শান্তিরঞ্জন ভৌমিক ।।
ব্রিটিশ
ভারতের দেশপ্রেমিক স্বাধীনতা সংগ্রামী কয়েকজনকে কুমিল্লার অভয় আশ্রমের
মাধ্যমে দেখবার ও পরিচিত হওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। মাতৃভূমির স্বাধীনতার
জন্য তাঁরা জীবনবাজী রেখেছেন, ইতিহাস-পাঠে জানি অনেকে আত্মত্যাগ করেছেন,
ব্রিটিশ সরকার অনেককে ফাঁসি দিয়েছে, দ্বীপান্তর দিয়েছে এবং বছরের পর বছর
কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বিনা বিচারে আট- কিয়ে রেখেছিল। তখনই কবির
ভাষায় উচ্চারিত হতো-‘বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে।’ সেসকল
স্বাধীনতাকামীদের সংসার ছিল না, ভালোবাসার ঠিকানা ছিল না, সুখযাপনের জন্য
কোনো নীড় ছিল না। স্বপ্ন ছিল স্বাধীন দেশের জন্য, স্বদেশবাসীর কল্যাণের
জন্য। আত্মসুখ কি, তা তাঁরা ভুলে গিয়েছিল। জীবনশেষে হিসাব মেলাতে গেলে আমরা
দেখি তাঁরা ইতিহাসের পাতায় চিরকালীন উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বল জ্বল করে
আমাদের হাতে একটি আলোকবর্তিকা ধরিয়ে দিয়ে গেছেন। আমরা প্রতিদিন প্রতিক্ষণে
কৃতজ্ঞতাবোধে মাথা পেতে জোড়হাত মুষ্টিবদ্ধ করে তাঁদের প্রণাম জানাই। সবচেয়ে
মজার কথা হলো-সেই সকল স্মরণীয়-বরণীয় শ্রদ্ধাবান ত্যাগী দেশপ্রেমিকগণ
পরিবার-পরিজনকে জাগতিক অর্থে কোনোকিছুই দিয়ে যেতে পারেননি, দেননি। পরিবার
পরিজন তাঁর নাম উচ্চারণ করে গর্ববোধ করলেও জীবনে কিছুই করে যেতে
পারেননি-এরূপ একটা আক্ষেপ পোষণ করে থাকেন। যে কথাটি সহজভাবে বলা যায়, তাহলো
এই সকল নমস্য ব্যক্তিবর্গ পরিবারের কাছ থেকে অবহেলা পেয়েছেন, অপাংক্তেয়
থেকেছেন।
তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে যদি কোনো দম্পতি একই ধারায় রাজনীতির
মহাসড়কে অভিন্ন পথ পরিক্রমা করেন বা করে থেকেছেন তাঁদের যাত্রাটা অন্যরকম। এ
প্রেক্ষিতে কুমিল্লার পূর্বাপর কতিপয় রাজনৈতিক দম্পতির কথা উল্লেখ করতে
চাই।
১. আমরা বসন্ত-হেমপ্রভার কথা শুনেছি। ব্রিটিশ ভারতে
কংগ্রেসকর্মী বা স্থানীয় নেতা-নেত্রী ছিলেন কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের
কাশিনগরের জমিদার পরিবারের স্বনামধন্য বসন্তকুমার মজুমদার ও হেমপ্রভা
চৌধুরী (মজুমদার)। বসন্তকুমার মজুমদার কুমিল্লা জেলায় যুগান্তর পার্টি
সংগঠনে অগ্রণী এবং একনিষ্ঠ কংগ্রেসসেবী ছিলেন। স্বামীর অনুপ্রেরণায়
হেমপ্রভা মজুমদার ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসে যোগদান করেন। তারপরের ইতিহাস
স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম-আন্দোলন-মানবকল্যাণে উৎসর্গিত জীবন-বন্ধনের
জয়গাথা।
২. কামিনীকুমার দত্ত ও মৃণালিনী দত্ত-এই দম্পতির কামিনীকুমার
