এবিএম
আতিকুর রহমান বাশার ঃ দেবীদ্বারের কৃষক মো. খোরশেদ আলম ‘ওয়ার্ল্ড
কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার মেসিন’ কিনে এখন বিপাকে। ইঞ্জিন, চেসেজ, চাকা, ঢুলি,
ব্লেড, বটম, ফিঙ্গার বেয়ারিং ও ক্যাম্পপ্লাস বেয়ারিং সহ বিভিন্ন পার্টস
নষ্ট হয়ে প্রায় এক বছর ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। আয় না থাকায় মেসিনটির গচ্ছা
এবং কিস্তির টাকা গুণতে হচ্ছে প্রতিদিন।
চলতি ধানকাটা মৌসুমের পূর্বে
মেসিনটি মেরামত করে দেয়ার কথা বললেও ক্রেতার সাথে বিক্রয় কোম্পানীর
চুক্তিনামার কোন শর্তরই মানা হচ্ছেনা, ওয়ারেন্টির গ্যারান্টি কার্যকর না
করেই কোম্পানী কিস্তির টাকা পরিশোধের তাগাদা চিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন ওই
কৃষক। শুরুতে বিভিন্ন ত্রুটি সমাধানে কোম্পানীর পক্ষ থেকে মিকানিক্স ছাড়া
যন্ত্রাংশ বা অন্য কোন সহযোগীতা দেয়নি। চলতি মৌসুমেও ইঞ্জিন এবং পাম্পের
সমস্যা ওয়ারেন্টি অনুযায়ী কোম্পানী মেরামত করে না দিলে তাকে পথে বসতে হবে
বলেও জানান তিনি।
কোম্পানীর শর্তানুযায়ী ৬০০ ঘন্টার মধ্যে সকল প্রকার
গ্যারান্টির ওয়ারেন্টি কার্যকর করা হবে। অথচ ৪০০ঘন্টা না যেতেই ত্রুটিজনিত
কারনে বিকল হয়ে পড়ে থাকা হার্ভেস্টার মেসিন’র কোন দায়ভার কোম্পানী নিতে
চাচ্ছেনা। প্রথম দিনই ট্রাক থেকে হার্ভেষ্টার মেসিনটি আনলোড করার সময় পড়ে
গিয়ে পুরো মেসিনটির সেইভ নষ্ট হয়ে যায়। সেই থেকে মেসিনে ব্লেড সংযোগ করলেও
তা বাঙ্গার কারনে টিকেনা, এ বিষয়ে কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা
বলেন, সমস্যা হলে আমরা দেখব, কিন্তু পরবর্তিতে ওই আশ^াসের আর কোন সহযোগীতা
পাইনি বলেও জানান ওই কৃষক।
কৃষক মো. খোরশেদ আলম জানান, কৃষিমন্ত্রনালয়
থেকে কৃষকদের উন্নয়নে ভর্তুকী প্রদান সহ ‘কম্বাইন হার্ভেস্টার মেসিন’
প্রদান করে। হারভেষ্টারগুলো কৃষিবিভাগের অনুমোদীত এসিআই, করোনা এবং মেটাল
কোম্পানীর ডিলারদের কাছ থেকে ক্রয় করতে হয়।
আমরা ভালো কোম্পানী চিনিনা,
তাই ওই নিয়মে আমি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামশের্^ এসিআই, করোনা বাদ দিয়ে
মেটাল কোম্পানীর একটি ‘কম্বাইন হার্ভেস্টার মেসিন’ ২০লক্ষ টাকায় ক্রয় করি।
এর মধ্যে ১৪ লক্ষ টাকা সরকারের কৃষি মন্ত্রনালয় ভর্তুকী দিয়েছে এবং বাকী ৬
লক্ষ টাকা আমাকে পরিশোধ করতে হবে। অল্পদিনেই মেসিনটির চাকা ফেটেগেছে,
