ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
কুমিল্লায় জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে ইউনিয়নেও টিকাকেন্দ্র
Published : Tuesday, 23 March, 2021 at 12:00 AM
মাসুদ আলম।।
কুমিল্লায় সাধারণ মানুষের মাঝে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা গ্রহণের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। সেই সাথে কমে যাচ্ছে নিবন্ধনের হারও। এই অনাগ্রহের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছেই।  জেলায় এখনও প্রথম ডোজের প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজারের মতো টিকা প্রয়োগ বাকি রয়ে গেছে। প্রথম ডোজের বাকি টিকা চলতি মাসের মধ্যেই শেষ করতে হবে। হাতে সময় আছে মাত্র ৮-৯ দিন এই স্বল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে এত টিকা সাধারণ মানুষের মাঝে প্রয়োগ করা সম্ভব, তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে কুমিল্লা জেলা কোভিড-১৯ প্রতিরোধ কমিটি ও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।
কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মীর মোহাম্মদ মোবারক হোসাইন বলেন, ‘কুমিল্লার জন্য বরাদ্দকৃত টিকার মধ্যে এখনও বাকি প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টিকা স্বল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে সাধারণ মানুষের মাঝে প্রয়োগ করা যায়, তা নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে শুরু করেছি। জেলার ১৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ১৯টি টিকাকেন্দ্রের বাইরে এখন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা প্রয়োগের কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। গ্রামের সাধারণ মানুষ এখন আর উপজেলায় না এসে যার যার ইউনিয়নে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা নিতে পারছেন। সোমবার থেকে এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে কুমিল্লা জেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে। এছাড়াও শহরের মানুষকে টিকা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ।’   
এদিকে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে করোনাভাইরাস। বাড়ছে সংক্রমণের হার ও মৃত্যু। তাই আবারও সর্বস্তরে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে জোর দিচ্ছে সরকার। কিন্তু সরকারের দেয়া ১১টি নির্দেশনা মানা হচ্ছে না কুমিল্লার শহর থেকে গ্রামের বেশিরভাগ জায়গায়।
টিকা প্রয়োগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, কুমিল্লা জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর মোট শনাক্তের ৮০ শতাংশ মহানগরের বাসিন্দা হলেও গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষের টিকা নেওয়ার হার কম। আবার টিকা নেওয়ার েেত্র গ্রামে পুরুষ ও নারীর মধ্যে ব্যবধান খুব বেশি না থাকলেও শহরের নারীরা টিকা কিছুটা পিছিয়ে আছে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার (২২ মার্চ) পর্যন্ত কুমিল্লা জেলায় ১ লাখ ৬০ হাজার ৬৯০ জন টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১ লাখ ২৮ হাজার ৪২৯ জন টিকা নিয়েছেন জেলার ১৭টি উপজেলার টিকাকেন্দ্র থেকে। টিকা নেওয়া মানুষের মধ্যে ৯৭ হাজার ২৩৪ জন পুরুষ আর ৬৩ হাজার ৪৫৬ জন নারী। ১ লাখ ৬০ হাজার ৬৯০ জন টিকা গ্রহীতার মধ্যে কুমিল্লা মহানগর এলাকায় টিকা নিয়েছেন মাত্র ৩২ হাজার ২৬১ জন। তাদের মধ্যে ১৮ হাজার ২৪৮ জন পুরুষ  আর ১৪ হাজার ১৩ জন নারী।  
গতকাল কুমিল্লা মহানগর এলাকায় টিকা নিয়েছেন মাত্র ১৩১ জন।
১৫-২২ মার্চ এই ৭ দিনের টিকাদান কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই এক সপ্তাহে কুমিল্লা মহানগর এলাকার সদর হাসপাতাল টিকাকেন্দ্রে গড়ে প্রতিদিন মাত্র ২০০ জন করে টিকা নিয়েছেন।
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাইশগাঁও ইউনিয়নের কেয়ারী গ্রামের বাসিন্দা মায়া বেগম সোমবার টিকা নিয়েছেন। তিনি জানান, বাড়ি থেকে অনেক দূরের পথ মনোহরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে অন্যদেরকে টিকা নিতে শুনেছি। তাই আমার আগ্রহ ছিল না। আজকে যখন শুনেছি ইউনিয়নের পাশ^বর্তী মান্দারগাঁও বাজারে করোনা টিকা নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাই আজই টিকা নিয়েছি। আমার স্বামীও সঙ্গে টিকা নিতে এসেছেন। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় তিনি টিকা নিতে পারছেন না। এই মুহূর্তে যদি অন্য কোনো উপায়ে টিকা নেয়ার ব্যবস্থা করতো কর্তৃপক্ষ, তাহলে ভালো হতো।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাসিন্দা মোবারক হোসেন বলেন, ‘আমি এখনই করোনাভাইরাসের টিকা নেব না। দেখছি, আরও দেখবো টিকা নেওয়ার পর মানুষের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না, তারপর সিদ্ধান্ত নেবো।’
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মীর মোহাম্মদ মোবারক হোসাইন বলেন, বর্তমানে গ্রাম ও শহর দুই জায়গাতেই টিকা নেওয়ার প্রবণতা কিছুটা কমেছে। টিকার ইতিবাচক দিক নিয়ে স্থানীয়ভাবে প্রচার কম হওয়া, সাড়া না পড়া, কুসংস্কার, অগ্রাধিকার তালিকার কারণে সাধারণ মানুষ টিকা নিতে কম আসছে। তবে এখন ইউনিয়ন পর্যায়েও সাধারণ মানুষকে টিকা প্রয়োগের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।