দত্ত রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবেজড়িত থাকলেও সেভাবে মৃণালিনী দত্তকে আমরা
হয়ত জানি না। কিন্তু আমি নানাভাবে তথ্য সংগ্রহ করে জেনেছি-স্বামীকে রাজনীতি
পরিমন্ডলে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তাঁর নীরব সহযোগিতা ছিল অনুপ্রেরণামূলক।
বিশেষত চট্টগ্রামে ১৯৩০-৩৩ খ্রিস্টাব্দে মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে যে
অস্ত্রাগার লুণ্ঠন ও প্রত্যক্ষ যুদ্ধ হয়েছিলো, তখন সহযাত্রীরা আত্মগোপনে
গিয়েছিলেন। তন্মধ্যে অন্যতম সেনাধ্যক্ষ লোকনাথ বল পালিয়ে কুমিল্লায়
কামিনীকুমার দত্তের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। মৃণালিনী দত্ত ছাদের চিলেকোঠায়
পরিত্যক্ত জিনিসপত্রের মধ্যে তাঁকে লুকিয়ে রেখেছিলেন এবং পুত্র¯েœহে বেশ
কয়েকদিন আশ্রয় দিয়েছিলেন। লোকনাথ বল তাঁর আত্মজীবনীতে একথা লিখে গেছেন।
লক্ষণীয়, স্বামীর রাজনৈতিক কর্মকা-ে সহধর্মিণীর যদি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ
সহযোগিতা থাকে, তাহলে অভিযাত্রাটি হয় সুগম ও অনুপম।
৩. মৌলভী
আশরাফউদ্দিন আহমদ চৌধুরী জীবনের অধিকাংশ সময় ছিলেন ভারতীয় কংগ্রেস-নেতা।
তিনি ছিলেন প-িত নেহেরুর বিশ্বস্তবন্ধু। রাজনীতির বন্ধুর পথে অনেক
চড়াইউৎরাই ছিল তাঁর জীবনে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত চৌধুরী সাহেবের
বিশ্বাস ছিল বাংলা ভাগ হবে না। ভারত ভাগ হওয়ার পর রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায়
তিনি নিজেকে আর তেমনভাবে গোছাতে পারেননি। এই রাজনৈতিক নেতার সহধর্মিণী
রাজিয়া খাতুন চৌধুরাণী ছিলেন কবি ও গৃহিণী। কিন্তু স্বামীর রাজনৈতিক
আদর্শের প্রতি ছিলেন প্রচ- অনুরাগিণী। রাজনৈতিক কর্মকা-ে আশরাফ চৌধুরী যখন
গোপনে গ্রামে-গঞ্জে ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াতেন, বাড়িতে আসা ছিল অনেকটা নিষেধ,
তখন সহধর্মিণীর সঙ্গে চিঠিপত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ হতো। আমি রাজিয়া খাতুন
চৌধুরাণীর এরূপ অনুপ্রেরণামূলক স্বামীকে লেখা কয়েকটি চিঠি পড়ার সুযোগ পাই।
চিঠিগুলো পড়ে আমি মুগ্ধ ও বিমূঢ় হই। কতটা মানসিক শক্তি ও ত্যাগ থাকলে একজন
গৃহিণী স্বামীসোহাগিনী নারী নিজের প্রেম-ভালোবাসার আকাক্সক্ষাকে প্রদমিত
করে দেশের জন্য স্বামীকে সহযোগিতা ও সাহস জোগাতে পারেন-তা বর্তমানে কেউ
বিশ্বাস করতে চাইবেন না হয়ত।
৪. এই ধারাবাহিকতায় সমকালে আমার জানা
মতে কতিপয় রাজনৈতিক দম্পতির কথা জানি, যারা কতটা আদর্শের প্রতি নতজানু
ছিলেন। এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন যে আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নই।
সেজন্য যে আমার কোনো রাজনৈতিক দর্শন নেই, তা বলা যাবে না। আমি মনে করি,
