Published : Sunday, 18 April, 2021 at 12:00 AM, Update: 18.04.2021 12:46:16 AM
তানভীর দিপু:
লকডাউনের
মধ্যেও কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়ে কাজের জন্য প্রতিদিন সকালে ভিড়
জমাচ্ছেন দিন মজুররা। গ্রীষ্মকালীন সময়ে কৃষি কাজ কম থাকায় প্রন্তিক এই
জনগোষ্ঠী কাজের খোঁজে প্রতিদিনই আসে শহরে। রাজমিস্ত্রী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী
কিংবা নির্মানশ্রমিকের কাজেই তারা যান শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে করোনা
সংক্রমণ রোধে লকডাউনে সব বন্ধ থাকায় নিয়মিত কাজ পান না অনেকেই। কেউ আবার
অর্ধেক মূল্যেই যাচ্ছেন কাজে। একদিকে যেমন কাজের আকাল, অন্যদিকে লকডাউন-
এমন পরিস্থিতিতে অসহায় এসব মানুষ। এছাড়া সকাল ৮টার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
কড়াকড়িতে তারা শহরে দাঁড়াতে পারেন না কাজের জন্য।
শনিবার সকাল ৭টায়
নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায় অন্তত দুই শতাধিক দিনমজুর। বৃষ্টি
উপেক্ষা করেই কাজের সন্ধানে এসে দাঁিড়য়েছেন কান্দিরপাড়ের ফুটপাতে। শহরতলীর
আড়াইওড়া এলাকার বাসিন্দা আমান উল্যাহও এসেছেন কাজের সন্ধানে; লকডাউনের ৪
দিনে কাজ পেয়েছেন দুই দিন- বাকি ২দিন খালি হাতেই ফিরে গেছেন বাড়ি। আমান
উল্যাহ জানান, এই মৌসুমে এমনিতেই কাজ কম থাকে, তার উপর লকডাউন। জমানো টাকা
পয়সা নেই, সংসার কাজ না করলে বউ-বাচ্চা নিয়ে ৫ জনের সংসারে একবেলারও খাবার
জুটবে না।
ক্যামেরার ভয়ে পকেট থেকে ছেড়া মাস্ক বের করে নাকে উপর ধরে
সদর দক্ষিণ উপজেলার বাগমারা থেকে আসা নির্মান শ্রমিক নাহিদ জানান, পেটের
ক্ষুদার কাছে করোনার কোন দাম নাই। পেটে ক্ষুদা না থাকলে কে আসে করোনার
মধ্যে কাজ করতে। করোনার লকডাউনের কারনে বাসা বাড়ির কাজ সব জায়গাতেই বন্ধ।
কিন্তু চুলা তো বন্ধ থাকে না।
জেলার বাইরে থেকে আসা দিনমজুররা পড়েছেন
আরো বিপাকে। কাজ না থাকলেও যান চলাচল বন্ধ থাকায় বাড়িও ফিরতে পারছেন না
তারা। কাজ না থাকলে জমতে থাকে মেস ভাড়া আর খাবার খরচ। অনেকেই লকডাউনের
৪দিনে কাজ পেয়েছেন একদিন অথবা দুই দিন। কাজ না থাকলে কি দিয়ে চলবে
থাকা-খাওয়ার খরচ, আর কি ই বা পাঠাবেন বাড়িতে। এনিয়ে উভয় সংকটে আছেন জেলার
বাইরে থেকে আসা শ্রমিকরা।
চাপাইনবাবগঞ্জের রফিক আহমেদ জানান, কিছুদিন
আগেও কৃষিকাজ করেছি। এখনও ধান কাটার মৌসুমের ৫/৭ দিন বাকি। এর মধ্যে
লকডাউনে পরে গত ৪ দিনে ১ দিন কাজ পেয়েছি। এভাবে তো থাকা যাবে না, ভেবেছি
বাড়ি চলে যাবো- কিন্তু লকডাউনে পরিবহন বন্ধ থাকায় বাড়ি ফিরতেও পারছেন না
তারা। এবারের পর আবার যদি লকডাউন বাড়ায় তাহলে কি হবে এখনো বুঝতে পারছেন না।
রফিকের
সাথেই চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা পঞ্চাশোর্ধ মমতাজ মিয়া শুধু জানালেন, গত দুই
দিন দুই শ’ টাকা রোজ কাজে যাচ্ছি। অন্যসময় ৪শ’-৫শ’ টাকা পাওয়া যেত। আর
সকাল ৮টার পর তো শহরে দাঁড়াতেই দেয় না পুলিশ। কই যাবো আমরা।
এমন
দুরাবস্থার চিত্র নগরীতে কাজ খুঁজতে আসা অধিকাংশ দিনমজুরের। লকডাউনে
কাজকর্ম কমে যাওয়ায় জীবিকা নির্বাহে হিমশিম খাচ্ছেন এসব প্রান্তিক মানুষ।
গতবার করোনার শুরুতে সরকারি বেসরকারি ভাবে আর্থিক এবং খাদ্য সহযোগিতা পেলেও
এবার এখনো কোন সাহায্য পায়নি কেউ।