টমেটো নিয়ে বিপাকে হাজারো কৃষক
Published : Tuesday, 23 March, 2021 at 12:00 AM
হিমাগার না থাকায় গাছেই পঁচে যাচ্ছে হাজার হাজার টন টমেটো----
রণবীর
ঘোষ কিংকর: চান্দিনার টমেটোর খ্যাতি রয়েছে দেশ জুড়ে। প্রতি শীত মৌসুমেই
চান্দিনা উপজেলার ৩ হাজারেরও বেশি কৃষক টমেটো চাষাবাদ করে আসছে। অনেক কৃষক
শুধুমাত্র টমেটো চাষ করেই সাবলম্বী হয়েছেন। কিন্তু এবার টমেটো নিয়ে বেশ
বেকায়দায় পড়েছেন এই উপজেলার কৃষক।
মৌসুমের শুরুতে চারা নিয়ে পড়েছিলেন
বিপদে। ঢালাও ভাবে জমিতে চারা মরে যাওয়ায় টমেটোর উৎপাদনে পিছয়ে পড়েছেন
অধিকাংশ কৃষক। দ্বিতীয় দফায় চারা রোপন করার পর আহবাওয়া অনুকূলে থাকায় জমিতে
টমেটোর বাম্পার ফলনে অধিক লাভবান হওয়ার স্বপ্ন বুনছিলেন কৃষক।
বিধিবাম!
বাজারে টমেটোর দরপতন হওয়ায় খরচ বাদে কেজি প্রতি ৫০ পয়সাও জুটছে না কৃষকদের
ভাগ্যে। একদিকে, হিমাগার না থাকায় এবং অপরদিকে টমেটোর দাম না থাকায় গাছ
থেকে টমেটো সংগ্রহ করছেন না কৃষক। জমিতেই পঁচে যাচ্ছে হাজার হাজার
মেট্রিকটন টমেটো।
চান্দিনা উপজেলার বাড়েরা ইউনিয়নের চিলোড়া ও পূর্ব
অম্বরপুর গ্রামের বিশাল মাঠ জুড়ে রয়েছে টমেটোর আবাদ। পুরো উপজেলার এক
তৃতীয়াংশ টমেটো চাষাবাদ হয় ওই মাঠে। রবিবার (২১ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা
যায়- অধিকাংশ জমির পাঁকা টমেটো লাল টুকটুকে হয়ে গাছ থেকে ঝড়ে পড়ছে। আবার
কোন কোন জমিতে কৃষক পরিচর্যা না করায় টমেটোসহ গাছ মরে যাচ্ছে।
উপজেলা
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে- এ বছর চান্দিনা উপজেলার ৬৪০ হেক্টর জমিতে
টমেটো চাষাবাদ করেছে কৃষক। যা গত বছরের চেয়ে ৫০ হেক্টর বেশি।
চিলোড়া
গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান- আমি গত বছর ৩৬ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করে
মোট ২ লক্ষ ৯ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। এ বছর মৌসুম প্রায় শেষ এখনও ৪০
হাজার টাকা বিক্রি করতে পারিনি। ওই জমিতে আমার প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ
হয়েছে। এখন প্রতি কেজি টমেটো ৩ টাকায় বিক্রি করতে হয় বিধায় জমি থেকে টমেটোও
সংগ্রহ করছি না। কারণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, জমি থেকে টমেটো সংগ্রহ করতে
যে টাকা খরচ হয় সেই লেবার খরচও উঠে আসে না। তাই অনেক কৃষক জমিতে পানি সেচ
করাও বন্ধ করে দিয়েছি।
একই গ্রামের কৃষক জহিরুল ইসলাম জানান- আমি প্রায়
এক একর জমিতে টমেটো চাষ করেছি। এ বছরে যে পরিমাণ লোকসান গুনতে হচ্ছে টমেটো
চাষের বয়সেও এতো লোকসান কখনও পাইনি। এক ক্যারেট টমেটো (২৫-২৮ কেজি) টমেটো
ঢাকার কারওয়ান বাজারে পাঠিয়ে বিক্রি করছি ৭০-৮০ টাকা। আর প্রতি ক্যারেট
ঢাকায় পাঠানো পর্যন্ত খরচই হয় ৬০ টাকা। হিসাব মতে কোন দিন কেজি প্রতি ৫০
পয়সা পাই আবার কোনদিন ১ টাকা পাই।
তিনি আরও জানান- এখন ৩ টাকা কেজি দরে
টমেটো বিক্রি হচ্ছে। মাত্র ২ মাস পর একই টমেটো বাজারে বিক্রি হবে ৮০-১০০
টাকা কেজি দরে। যেসব অঞ্চলে সবজির হিমাগার আছে ওইসব অঞ্চলের কৃষক এবং
আড়ৎদাররা টমেটো হিমাগারে রেখে অধিক মুনাফা অর্জন করবে। কিন্তু আমাদের
অঞ্চলের কৃষক ঘাম ঝড়িয়ে ফসম উৎপাদ করেও লাভের মুখ দেখছে না। আমাদের
চান্দিনায় প্রচুর পরিমান সবজি উৎপাদন হয়। সরকারি ভাবে এ অঞ্চলে একটি
হিমাগার থাকলে হয়তো ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারতো কৃষক।
এ ব্যাপারে উপজেলা
কৃষি অফিসার আরফিনা আক্তার জানান- মার্চের মাঝামাঝি থেকে প্রতিটি জমির
টমেটো দ্রুত পেঁকে পাওয়ার কারণে বেশি বেকায়দায় পড়েছে এ অঞ্চলের কৃষক। তবে এ
অঞ্চলে যদি একটি সবজি হিমাগার থাকতো তাহলে কৃষকরা তাদের ন্যায্য মূল্যে
সবজি বিক্রি করতে পারতো। সবজি হিমাগারের জন্য আমরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে
এবং সংস্থার কাছে মৌখিক ভাবে জানিয়েছি। কিন্তু কোন দপ্তর লিখিত ভাবে আবেদন
চায়নি।