প্রত্যেক সচেতন বিবেকবান ব্যক্তিই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দর্শন বা আদর্শের
অনুসারী, তা যে দলভুক্ত হতে হবে এমনটা ভাবা বাতুলতা।
অধ্যাপক মোজাফফর
আহমদের সহধর্মিণী আমেনা আহমেদ আমার এম,এ কাশের সহপাঠী। একটু বয়সের ব্যবধান
নিয়েই তাঁদের দাম্পত্যজীবন শুরু। আমেনা আহমদ ছাত্রী বয়সে ছাত্র ইউনিয়ন
করতেন, অন্য দশজন কর্মীর মতোই তাঁর অবস্থান ছিল। একসময় এই দম্পতি দীর্ঘপথের
কাফেলায় যাত্রা করলেন এবং ন্যাপ রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন।
ব্যবহারিক বা জাগতিক জীবনে তাঁরা কী পেলেন, কী পেলেন না-তার হিসাব মেলাবো
না। হিসাব মেলাবো রাজনৈতিক খেরোখাতায় কতবার তাঁদের নাম উচ্চারিত হয়েছে, এ
বিবেচনায়। রাজনীতিচর্চার ক্ষেত্রে আদর্শকে আঁকড়িয়ে থাকাটা অনেকসময়
চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখি। অধ্যাপক মোজাফফর আহমদকে একসময় ‘স্বাধীনতা পদক’
দেবার প্রস্তাব করে সরকার। তিনি তা গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি মনে
করতেন, স্বাধীন বাংলাদেশ যে মুক্তিযুদ্ধ চেতনায় ও আদর্শের ভিত্তিতে
প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তা
ভূলুষ্ঠিত হয়েছে, স্বাধীনতার মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলেছে। সুতরাং তাঁর যাপিত
আদর্শের বিপরীত ও পরিপন্থী পরিস্থিতিতে ‘স্বাধীনতা পদক’ কোনো ভাবেই গ্রহণ
করা অর্থবহ হতে পারে না। তিনি মূলত তা প্রত্যাখ্যানই করলেন। আদর্শের শক্তি
কতটা প্রবল, তা দেখেছি যখন খন্দকার মোশতাক আহমদ প্রেসিডেণ্ট হয়ে
কুমিল্লাবাসী হিসেবে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদকে মন্ত্রীত্বের পদ গ্রহণ করতে
চাপ সৃষ্টি করেছিল, তখন জাতীয় চার নেতা ছাড়া বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার প্রায়
সকলেই এক কাতারে জীবন বাঁচানোর জন্য শপথ নিয়েছিলেন। যেভাবেই হোক মোজাফফর
আহমদ মন্ত্রী হননি। অথচ আজ যখন তাঁর অনুসারীরা দলত্যাগ করে হালুয়া-রুটির
ভাগ বসাতে ব্যস্ত, তখন তাদের আদর্শের বিষয়টি সংগতকারণেই প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা
জানি- ব্যক্তি বা মানুষ মরে যায়, আদর্শের মৃত্যু হয় না। দলত্যাগীরা জীবিত
অবস্থায়ই জিন্দালাশ হয়ে যায়। এভাবে যখন কুমিল্লার রাজনৈতিক পরিম-লে
রাজনৈতিক দম্পতির অনুসন্ধান করি, তখন কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সমবয়সী আদর্শবান
বন্ধুদের খুঁজে পাই।
ক. সৈয়দ রেজাউর রহমান ও মমতাজ বেগম। (আওয়ামী লীগ)
খ. হাবিবুল্লা চৌধুরী ও মমতাজ বেগম। (জাসদ)
গ. জাকির হোসেন ও শারমিন কাদের। (ন্যাপ-মোজাফফর)
সৈয়দ
