প্রেসিডেন্ট হতেন। মহৎ দার্শনিকের মতো মায়াময় পৃথিবী থেকে চিরকালের মতো
পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার আগে রবীন্দ্রনাথ সবাইকে আশীর্বাদ করে পেতে
চেয়েছেন সবার আশীর্বাদ। তিনি যাত্রা করতে চেয়েছেন মৃত্যুর সঙ্গে মহামিলনের
পথে-
শূন্যঝুলি আজিকে আমার
দিয়েছি উজাড় করি
যাহা কিছু আছিল দিবার,
প্রতিদানে যদি কিছু পাই
কিছু ¯েœহ, কিছু ক্ষমা....
মৃত্যু
ভাবনায় আচ্ছন্ন থেকেও কবি নিজেকে উজার করে দিয়েছেন মানুষের কল্যাণে। তাঁর
বিচরণ সর্বভূমিতে, তাঁর অধিষ্টান সর্বদেশে, তাঁর মূলমন্ত্র সর্বমানবতা আর
সর্বজনের অন্তরে তাঁর অধিকার। মাত্র আট বছর বয়সে তাঁর কবিতা লেখার হতেখড়ি।
তেরো বছর বয়স থেকে তাঁর লেখা প্রকাশের শুরু। প্রথম কবিতা গ্রন্থ কবি কাহিনী
(১৮৭৮) থেকে শুরু করে শেষ বই শেষ লেখা পর্যন্ত ষাট বছরের মতো কবি জীবনে
৫৬টি কাব্যগ্রন্থ তিনি লিখেছেন। তিনি কাব্যনাটক লিখেছেন ১৯টি, নাটক ২৯টি,
ছোটগল্প ১১৯টি, উপন্যাস ১২টি, ভ্রমণ কাহিনী ৯টি এবং প্রবন্ধ ৩৬টি। তাঁর
চিঠিপত্র সংকলিত হয়েছে ১১টি গ্রন্থে, এছাড়া ছোটদের জন্য লেখা তাঁর
গল্প-কবিতা-ছড়ার বই রয়েছে ৮টি। গান লিখেছেন ২২৩২টি। এতসব বহুমাত্রিক
সৃষ্টির ভা-ার থাকা সত্ত্বেও তিনি সত্তর বছর পূর্তি জয়ন্তী উৎসবে ভাষণ
দিতে গিয়ে কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন,‘একটি মাত্র পরিচয় আমার আছে, সে আর
কিছু নয়, আমি কবি মাত্র’। হ্যাঁ তিনি কবি, তিনি কবিদের কবি, সাহিত্যিকদের
সাহিত্যিক। বহুমাত্রিক মানুষটি নিজেকে কবি বলে পরিচয় দেওয়া এটা তাঁর
বিনয়েরই প্রকাশ। ঔপন্যাসিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাকে কেবল কবি বলে
সম্ভোধন করেননি, সম্ভোধন করেছিলেন সার্বভৌম ‘কবি’ বলে। ১৯১৩ সালে নোবেল
পুরস্কার প্রাপ্তির উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে কবি
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছিলেন;
‘যে- ভাবই ওঠে প্রাণের মাঝে
তোমার গানে সকলই আছে’।
রবীন্দ্রনাথের
বহুমূখী প্রতিভার প্রকাশ ও বিকাশ কেবল সাহিত্যে নয়, অন্যান্য মাধ্যমগুলিও
এড়ানোর পথ নেই। তিনি শেষ জীবনে প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছেন। এছাড়া তিনি
সুরকার, গীতিকার, গায়ক, চিত্রশিল্পী, অভিনেতা ও সংগঠক হিসেবে তৎকালীণ
পশ্চাৎপদ ভারতবর্ষে শিল্পরুচির বিকাশ ঘটিয়েছেন। বিশেষকরে তাঁর রচিত
দেশাত্মবোধক গানের আবেদন বাঙালিকে আন্দোলন-সংগ্রামে প্রণোদিত করেছে এবং
করছে। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রিয়
মুক্তিযুদ্ধাদের সংগ্রামের পথে প্রেরণার অন্যতম উৎস হিসেবে কাজ করেছে। তাঁর
একটি গান বাংলদেশের জাতীয় সঙ্গীত, আর একটি ভারতের। বলতে দ্বিধা নেই, নেই
কোনো সংকোচ যতদিন পৃথিবীতে মানুষের জীবনে প্রেম, প্রকৃতি, স্বদেশ চেতনা ও
মানবিকতা থাকবে, ততদিন তাঁর গানের মৃত্যু নেই। বিশেষকরে আবৃত্তি ও অভিনয়ে
কবি বিশেষ দক্ষতাঁর পরিচয় দিয়েছেন। সাহিত্য, সংগীত, নৃত্যকলা ও চিত্রকলা এই
চারটি শাখায় তাঁর ভরাট উপস্থিতিতে যেমন ভারতবর্ষের নীল আকাশ উজ্জ্বল
হয়েছে, তেমনি জমিদার পরিবারের সন্তান হিসেবে অর্থনীতিতেও বিশেষ ভূমিকা রেখে
নিজেকে নিয়ে গেছেন পর্বতসম জায়গায়। কুটির শিল্পের উন্নয়নসহ গ্রামীন জীবনের
অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে চটকল ও কাপড়ের কল প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষিত
