বাংলাদেশের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা মোট মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর ৪১ শতাংশ। যা নেপালের চেয়েও কম। নেপালের ৫৩ শতাংশ মোবাইল ব্যবহারকারী স্মার্টফোন ব্যবহার করে। এই হার শ্রীলঙ্কায় ৬০, পাকিস্তানে ৫১ ও ভারতে ৬৯ শতাংশ।
সম্প্রতি জিএসএমএ (গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস অ্যাসোসিয়েশন) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর স্মার্টফোন ও ফোর-জি ব্যবহারের চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৫৯ শতাংশ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী এখনও ফিচার ফোন ব্যবহার করেন।
জিএসএমএ ইন্টেলিজেন্স বলছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯৫ শতাংশ ফোর-জি কাভারেজের আওতায় এসেছে। আর এই ফোর-জিতেই আশা দেখছেন দেশের মোবাইল ফোন নির্মাতারা।
বাংলাদেশের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর মধ্যে ৪৭ শতাংশ টুজি, ২৫ শতাংশ থ্রিজি ও ২৮ শতাংশ ব্যবহারকারী ফোর-জি ব্যবহার করেন। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে মোবাইল সংযোগের সংখ্যা ১৭ কোটির বেশি। ওদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির দেওয়া হিসাব মতে দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটি ২৭ লাখ ১৫ হাজার। এর মধ্যে ১০ কোটি ৩১ লাখ ৯৩ হাজার।
এদিকে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণফোন ও রবির শতভাগ মোবাইল টাওয়ার ফোরজির আওতায় এসেছে। বাংলালিংকের ৯২ শতাংশ টাওয়ার ফোরজি কাভারেজের আওতায় আছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ফোরজি স্মার্টফোন সেটের অপ্রতুলতার জন্য ফোর-জির প্রসার সেভাবে হচ্ছে না। দেশে ফোর-জি সেট তৈরি হচ্ছে এবং তা মোট ব্যবহারের হার কিছুটা বাড়াতে পেরেছে।
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, দেশের মোট চাহিদার ৮২ ভাগ মোবাইল ফোন এখন স্থানীয়ভাবে তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশ আমদানিকারক দেশ থেকে উৎপাদক, পরে রফতানিকারক দেশে রূপান্তর লাভ করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্থানীয়ভাবে তৈরি ফোন রফতানি হচ্ছে। তিনি আশাবাদী, এক সময় চাহিদার শতভাগ ফোন দেশেই তৈরি হবে।
জানা গেছে, দেশে মোবাইল তৈরি কারখানার লাইসেন্স নিয়েছে ১৪টি প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ লাইসেন্স পেয়েছে নকিয়া। আর কারখানা চালু হয়েছিল ১২টি। এরমধ্যে ৩-৪টি উৎপাদনে নেই। দেশে বর্তমানে চিপসেট ও মেমরি সংকট রয়েছে। বিশ্বব্যাপী মোবাইল যন্ত্রাংশের সাপ্লাই চেইনে বিশাল প্রভাব পড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোবাইল কারখানা বন্ধ হওয়ার পেছনে এগুলোও কারণ হতে পারে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া শহীদ বলেন, দেশে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ ফোরজি ফোন এখন স্থানীয়ভাবে তৈরি হচ্ছে। তবে করোনার কারণে যন্ত্রাংশ ও সাপ্লাই চেইনে সমস্যা হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে স্মার্ট ফোনের সংখ্যা সেভাবে বাড়ছে না। তবে আগের চেয়ে বিক্রি অনেক অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে তিনি উল্লেখ করতে চান গত দুই কোয়ার্টারকে। গত দুই কোয়ার্টারে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি আরও জানান, দেশে যে হাই-এন্ডের ফোন তৈরি হচ্ছে সেগুলো ফাইভ-জি সাপোর্টেড। ফাইভ-জি চালুর সময় হলে মোবাইল কারখানাগুলোতে ওই সেট তৈরি শুরু হয়ে যাবে। তিনি জানালেন, তার প্রতিষ্ঠানের (সিম্ফনি মোবাইল) কারখানায় ফাইভ-জি ফোন তৈরির সক্ষমতা রয়েছে। তিনি যেকোনও সময় ফাইভ-জি ফোন তৈরি করতে পারবেন।
জিএসএমএ ৪১ শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর কথা বললেও স্থানীয় উৎপাদকরা বলছেন, এর সংখ্যা খুব হলেও ৩২ থেকে ৩৪ শতাংশ হবে।
দেশে স্যামসাং মোবাইলের উৎপাদক প্রতিষ্ঠান এফডিএল গ্রুপের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে বলেন, আমাদের কারখানায় গত বছর আমরা কয়েকটি মডেলের ফাইভ-জি ফোন সেট তৈরি করেছি। হাই-এন্ডের সেট সেগুলো। ফাইভ-জিতে ফোর-জি ব্যবহার করার সুযোগ থাকায় ক্রেতারা সেটগুলো পছন্দ করেছেন।
তিনি জানান, দেশীয় কারখানাগুলোতে বর্তমানে যে পরিমাণ মোবাইল ফোন তৈরি হচ্ছে তার ১০ শতাংশেরও কম থ্রি-জি স্মার্টফোন, ফোর-জি তৈরি হচ্ছে ২৯ শতাংশের মতো। অবশিষ্ট ফোনগুলো ফিচার ফোন। তিনি আরও জানালেন, ফোর-জি ফোন তৈরির পরিমাণ বেড়েছে। দেশে ফোর-জির কাভারেজ বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রেতারা ফোর-জি মুখি হচ্ছেন। ফলে আমরা আশা দেখছি ফোর-জিতে। ফোর-জি স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ালে স্মার্ট ফোনের ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বাড়বে।