ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
নবী-জন্মের ইঙ্গিতবাহী ঐতিহাসিক ঘটনা
Published : Friday, 12 February, 2021 at 12:00 AM
মহানবী (সা.) পৃথিবীতে আগমনের আগ মুহূর্তে আরব উপদ্বীপ ও তার বাইরে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছিল, যা একই সঙ্গে বিস্ময়কর এবং পরিবর্তনের বার্তাবাহী। গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এসব ঘটনা ছিল মহানবী (সা.)-এর আগমনের পূর্বনিদর্শন। সিরাতবিদরা এ ঘটনাবলিকে ‘ইরহাস’ নামে চিহ্নিত করেন। এমন কয়েকটি ঘটনা হলো,
১. জমজম কূপ খনন : ইবরাহিম (আ.) যখন তাঁর স্ত্রী ও শিশু পুত্র ইসমাইলকে মক্কার বিরান ভূমিতে রেখে যান, তখন দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে ইয়েমেনের বনু জুরহাম দেশত্যাগ করে মক্কায় আশ্রয় নেয় এবং বনু ইসমাইলের সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন অবস্থানের পর কাবার তত্ত্বাবধান ও স্থানীয় নানা স্বার্থ নিয়ে তাদের মধ্যে স্বার্থের দ্বন্ধ হয়। এক পর্যায়ে বনু জুরহাম মক্কা ত্যাগে বাধ্য হয়। মক্কা ত্যাগের সময় কাবার জিনিসপত্রগুলো তারা জমজম কূপে নিক্ষেপ করে। এর আগে বনু ইসমাইল তথা কোরাইশরা মক্কা ত্যাগ করায় কূপটি পরিত্যক্ত অবস্থায় হারিয়ে যায়। কোরাইশরা ফিরে আসার পর আবদুল মোত্তালিব স্বপ্নযোগে নির্দেশানুযায়ী জমজম কূপ খনন করেন। জমজম কূপ উদ্ধার ছিল সমকালীন আরব ইতিহাসের তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এতে মক্কা ইবরাহিমি ধর্ম তথা একত্ববাদ পুনঃপ্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত ছিল বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন। (সিরাতে মোস্তফা : ১/৩৮)
২. সন্তান কোরবানির মানত : জমজম কূপ খননের কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করার পর আবদুল মুত্তালিব মানত করেছিলেন যদি তাঁর ১০টি পুত্র সন্তান দান করেন এবং তারা নিজেদের রক্ষা করার মতো বয়সে উপনীত হয়, তবে তিনি তাঁর এক পুত্রকে কাবা চত্বরে আল্লাহর নামে উৎসর্গ করবেন। মহানবী (সা.)-এর পিতা আবদুল্লাহ বড় হয়ে উঠলে তিনি সন্তান কোরবানি করার প্রস্তুতি নেন। সন্তানদের ভেতর লটারি করলে আবদুল্লাহের নাম ওঠে। কিন্তু আবদুল্লাহ সবার প্রিয় পাত্র হওয়ায় এক নারী গণক তাঁর পরিবর্তে পশু কোরবানি করার পরামর্শ দেয়। লটারিতে ১০ বারে এক শ পশুর নাম ওঠার পর আবদুল্লাহর নাম আসে। ফলে তাঁর পরিবর্তে এক শ উট কোরবানি দেওয়া হয়। এ ঘটনার দিকে ইঙ্গিত দিয়ে মহানবী (সা.) বলেছেন, আমি দুই জাবিহ (ইসমাইল আ. ও আবদুল্লাহ)-এর সন্তান। সন্তান কোরবানির এ ঘটনাও একত্ববাদের আগমনের প্রতি ইঙ্গিত ছিল। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ৬৭)
৩. আসহাবে ফিল : হাবশার শাসক কর্তৃক নিযুক্ত ইয়েমেনের গভর্নর আবরাহা কাবাঘরের মক্কার প্রতি আরবদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দেখে ক্ষুব্ধ হয় এবং নিজ দেশে কাবার বিকল্প গির্জা তৈরি করে। কিন্তু আরবরা তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে। ফলে আবরাহা কাবাঘর ধ্বংস করতে উদ্যত হয়। ৬০ হাজার সৈন্যের বিশাল বাহিনী প্রস্তুত করে। এ বাহিনীতে হাতির সংখ্যা ছিল ৯ বা ১৩টি। বাহিনী মিনা ও মুজদালিফার মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছালে হাতিগুলো বসে যায়; কিন্তু আবরাহা যেকোনো মূল্যে মক্কায় পৌঁছাতে চাইল। এ সময় আল্লাহ নুড়ি পাথরসহ আবাবিলসদৃশ ছোট ছোট পাখি প্রেরণ করেন। পাখিগুলো সৈন্যদের গায়ে তা নিক্ষেপ করল। এতে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খসে খসে পড়তে লাগল। আবরাহাও পালিয়ে ইয়েমেনে পৌঁছানোর আগে মারা গেল। মহানবী (সা.)-এর জন্মের ৫০ বা ৫৫ দিন আগে এ ঘটনা ঘটে। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ৬৬; সিরাতে ইবনে হিশাম, পৃষ্ঠা ২৬)
পবিত্র কোরআনের সুরা ফিলে আল্লাহ হস্তী বাহিনীর ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়েছেন। আবরাহার বিরুদ্ধে পৌত্তলিক আরবদের ঐশী সাহায্য লাভের বিষয়টি আরব উপদ্বীপসহ প্রতিবেশী পারস্য সাম্রাজ্য ও রোমান সাম্রাজ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ধর্মবেত্তা ও জ্যোতিষ বিদ্যা চর্চাকারীরা নিশ্চিত হয়েছিল আরবের প্রতিশ্রুত নবীর আগমনের সময় হয়েছে।
৪. পারস্যের অগ্নিকু- নিভে যাওয়া : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আগমনের মুহূর্তে ভূমিকম্পে পারস্য রাজপ্রাসাদের ১৪টি চূড়া ধসে যায় এবং অগ্নিশালার অগ্নিকু- যা হাজার বছর ধরে অবিরাম প্রজ্বলিত ছিল তা নিভে যায়। এ ঘটনাকেও ঐতিহাসিকরা মহানবী (সা.)-এর আগমন ও পৌত্তলিকতার অবসানের প্রতি ইঙ্গিতবহ মনে করেন। (সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া, পৃষ্ঠা ১৭)
গ্রন্থনা : আতাউর রহমান খসরু।