জাকাত আদায়ের খাতসমূহ
Published : Monday, 10 May, 2021 at 12:00 AM
মুফতি তাজুল ইসলাম ।।
জাকাত আদায়ের খাত সরাসরি কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই জাকাত ফকির, মিসকিন ও সেসব কর্মচারীর জন্য, যারা সদকা উশুলের কাজে নিয়োজিত এবং যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য। আর দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধ, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের (সাহায্যের) জন্য। এটা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৬০)
আলোচ্য আয়াতে আটটি খাতে জাকাতের অর্থ ব্যয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোরআনে উল্লিখিত আট ধরনের লোকদের মধ্যে এক প্রকার হলো, কাফির বা দুর্বল ঈমানের মুসলমানদের মনোরঞ্জনের জন্য জাকাত দেওয়া। হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনামলে ইসলামের বহুমুখী প্রসার, ইসলামী রাষ্ট্রের সম্প্রসারণ ও মুসলমানদের ব্যাপক শক্তি অর্জিত হওয়ার পর অমুসলিমদের জাকাত দেওয়ার বিধান রহিত হয়ে যায়। ওই সময়ে সব সাহাবায়ে কিরাম ওমর (রা.)-এর এই সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করেন। অবশিষ্ট সাত ধরনের লোক হলো :
এক. ফকির বা অভাবগ্রস্ত। হানাফি মাজহাব মতে, ফকির বলা হয় ওই ব্যক্তিকে, যার মালিকানায় জাকাতের নিসাব পরিমাণ সম্পদ নেই, যদিও ওই ব্যক্তি কর্মক্ষম ও কর্মরত হয়।
দুই. মিসকিন বা নিঃস্ব। মিসকিন বলা হয় ওই ব্যক্তিকে, যার মালিকানায় কোনো ধরনের সম্পদ নেই।
লক্ষণীয় যে নিজের মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি ফকির-মিসকিন হলেও তাদের জাকাত দেওয়া যাবে না। পক্ষান্তরে নিজের ভাই-বোন, চাচা, ফুফু, খালা, মামা, সত্মা, শ্বশুর-শাশুড়ি, জামাতা নিঃস্ব ও অভাবগ্রস্ত হলে তাদের জাকাত দেওয়া যাবে।
তিন. আমেল তথা জাকাতের অর্থ সংগ্রহকারী। ইসলামী সরকারের পক্ষ থেকে জাকাত সংগ্রহে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের আমেল বলা হয়। তাদের সংগৃহীত জাকাতের সম্পদ থেকে বিনিময় দেওয়া বৈধ। তবে বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জাকাত সংগ্রহে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কমিশন হারে জাকাত থেকে বিনিময় দেওয়া কোনোভাবেই শরিয়তসম্মত নয়।
চার. গোলাম বা দাস মুক্তির জন্য জাকাত দেওয়া। বর্তমানে এই খাতও বিদ্যমান নেই।
পাঁচ. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি। কোনো ব্যক্তি এই পরিমাণ ঋণগ্রস্ত হলে তাকে জাকাত দেওয়া যাবে, যার ঋণ আদায় করার পর তার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ অবশিষ্ট থাকে না।
ছয়. আল্লাহর রাস্তায় থাকা ব্যক্তি। যেসব মুসলমান আল্লাহর পথে রয়েছে, তাদের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ-সম্পদ না থাকলে তাদের জাকাত দেওয়া যাবে। বেশির ভাগ উলামায়ে কিরাম ও ইমামের মতে, ‘আল্লাহর রাস্তা’ বলতে এখানে আল্লাহর পথে যুদ্ধরত ব্যক্তিদের বোঝানো হয়েছে।
সাত. মুসাফির। কোনো ব্যক্তি যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও কোথাও সফরে এসে সম্পদশূন্য হয়ে পড়ে, তাহলে তাকে বাড়িতে পৌঁছার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জাকাত হিসেবে দেওয়া যাবে।
উল্লিখিত সব খাতে অথবা যেকোনো একটি খাতে জাকাত দিলে জাকাত আদায় হয়ে যাবে। এই খাতগুলো ছাড়া অন্য কোনো খাতে জাকাত দিলে জাকাত আদায় হবে না, সেটি যতই ভালো কাজ হোক না কেন। তাই মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, সেতু ইত্যাদি নির্মাণ এবং কোনো প্রকল্প, যেখানে কোনো ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়-এমন খাতে জাকাতের অর্থ ব্যয় করলে জাকাত আদায় হবে না। সেটি পুনরায় আদায় করতে হবে। কেননা জাকাত আদায় হওয়ার জন্য কোনো ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেওয়া অপরিহার্য। তবে মাদরাসায় এতিম, অসহায় ও দরিদ্র ছাত্রদের ভরণ-পোষণের জন্য জাকাত দেওয়া যাবে। স্মরণ রাখতে হবে, সমাজের দারিদ্র্যকে ঐশী নিয়মে সমূলে দূরীকরণই জাকাতের কাজ। সাময়িক অভাব পূরণের জন্য জাকাত নয়। সাময়িক অভাব পূরণের জন্য ইসলাম সদকা, ফিতরাসহ অন্যান্য দানের বিধান রেখেছে। তাই দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে পরিকল্পনা অনুযায়ী জাকাত দিতে হবে। জাকাত আদায়ের সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো যাকে জাকাত দেবে, তার মৌলিক অভাব পূরণ করে দিতে চেষ্টা করবে। তাকে যেন আর কারো কাছে হাত বাড়াতে না হয়।