মাসুদ আলম।। কুমিল্লার লাকসাম রেলেওয়ে দুই দফায় যাত্রীবাহী ট্রেন থেকে প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকা চুরি হয়েছে। চুরির ঘটনা দুইটি রহস্যজনক হলেও অপরাধীদের সনাক্ত কাজ করছেন না কর্তৃপক্ষ। যার কারণে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলা ও গাফলতিতে দেখছেন সচেতন কিছু কর্মকর্তা। এছাড়া উদ্ধারও হয়নি চুরি হওয়া রেলের টিকেট বিক্রির দেড় লাখ টাকা। টাকা চুরির ঘটনা দুইটির বিষয়ে পর পর তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও এখনও মেলেনি কোন তদন্ত প্রতিবেদন। এঘটনায় লাকসাম রেলওয়ে নিরাপত্তা চৌকির এক হাবিলদারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এদিকে চুরির ঘটনায় রেলওয়ে থানায় কোন অভিযোগ কিংবা মামলা করেনি কেউ। রেলওয়ের বিভাগীয় তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার লাকসাম রেলওয়ে জংশনে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরতদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-নোয়াখালী রুটের, মাইজদী কোর্ট, মাইজদী ও নাথেরপেটুয়া স্টেশনে টিকিট বিক্রির ৯২ হাজার ৭০০ টাকা গত বছরের (২৯ ডিসেম্বর) নোয়াখালী থেকে ঢাকাগামী সমতট এক্সপ্রেস ট্রেনে সিন্দুকে ঢুকিয়ে সীলগালা করে তা লাকসাম স্টেশন মাস্টার বরাবর পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে লাকসাম স্টেশন মাস্টার সিন্দুকটি গার্ড থেকে বুঝে নিয়ে ময়মনসিংহ থেকে আসা চট্টগ্রামগামী নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনে তুলে দেন। ট্রেনের দায়িত্বরত গার্ড চট্টগ্রাম পে অ্যান্ড ক্যাশ অফিসে সিন্দুকটি বুঝিয়ে দিতে গেলে দেখতে পান সিন্ধুকটির তালা ভাঙা। সিন্দুকে নেই টাকা। এ ঘটনায় ৩০ ডিসেম্বর চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
অপর দিকে একই কায়দায় চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি সমতট এক্সপ্রেস নোয়াখালী থেকে ট্রেনের গার্ড রুমের লকারে তিনটি ব্যাগে থাকা ৫৮ হাজার ৯৮৮ টাকা সীলগালা করে তা লাকসাম স্টেশন মাস্টার বরাবর পাঠিয়ে দেওয়া হয়। লাকসাম ষ্টেশনে সিন্দুকটি গ্রহন করতে গেলে ষ্টেশন মাষ্টারসহ সংশ্লিষ্টরা সিন্দুকের সিল সুতা ছেঁড়া ও তালা ভাঙ্গা দেখতে পান। তাৎক্ষনিক উদ্ধতন কর্মকর্তাদের জানালে তারা এসে সিন্দুকটি খুলে দেখেন এর ভিতরে কোন টাকা নেই।
রেলওয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আনসার আলী চুরির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন জানান, গত ২৯ ডিসেম্বর ৯৪ হাজার ৭০০ টাকা এবং ২৮ জানুয়ারি ২য় দফায় ৫৮ হাজার ৯৮৮ টাকা খোয়া যাওয়া টাকা উদ্ধারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তদন্ত চলমান আছে। যাদের দায়িত্ব অবহেলায় টাকা খোয়া গেছে তারা নিজ থেকে এ টাকা জমা দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, দুটি ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে বিভাগীয় তদন্তে যারা দোষী সার্বস্ত্য হবেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেলওয়ে কর্মচারী জানান, রেলের টাকার ওপর ‘জ্বিনের আছর’ ভর করেছে। সংশ্লিষ্টরা রেলের টাকা নিজেদের সুবিধামতো কোষাগারে জমা দেন। এ ভাবেই গায়েব হয়ে যায় রেলের টিকিট বিক্রির লক্ষ লক্ষ টাকা।
লাকসাম রেলওয়ে জংশনের ষ্টেশান মাষ্টার মোঃ শাহাবুদ্দীন চুরির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন জানান, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (এসিইউ) তারেক মাহমুদ এমরানের নেতৃত্বে ৪সদস্যের কমিটি টাকা চুরির ঘটনা তদন্ত করছেন। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা (এটিও) মনির হোসেন, সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এও একাউন্স) সিরাজুল ইসলাম ও নিরাপত্তা বিভাগের এ্যসিষ্টান্ট কমান্ডেট (এসি) সত্যজিৎ দাস।
লাকসাম রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ নিজাম উদ্দিন জানান, গত ২৯ ডিসেম্বর টাকা চুরির ঘটনা শুনেছি তবে এ বিষয়ে লাকসাম রেলওয়ে থানায় কোন অভিযোগ বা মামলা হয়নি।