রেজাউর রহমান কলেজ-জীবনে আমার সহপাঠী এবং পরবর্তীতে রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায়
লেখাপড়া অর্থাৎ পরীক্ষা পাশের ধারাবাহিকতা নিয়মিত ছিলেন না। তিনি ছাত্রলীগ
করতেন, একসময় কুমিল্লার নেতৃত্বে চলে আসেন ও জাতীয় রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা
পান। ১৯৬১ সাল থেকে কুমিল্লা ভিক্টেরিয়া কলেজে সৈয়দ রেজাউল রহমান ও আফজল
খানের দাপট পদাচারণা দেখেছি। আমি বা আমরা যারা গ্রাম থেকে শুধুই পড়াশোনা
করতে এসেছি, আমরা ছিলাম নীরব-দর্শক। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের
অবদান-নেতৃত্ব-সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা ও মুজিব-আদর্শ যাপন সমবয়সী হলেও আমার
কাছে সম্মানিক অবস্থানে যাপিত ছিল। পরবর্তীতে কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের
অন্যতম কর্মশক্তিধর রাজনীতিক হিসেবে তাঁদের ভূমিকার কথা আমাদের জানা ও
দেখা। সৈয়দ রেজাউল রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে একসময় মাননীয় সংসদ সদস্য মমতাজ
বেগমকে বিয়ে করেন। মমতাজ বেগম তখন সরকারি কলেজের দর্শনশাস্ত্রের অধ্যাপিকা
এবং সংগ্রামী নেত্রী। অধ্যাপিকা হিসেবেই আমার সঙ্গে পরিচয় ঘটে। এই দম্পতিকে
দলীয় রাজনৈতিক হিসেবে জানলেও আমার সবসময় মনে হয়েছে, জাগতিক চাওয়া-পাওয়া
তাঁদের বিবেচনা ও প্রত্যাশায় অনুপস্থিত। অধ্যাপিকা মমতাজ বেগম এখন প্রয়াত,
বিপত্মীক সৈয়দ রেজাউর রহমান প্রখ্যাত আইনজীবী। ঐতিহাসিক ২০০৪ সালের ২১
অগাস্টের হামলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী (তখন বিরোধীদলের নেত্রী) শেখ
হাসিনাকে গ্রেনেড হামলায় হত্যা করার ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা করে ঐতিহাসিক
ভূমিকা পালন করে যে জাতিকে দায়মুক্ত করেছেন বন্ধু হিসেবে, কুমিল্লার কৃতী
সন্তান হিসেবে, একজন ত্যাগী আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে আমরা গৌরববোধ করি।
মোট কথা সৈয়দ রেজাউর রহমানকে ছাত্রাবস্থায় যেরূপ দেখেছি-তার যেন কোনো
উত্থানও নেই-পতনও নেই, আছে অর্জন।
হাবিবুল্লা চৌধুরী কলেজজীবনে আমার
সহপাঠী ছিলেন। মূলত তিনি আমার জ্যেষ্ঠ ছাত্র ছিলেন, রাজনীতির কারণেই একসময়
সহপাঠী, কিন্তু তেমনভাবে পরিচয় ছিল না। চাঁদপুর-হাজীগঞ্জের বলাখাল গ্রামের
জমিদার নন্দন আমার ঘনিষ্ঠবন্ধু খগেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর (করোনায় সদ্য
প্রয়াত) বদৌলতে পরিচিত হয়েছিলাম হাবিবুল্লা চৌধুরীর সঙ্গে। তারপর
কর্মক্ষেত্রে জীবনযাপনের তাগিদে আমি হারিয়ে যাই। কুমিল্লায় যখন পুরোপুরি
স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করি এবং নানা অঙ্গনের সমকালীন উজ্জ¦ল