সমাজকে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়ে ভূমিকা রেখেছেন । তাঁর কর্মে ,
তাঁর সৃজনে তাঁর মানবিকতায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন অভিভক্ত ভারতবর্ষের তথা
বাঙালি হৃদয়ের স্পন্দন। তিনি বাঙালির মহান শিক্ষাগুরু এবং জাতীয়তাবাদ
চেতনার অগ্নিপুরুষ। বোধে উপলব্ধি জাগে যে, তিনি বাঙালি-জাতীয় জীবনে
প্রধানতম সহায়ক ও আলোর দিশারি। বলা দরকার, প্রথম মহাযুদ্ধ শেষে ফরাসি মনীষী
‘রমা রোলাঁ’ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ চিন্তা নায়কদের স¦াক্ষরযুক্ত যে বিখ্যাত
ইশতেহারটি প্রকাশ করেছিলেন তাতে রবীন্দ্রনাথেরও স্বাক্ষর ছিল। সেটি বিশ^
মানবিকতাঁর ইতিহাসে এক শ্রেষ্ঠ দলিল। ১৯১২ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত এই পাঁচ
বছর ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনে বিশেষ দিক। বিশে^র পথে পথে তাঁর বিচরণ ছিল এই
সময়টায়।
সমকালীন লেখক সমাজ তাকে বিশ^পথিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
তিনি প্রায় সারা পৃথিবী আপন মনে ঘুরে বেড়িয়েছেন। বিশেষ করে চীন, জাপান,
কোরিয়া, বার্মা, মালয়, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড,
জার্মানি, ইতালি, আমেরিকা ও রাশিয়া। তিনি বিশে^র যেখানে গেছেন সেখানেই
বাংলা ও বাঙালির প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ভারতবর্ষকে তুলে ধরেছেন বিশে^র কাছে,
আর বিশ^কে তুলে ধরেছেন ভারতবর্ষের কাছে। ফলে বিশে^ সৃজনশীল মানুষদের কাছে
প্রকাশ পেল তাঁর সর্বতোমুখী প্রতিভা ও চির সুন্দর মহান ব্যক্তিত্ব। তাঁর
চিন্তা ও কর্ম, স্বপ্ন ও সৃষ্টি বাঙালির মানস বিকাশের চিরায়ত প্রেরণা।
তাঁর অবদান সার্বজনীন। তাঁর রেখে যাওয়া কর্মকা- মানব সংস্কৃতির মূল্যবান
সম্পদ। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে বয়ে আসা দুঃখ ও গ্লানি, শোক ও সংকট,
ব্যর্থতা ও হতাশা জয় করবার জন্য যেটি জরুরি দরকার তাঁর অনেক কিছুই পাওয়া
যায় রবীন্দ্রনাথের জীবন ও কর্ম, সাহিত্য ও শিল্প থেকে। রবীন্দ্রনাথ
বহুমাত্রিকতায় বেড়ে উঠার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন ঠাকুর পরিবার। তাঁর
শৈশব-কৈশোরের বাড়ন্ত সময়ে তাঁর পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং পরিবারের
অগ্রজদের পরিচর্যাই তাকে বিশ^ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরে পরিণত করেছে। বিশেষ
করে রবীন্দ্রাথের বয়স যখন ১২ বছর তখন তাঁর পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথকে হিমালয় ভ্রমণে নিয়ে গিয়েছিলেন। পিতাঁর স্বপ্ন ছিল প্রিয়
পুত্রের হৃদয় যেন বিশাল হিমালয়ের সমান হয়।তাঁর বুক যেন হিমালয়ের মতো
প্রশস্ত হয়। হ্যাঁ শিশু রবীন্দ্রনাথ হিমালয়সম মানব হতে পেরেছেন। তাঁর জীবন ও
কর্মের নানাদিক বিশ্লেষণ করলে ঢের বেশি দেখতে পাবো রবীন্দ্রনাথের আধিষ্টান
হিমালয়সম। রবীন্দ্রনাথের প্রকাশ-বিকাশের পেছনে তাঁর পরিবরের ভূমিকা
অনস্বীকার্র্য। যাদের সান্নিধ্যে রবীন্দ্রনথের শৈশব ও কৈশোরের কুসুম-কোমল
সময় কেটেছে তাঁরা হলেন অগ্রজ দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর,
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, দিদি সোদামিনী দেবী ও স্বর্ণকুমারী দেবী, ভাতৃবধু
জ্ঞানদান নন্দিনী ও কাদম্বরী দেবী। রবীন্দ্রনথের চোখে প্রিয় পিতা
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন হিমালয়তুল্য, বাড়িতে দাদারা ছিলেন কর্তৃপক্ষ।
