ভারতে হিমবাহ ধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৪, নিখোঁজ ১৭০ভারতে হিমবাহ ধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৪, নিখোঁজ ১৭০
ভারতের উত্তরাখণ্ডে রবিবার হিমালয়ের একটি হিমবাহ ধসের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৪টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার সকাল পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে অন্তত আরও ১৭০ জন।
বছর সাতেক আগে ক্লাউড বার্স্ট বা মেঘ ভেঙে বন্যা ও ধসে ভেসে গিয়েছিল উত্তরখণ্ডের একটি বড় এলাকা। এবার মেঘ ভাঙা নয়, হিমবাহ ধসে ভেসে গেলো উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠের বিস্তীর্ণ এলাকা। চামোলি জেলার জোশীমঠে অলকানন্দা ও ধৌলিগঙ্গা নদীর পানিতে ভেসে গেছে বহু গ্রাম, জনপদ, ব্রিজ, এনটিপিসি-র তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ঋষিগঙ্গায় একটি জলবিদ্যুৎকেন্দ্র।
মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত জানিয়েছেন, ‘মোট ১৪টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকারীরা আপ্রাণ চেষ্টা করে মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। ইন্দো-টিবেটান বর্ডার ফোর্স (আইটিবিপি)-র জওয়ানরা উদ্ধার তৎপরতায় নেমে পড়েছে। সেনা নামানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, কেন এই বিপর্যয় ঘটলো, তা খতিয়ে দেখতে বিজ্ঞানীদের একটি দল গঠন করা হয়েছে।
প্রশাসনের চিন্তা বাড়িয়েছে এনটিপিসি-র ১৪৮ জন এবং জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২২ জন নিখোঁজ কর্মী। তাদের সন্ধানে সেনা ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। আইটিবিপি ইতিমধ্যে নির্মীয়মান দুইটি টানেল থেকে ৩০ জনকে উদ্ধার করেছে।
দিল্লিতে ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট টিমের সদস্যরা বৈঠকে বসেছিলেন। তারা জানিয়েছেন, সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের পক্ষ থেকে তাদেরকে জানানো হয়েছে, জোশীমঠে বিপর্যয় হলেও তার নিচের দিকের এলাকায় বন্যা হওয়ার আশঙ্কা নেই। অলকানন্দা ও ধৌলিগঙ্গার পানি কমে গেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া নানা ছবি ও ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, হঠাৎ করে নদীতে বিপুল বেগে পানি প্রবাহিত হতে শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে ব্রিজ, বাড়িঘর ভেসে যায়। সংকীর্ণ উপত্যকায় পানি ঢুকে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী সঞ্জয় সিং রণ তুষারধসের সময়কার পরিস্থিতি বর্ণনা করে বলেন, ‘এটা খুব দ্রুতই ঘটেছে। কাউকে সতর্ক করার মতো সময় ছিল না।’ রেনি গ্রামের একটি উঁচু এলাকায় সঞ্জয়ের পরিবারের বসবাস। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছিলো আমরাও বোধহয় ভেসে যাবো।’
গ্লেসিয়ার ভাঙা
উত্তরাখণ্ডে এই বিপর্যয় হয়েছে গ্লেসিয়ার বা হিমবাহ ভাঙার জন্য। এ এক বিরল ঘটনা। কিন্তু গ্লেসিয়ার ভাঙা মানে কি? আসলে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে গ্লেসিয়ার গলতে শুরু করে। হিমবাহে ধরে রাখা পানি হঠাৎ নেমে আসে নদীতে। নদীতে তখন বিপুল জলোচ্ছ্বাস হয়। সেই ঘটনাই ঘটেছে জোশীমঠে।
একুশ শতকের শুরুতে হিমালয়ের গ্রেসিয়ার গলতে শুরু করে। ২০১৯ সালে বিজ্ঞানীরা একটি সমীক্ষা করেন। গত ৪০ বছরের স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করেন তারা। এতে দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভারত, চীন, নেপাল, ভুটানে গ্লেসিয়ার গলছে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছে এই সব দেশের মানুষ। আরও দুর্ভোগ সামনে অপেক্ষা করছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, তারা সব ধরনের সাহায্য করতে প্রস্তুত। সেক্রেটারি জেনারেল অ্যান্টোনিও গুতেরেস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি এই ঘটনায় অত্যন্ত মর্মাহত। জাতিসংঘ সব ধরনের সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত। সূত্র: ডিডব্লিউ, আনন্দবাজার।