তানভীর দিপু:
ভালো
নেই পরিবহন শ্রমিকরা। বিশেষ করে পথে বসে গেছেন গণপরিবহন-বাসের সাথে
সংশ্লিষ্ট ষ্টাফরা। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দূরপাল্লার যাতায়াত বন্ধ
এবং সর্বাত্মক লকডাউনে পরে স্থবির হয়ে আছে এসব শ্রমিকদের রুটি-রুজির এক
মাত্র উপায় গণপরিবহন বাস। আন্তজেলা ও উপজেলা যোগাযোগের মাধ্যম বাসগুলো বন্ধ
থাকায় ২৩ দিনেরও বেশি সময় বেকার হয়ে আছে হাজার হাজার শ্রমিক। কুমিল্লার
শাসনগাছা, চকবাজার ও জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনালের প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক
কর্মহীন। অনেকে ছেড়েছেন এই পেশা। রিকশা, অটোরিকশা কিংবা সিএসজি চালাচ্ছেন
অনেকে। কেউ আবার দিন মজুর হিসেবে বেছে নিয়েছেন ঘরবাড়ি-কলকারখানার কাজ।
এদিকে হতাশাগ্রস্থ হয়ে কেউ কেউ মাদকসক্তও হয়ে পড়ছেন, কেউ আবার অন্যান্য
অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছেন বলে জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। অচল বাস ধোঁয়ামোছা
কিংবা মেরামতসহ সারাদিন বাসস্ট্যান্ডে কাটিয়েও কূল করতে পারছেন না আয়
রোজগারের। ঘরের রসদ নিতে পারছে না বলে অনেকেই দিন-রাত কাটাচ্ছেন
টার্মিনালে, রাত কাটাচ্ছেন বাসের ভেতর ঘুমিয়ে। গতকাল বিকালে কুমিল্লার
জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে- পরিবহন শ্রমিকদের হতাশ চিত্র।
জাঙ্গালিয়া
বাস টার্মিনালের কুমিল্লা সুপার বাসের ষ্টাফ মোঃ সোহেল জানান, কাজকর্ম
নেই-তারপরও বাসগুলোর মায়ায় টার্মিনালে ঘুরে বেড়াই-লুডো খেলি। কবে যে লকডাউন
ছাড়বে আর বাস চলবে- বাসায় গেলে বাচ্চা-কাচ্চারা এটা ওটা চায়, নিতে পারি
না। কখনো কখনো বাড়িও যেতে পারি না।
বলাকা পরিবহনের বাস চালক মিন্টু
জানান, অনেক আশা নিয়া টার্মিনালে এসে ঘুরে যাই। যদি বলে কাল থেকে বাস চলবে,
তাহলে তো আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। আর কত দিন বসে খাবো। জমানো টাকাও
শেষ হয়ে আসছে।
বোগদাদ পরিবহনের ষ্টাফ পাপ্পু জানান, বাস না চললেও মালিক
অল্প কিছু খোড়াকি দেয়। কিন্তু বাস চললে যে টাকা পেতাম-এখন তো তা পাই না।
আর এভাবে চলতে থাকলে কি করবো-এখনো জানি না। অন্যসব পরিবহনই চলে শুধু বাস
চলে না।
উপকূল বাসের স্টাফ তানভীর জানায়, গত ঈদে তো অল্প কিছুও টাকা
পয়সা পেয়েছি, এবার কি পাবো। বাস না চললে মালিকরাও বা কতক্ষণ দিবে। সরকার
যদি আমাদের দিকে একটু সুনজর দেয়।
মিনিবাস মালিক মোঃ ইমরান হোসেন জানান,
আমরা ছোট পরিবহন ব্যবসায়ী। ধারদেনা দেনা করে বাস চালাই। আমি আমার
শ্রমিকদের কিভাবে চালাবো আমি জানি না।
কুমিল্লা জেলার ৩টি শ্রমিক
ইউনিয়নের কাছ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রণোদনার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে
বলে জানিয়েছেন জেলা বাস মালিক সমিতির কার্যকরি সভাপতি মোঃ তাজুল ইসলাম।
তিনি জানান, বেশ কিছু পরিবহন মালিকরা তাদের শ্রমিকদের অর্থনৈতিক সহযোগিতার
যথাসাধ্য চেষ্টা করে আসছে। জেলা প্রশাসক বরাবর কুমিল্লা জেলার শ্রমিকদের
তালিকা দেয়া আছে। যদি সরকার প্রণোদনা দেয় আমরা যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে পাই।
বাংলাদেশ
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহ-সভাপতি অধ্যাপক কবির আহমেদ জানান, জানা মতে
কুমিল্লার সকল পরিবহন মালিকরা তাদের শ্রমিকদের করোনাকালীন লকডাউনের স্থবির
সময়ে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করে আসছে। তবে এভাবে টানা চলতে থাকলে বাস
মালিকদেরও অস্বচ্ছলতা চলে আসবে। এজন্য শ্রমিকরা সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি
চাচ্ছে- স্বাস্থ্যবিধি মেনে হলেও যেন বাস চলাচল করে। কিন্তু সব কিছুই
সরকারি সিদ্ধান্তের উপর, আমরা আশা করছি সরকার পরিবহন শ্রমিকদের কথা চিন্তা
করে একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিবেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান
জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক সহযোগিতা পরিবহন শ্রমিকরা এমনিতেই
পাবেন। তারপরও কারো যদি কোন সহযোগিতা প্রয়োজন হয় তারা যেন শ্রমিক সংগঠনের
মাধ্যমে জেলা প্রশাসনকে জানায়, তাহলে আমরা পরিবহন শ্রমিকদের সর্বোচ্চ
সহযোগিতা করবো। ইনশাআল্লাহ, কোন শ্রমিক না খেয়ে থাকবে না।