তাদের শাসনে-আদরে রবীন্দ্রনাথের বেড়ে ওঠা। রবীন্দ্রনথের প্রাতিষ্ঠানিক
শিক্ষা বিশেষ করে বিদ্যালয়ের পরীক্ষামুখী প্রণালিবদ্ধ পড়ালেখায় কোন আকর্ষণ
ছিল না। বলা দরকার রবীন্দ্রনাথ বিদ্যালয়মুখী পড়াশুনায় নিজেকে টানতে
পারেননি। মাত্র পনেরো বছর বয়সে তাঁর স্কুল জীবনের পরিসমাপ্তী ঘটে। যেন
স্কুল আশ্রয় নেয় তাঁর স্বভাবের মধ্যে।গুরুগৃহই ছিল তাঁর জ্ঞানার্জনের
পাঠশালা। কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, নীরব তপস্যা, হৃদয়ধর্মী সুষম পাঠচর্চার
মধ্যেই রবীন্দ্র প্রতিভা হয়েছিল মহত্তম, সৃষ্টিশীল ও সার্বজনীন।
রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীল ভাবনার জায়গাটায় যাদের প্রভাব লক্ষণীয়ভাবে দৃশ্যমান
তাঁরা হলেন, রাজা রামমোহন রায়, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঈশ^র চন্দ্র বদ্যাসাগর ও
মাইকেল মধুসূদন দত্তের মতো মহান মানুষেরা। রাজা রামমোহন রায় এবং
বিদ্যাসাগরের মত ও পথকে প্রসারিত করার জন্য রবীন্দ্রনাথ আমৃত্যু চেষ্টা
চালিয়ে গেছেন। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্ট কর্মের যে বিশালতা, যে বহুমাত্রিকতায়
পরিপূর্ণ, তা তুলে ধরতে হাজার পৃষ্ঠা লিখলেও অসম্পূর্ণ মনে হবে, একথা আমি
নিশ্চিতভাবে বলতে পারি। তাঁর লেখা সমগ্র কর্মকা- যদি তুলে রাখি একটি বদ্ধ
ঘরে-ভারতবর্ষের নীল আকাশ অন্ধকারে ঢেকে যাবে একথা আমি হলফ করে বলতে পারি।
রবীন্দ্রবিহীন ভারত তথা এই উপমহাদেশ ভাবতে গেলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের চোখ
ঝাপসা হয়ে আসবে আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি। জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িটিই
রবীন্দ্রনাথের আতুর ঘর, রবীন্দ্রনথের বেড়ে ওঠা, সংস্কৃতির শীতল পরশে
রবীন্দ্রনাথের বিকশিত হওয়া। পিতামহ দ্বারকানাত ঠাকুরের হাত ধরে হিন্দু কলেজ
প্রতিষ্ঠা, মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন ও ডাক বিভাগ চালুকরণ করা হয়। বিশেষকরে
মুদ্রন শিল্পের বিকাশ তাদের হাত দিয়েই হয়েছিল। আমার ভাবনায়, আমরা চেতনালোকে
স্বপ্ন দেখায় রবীন্দ্রনাথের অশরীরী উপস্থিতি আমার কামনায় থাকে সারাবেলা।
আক্ষেপে থাকে চন্দ্রিমাকাশে এখনো নিশি হয়, ভোর হয়, সকালের শুভ্র আলোয় শিশির
মুক্তা ঝরায়, বর্ষার কদম জলে ডাহুক পাখি সিক্ত হয়, প্রিয় কবি শুধু তুমি
নেই, তবুও বলি তুমি আছো সর্ব বাঙালির হৃদয়ে। তুমি সকল দেশের সকল মানুষের
গৌরব। সমকাল ও অনাগত কালের সকল মানুষের কাছে তুমি এক মহিমান্নিত পূরুষ।
তোমার চিন্তা, তোমার সৃষ্টি বিশে^র মানবজাতির পরম সম্পদ। তোমার সাহিত্য,
শিল্প,সমস্ত কর্মকা- সকল স্তরের মানুষের কাছে সার্বজনীন ও বিশাল আকাশের মতো
উদার। কবির শেষ লেখার শেষ দিয়ে শেষ করছি-
‘রক্তের অক্ষরে দেখিলাম
আপনার রূপ
চিনিলাম আপনারে
আঘাতে আঘাতে
বেদনায় বেদনায়’।
তথ্যসূত্র ঃ-
১। রবীন্দ্রসাহিত্য, রবীন্দ্রভাবনা (মাহবুবুল হক, অধ্যাপক চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়)
২। রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস সৈয়দ আকরম হোসেন, অধ্যাপক ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়)
৩। বাঙালি কেমন আছে বর্তমানে (সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ইমেরিটাস অধ্যাপক ঢাবি)
৪। উইকি পিডিয়া......................।
শাহীন
শাহ
অধ্যাপক, কলাম লেখক ও
প্রাবন্ধিক
মোবাইল ঃ- ০১৭২০-১৮৩০৩৯