করোনাকালে
বিপরীতমুখী অভিবাসনের প্রভাবে বাংলাদেশের মধ্যমমানের শহর, উপজেলা এবং
গ্রামীণ অঞ্চলে জনমিতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশের ওপর পরিবর্তনগুলো
তুলে ধরে ব্র্যাক, ইউএন উইমেন বাংলাদেশ ও নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির যৌথভাবে
পরিচালিত এক গবেষণায় যেসব তথ্য উঠে এসেছে, তা মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। ২০২০
সালের ১০ থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় হাজার ৩৭০টি খানায় পরিচালিত জরিপের
ফল বলছে, কভিড-১৯ মহামারিতে গত বছরের এপ্রিল-নভেম্বরে বাংলাদেশে
আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ অভিবাসীর প্রায় ৭৭ শতাংশ হন্যে হয়ে চাকরি
খুঁজেছে। ৬১ শতাংশ পরিবারের অন্তত একজন সদস্য কভিড-১৯ মহামারিতে চাকরি বা
উপার্জনের সুযোগ হারিয়েছেন। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে এসডিজি বাস্তবায়নে
নাগরিক প্ল্যাটফর্ম পরিচালিত এক জরিপে জানা যায়, করোনাভাইরাস মহামারিতে
দেশের প্রান্তিক পরিবারগুলোর ঋণের বোঝা বেড়েছে।
গত মার্চ ও এপ্রিলে
দেশের সাতটি বিভাগের অভিবাসনপ্রবণ ৩০ জেলায় ব্র্যাক পরিচালিত এক জরিপ থেকে
জানা যায়, বিদেশফেরতদের ৪৭ শতাংশের কোনো কাজ জোটেনি। ৫৩ শতাংশ কৃষিকাজ,
ছোটখাটো ব্যবসা বা শ্রমিক হিসেবে নিজেকে যুক্ত করে বর্তমানে পরিবার
চালাচ্ছে। আরেকটি বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২০
সালের ফেব্রুয়ারির তুলনায় এই বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ৫০ শতাংশ মানুষ
তাদের সঞ্চয় কমিয়েছে। এই সময়ে মানুষের আয় কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ। আবার
করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কায় কাজ হারানো শ্রমিকদের মধ্যে যাঁরা আবার
যোগদান করেছেন, তাঁদের ৯ শতাংশের বেতন কমেছে বলে এক জরিপে উঠে এসেছে।
দারিদ্র্য পরিস্থিতি নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড
পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড
ডেভেলপমেন্ট পরিচালিত জরিপ প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, মহামারির কারণে
দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়া মানুষের মধ্যে অনেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারলেও
দুই কোটি ৪৫ লাখ মানুষ এখনো দরিদ্রই থেকে গেছে। এ অবস্থায় আগামী বাজেট
দরিদ্র মানুষের জন্য নিবেদিত থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী।
বিষয়টি
আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহামারির ধাক্কা আমাদের অর্থনীতিতেও বড়
ধরনের আঘাত করেছে। এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে দ্রুত কর্মসংস্থানের
ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের অভ্যন্তরে শুধু নয়, বিদেশে জনশক্তি রপ্তানিতেও
গুরুত্ব দিতে হবে।