ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
মিনিকেট এক ফাঁকির নাম
Published : Tuesday, 26 January, 2021 at 7:02 PM
মিনিকেট এক ফাঁকির নামএই ধান কোত্থেকে আসে, কীভাবে মিনিকেট চাল হয়ে যায়, তা ভোক্তাদের অজানা থাকলেও গত দুই দশক ধরেই খাবার টেবিলে তা শোভা বাড়াচ্ছে। কারণ এথেকে চিকন ও সাদা ভাত হয়।
এই চাল নিয়ে এই অসাধু ও অস্বচ্ছ বাণিজ্যের ফলে একদিকে যেমন ভোক্তা প্রতারিত হচ্ছেন, অন্যদিকে অতিমাত্রায় ছাঁটাইয়ের ফলে চালের পুষ্টিমান কমে গিয়ে তা শরীরের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান আইনে ধানকে মিনিকেট করা ঠেকানোর কোনো সুযোগ না থাকায় ভোক্তাদের সচেতন হয়ে ওঠাই এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। নাম এল কীভাবে?বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা পরিচালক ড. কৃষ্ণ পদ হালদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মিনিকেট নামে কোনো ধানের জাত নেই।তাহলে এই নাম কী করে এল- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ভারতের কৃষকরা এই নাম দিয়েছে। তবে গবেষণাগারে এই জাতের কী নাম দেওয়া হয়েছে, তা আমরা জানতে পারিনি বা জানার চেষ্টা করিনি।”অনুসন্ধানে জানা যায়, মিনিকেট শব্দটি এসেছে ইংরেজি শব্দ ‘মিনি’ ও ‘কিট’ থেকে। ভারত সরকার নতুন উদ্ভাবিত কোনো ধানের বীজ ছোট বা মিনি প্যাকেটে কৃষকদের দেয়, তা থেকে কথ্য ভাষায় এই নাম হয়। পরে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারত থেকে কিছু ধানের জাত বাংলাদেশে আসে।ভারত সীমান্তের কুষ্টিয়া জেলার ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ ঢাকার বাজারে মিনিকেট চালের বাণিজ্যিক প্রচলন ঘটিয়েছেন বলে ব্যবসায়ী মহলে প্রচলিত রয়েছে।তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘মিনিকেট ধান’ বাংলাদেশের ধান গবেষণা কেন্দ্র থেকে আসেনি। মিনিকেট এর জাতের নামও নয়। এই ধানের প্রকৃত নাম যে কী, তা এখনও জানি না।“তবে পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের এই ধানের বীজ ও সারসহ একটি প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছিল। তখন এটাকে মিনিকিট বা মিনিকেট নামেই ডাকতে শুরু করে কৃষকরা।”“১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯০ সালের দিকে ভারত থেকে যশোরে এই ধানের বিস্তার হয়। পরে পাশের জেলাগুলোতেও ছড়ায়,” বলেন তিনি। কেটে হয় মিনিকেটগত মওসুমে দেশে ধানের সর্বমোট ফলন ছিল ৩৮৬ লাখ টন; যার মধ্যে কৃষকের কাছে পরিচিত ‘মিনিকেট’ হিসেবে চাষ হয়েছিল মাত্র ৫ লাখ টন। অথচ বছরজুড়ে বাজারে কিংবা অটো রাইস মিলগুলোর সরবরাহ লাইনে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই থাকছে মিনিকেট চাল।ড. কৃষ্ণপদ বলেন, “মূলত মিনিকেট নামে প্রচলিত ধানের আবাদ বাংলাদেশে খুব বেশি একটা হয় না। ধান গবেষণা কেন্দ্র থেকে উদ্ভাবিত বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল ধান থেকে চাল তৈরি করে সেটাই মিনিকেট হিসাবে বিক্রি করছে মিল মালিকরা।“এখন এমন আধুনিক যন্ত্রপাতি এসেছে যে যে কোনো ধানকে কেটে যে কোনো আকৃতি দেওয়া হয়। ফলে ধান যাই হোক, মিনিকেট চাল তৈরিতে মিলগুলোর কোনো সমস্যা হয় না।”দেশে মিনিকেটের সবচেয়ে বড় জোগানদাতা রশিদ এগ্রোর প্রতিষ্ঠাতা রশিদ এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা যারা হাস্কার, আমরা প্রথমে ধানের উপর থেকে খোসা ছাঁটাই করি। তারপরে এটাকে হোয়াইটনারে দিয়ে সাদা চকচকে করি। বাজারের চাহিদার কারণে আমরা বাড়তি প্রযুক্তি ও শ্রম ব্যবহার করে চালকে আরও উজ্জ্বল করে থাকি।”