ব্লেডগুলো অটমেটিক ভেঙ্গে পড়ছে। এছাড়াও বডির ঢাকনাগুলোও কোন ধরনের প্রেসার
ছাড়াই যেখানে সেখানে খসে খসে পড়ছে, রং তুলিতে নতুন দেখা গেলেও এ রিকন্ডিশন
গাড়িটির কোনধরনের টেম্পার নেই। এখন পুরো গাড়িটাই বদলাতে হবে।
ওই একই
কোম্পানীর ‘ওয়ার্ল্ড কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার মেসিন’ ক্রয় করা অপর কৃৃষক
আরশাদ হোসেন বলেন, দেবীদ্বারে মেটাল কোম্পানী ২টি কম্বাইন্ড হারভেস্টর
মেসিন এর ১টি আমি কিনেছি। কম্বাইন্ড হারভেস্টরের সুবিধা অনেক, সরকার থেকে
তিন ভাগের দুই ভাগেরও বেশী টাকা ভর্তুকী পাওয়া, একসাথে ধান কাটা, ধান মাড়াই
এবং বস্তাবন্ধি করা যায়। এছাড়াও শ্রমিকের অভাব পুরন, অল্প সময়ে, অর্ধেক
খরচে ধান কাটা যায়। আমি নিজেও মেটার কোম্পানীর মেসিন নিয়ে বিপাকে আছি। গত
এক বছরে নিরাপদে একদিনের জন্যও মেসিনটি চালাতে পারিনি। প্রতি দিনই মেসিন
চালু করার জন্য কোম্পানীর মেকানিক্স ডাকতে হয়েছে। তবে বিভিন্ন সময়ে মেরামতে
প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা কোম্পানী ভর্তুকী দিয়েছে।
ভালো কোম্পানীর ভালো মেসিন হলে কৃষক অল্পদিনেই মূল্য উঠিয়ে নিতে পারবে।
চট্রগ্রাম
বিভাগীয় জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, বিক্রয় কোম্পানীর সাথে
ক্রেতার গেরান্টি ওয়ারেন্টির শর্তানুযায়ী চুক্তি বাস্তবায়নে যদি কৃষক কোন
সেবা বঞ্চিত হন তাহলে সংশ্লিষ্ট কৃষক লিখিত আবেদন করতে পারেন, আমরা তদন্ত
সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব। তাছাড়া কৃষকতো লসে পড়ার কারনই নেই, এক ঘন্টায় এক
একর জমির ধান কাটাতে কৃষক (হারভেষ্টার মালিক) পাবে ৫ হাজার টাকা। দৈনিক
১০/১২ ঘন্টা ধান কাটতে পারবে। যারা ভর্তুকী ছাড়া ব্যাক্তিগত ভাবে কিনে নেন,
তাদের চেয়ে বেশী সমস্যা দেখা যায় ভর্তুকীসহ কিস্তিতে কেনা কৃষকদের, এ
বিষয়টাও খতিয়ে দেখা দরকার ।
উপজেলা কিষি কর্মকর্তা আব্দুর রৌফ বলেন,
কৃষিমন্ত্রনালয় থেকে কৃষকদের উন্নয়নে ভর্তুকী প্রদান সহ ‘কম্বাইন
হার্ভেস্টার মেসিন’ প্রদান করে। হারভেষ্টারগুলো কৃষিবিভাগের অনুমোদীত
এসিআই, করোনা এবং মেটাল বা অন্য কোন কোম্পানীর ডিলারদের কাছ থেকে ক্রয় করতে
হয়। ক্রেতা তার পছন্দের মেসিন যে কোম্পানী থেকে ক্রয় কবরেন, সে কোম্পানীর
সাথে তার চুক্তিপত্র হবে। আমরা শুধু ভর্তুকিটাই প্রদান করে থাকি। তার পরও
কৃষক মেসিন নিয়ে সমস্যায় পড়লে আমরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করতে
পারি।