ব্যক্তিদের কথা শুনতে শুরু করি, তখনই হাবিবুল্লা-মমতাজ বেগমকে আবিষ্কার
করি। এই আদর্শিক দম্পতির অভিযাত্রা-বন্ধুর পথে পরিক্রমার কথা জানতে পারি।
তাঁদেরও দেখেছি-জাগতিকভাবে চাওয়া-পাওয়া যেন তাঁরা ভুলে গিয়েছিলেন।
হাবিবুল্লা চৌধুরীকে শেষ বয়সে দেখেছি-দাপটে উচ্চকণ্ঠী আদর্শবাদী ও
প্রতিবাদী আপসহীন রাজনীতিক।
এই কাফেলায় ন্যাপ নেতা জাকির হোসেন
(সদ্য প্রয়াত) ব্যক্তি সম্পর্কে একটু জানাজানির কাছাকাছি ছিলাম। তিনি ছিলেন
অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি। তাঁর সহধর্মিণী শারমিন কাদেরকে প্রথমে ‘দৃষ্টি’
সংস্থার এনজিও ব্যক্তিত্ব হিসেবেই জানতাম। আরও জানতাম মহিলা কলেজের
(বেসরকারি) অধ্যাপিকা হিসেবে। পরবর্তীতে তাঁর ছাত্রজীবনের কথা যখন শুনেছি,
আদর্শিক অবস্থানের কথা জেনেছি, জাকির-শারমিন দম্পতির রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও
দায়বদ্ধতার কথা শুনেছি-দূর থেকে নীরবে শ্রদ্ধা যাপন করেছি।
শেষোক্ত
যে তিনদম্পতির কথা উল্লেখ করলাম- তাঁদের দৈহিক মেলবন্ধনে মুগ্ধকর চিত্রটি
ফুটে না উঠলেও রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি তাঁদের প্রত্যয়-অঙ্গীকার-জীবনযাপন ও
লোককল্যাণে অনেকটাই আত্মত্যাগ আমাদেরকে একটি নিখুঁত বার্তা দিয়ে গেছে। যদিও
এখন আর তাঁদের অনুসারী খুঁজে পাবো না-ব্যর্থ রাজনীতির খেলায় ব্যক্তির
উত্থান দেখে হতবাক হবো হয়ত, তাঁদের মতো শ্রদ্ধা-সম্মান কোনটাই এখনকার
রাজনীতিবিদগণ প্রত্যাশা করতে পারবেন না। তুলনাটা হলো-আমরা
বসন্তকুমার-হেমপ্রভা, কামিনীদত্ত-মৃণালিনী দত্ত, আশরাফ চৌধুরী-রাজিয়া
খাতুন-মোজাফফর আহমেদ-আমেনা আহমেদ, সৈয়দ রেজাউর রহমান-মমতাজ বেগম,
হাবিবুল্লা চৌধুরী-মমতাজ বেগম, জাকির হোসেন-শারমিন কাদের এবং এ ধারায়
পরিচিত যাঁরা, তাঁরা শুভ রাজনীতির পথ পরিক্রমায় কখনো হারিয়ে যাবেন না। আর
যাঁরা শুধুমাত্র নিজেদের বিত্তবৈভব বৃদ্ধির জন্য জীবনবাজী রেখে চলেছেন
তাঁরা ‘মরবেন তো পড়বেন’ এবং অল্পসময়েই মুছে যাবেন। রাজনীতিবিদগণ যখন থাকেন
না, তখনই জনগণ বেশি মাত্রায় তাঁদেরকে স্মরণ করে। জীবিতাবস্থায় যাঁরা বেশি
উল্লেখ্যযোগ্য হন, তাঁরা কীভাবে অবর্তমানে স্মরিত হবেন এটা পরের ব্যাপার।
ত্যাগেই মহিমা, তা মৃত্যুর পরও উজ্জ্বলতর হয়, হাবিবুল্লা চৌধুরী ও জাকির
হোসেনের নাগরিক শোকসভায় তা-ই উপলব্ধি করেছি। বার্তাটা হলো রাজনীতিচর্চার
ক্ষেত্রে দাম্পত্যজীবনের মেলবন্ধন বিষয়টি খুবই উপভোগ্য ও আদর্শ যাপনে
নির্ভুল পথ পরিক্রমা। যাঁদের কথা উল্লেখ করে এ লেখাটি, এ লেখার মাধ্যমেই
তাঁদের স্মৃতির প্রতি (সৈয়দ রেজাউর রহমান এখনও সৌভাগ্যক্রমে আমাদের মাঝে
আছেন) শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। ‘এ পথ যেন শেষ না হয়’ এটাই প্রত্যাশা।