ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
গুমোট উপকূলে ‘ইয়াস’ ভীতি
Published : Tuesday, 25 May, 2021 at 12:00 AM
বরগুনাসহ গোটা উপকূলে গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। দিনভর প্রচ- গরমে হাঁসফাঁস করছে জনজীবন। টানা এক সপ্তাহ ধরে উপকূলীয় এলাকায় তীব্র দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সিডর, আইলা, মহাসেন, ফণী ও আম্পান মোকাবিলার তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে উপকূলীয় বাসিন্দারা আবহাওয়ার এই গুমোট ভাবকে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের লক্ষ্মণ হিসেবেই দেখছেন। এতে তাদের মধ্যে শঙ্কাও বেড়ে গিয়েছে।
দক্ষিণ উপকূলে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অধিক তাপপ্রবাহ আর গুমোট আবহাওয়া মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অসহনীয় করে তুলেছে। মে মাসের এ অসহ্য তাপপ্রবাহ বাড়াচ্ছে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্ক। উপকূলের প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, মে মাসেই দেশের উপকূলে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়গুলো আঘাত হেনেছে। বড় বড় যত ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে, তার সপ্তাহখানেক আগে তাপমাত্রা অসহনীয় থাকে। এবারও সে রকমই প্রখর তাপ অনুভূত হচ্ছে। বরগুনাসহ গোটা উপকূলীয় এলাকায় দিনভর প্রখর তাপ ও সন্ধ্যার পর থেকে গুমোট ভাব থাকে।
রবিবার (২৩ মে) রাত নটার দিকে বরগুনায় বিদ্যুৎ চমকাতে শুরু করে। রাত ১০টার দিকে হালকা বাতাসের সঙ্গে বজ্রবৃষ্টি শুরু হয় এবং সোমবার ভোররাত পর্যন্ত হালকা ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে টিপটিপ বৃষ্টি ঝরতে থাকে।
গত এক সপ্তাহ ধরে উপকূলে সূর্যের প্রখর তেজ আর তীব্র দাবদাহে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। দিনের এ প্রখর খরতাপ অক্ষুণ্ণ থাকছে রাতেও।
বরিশাল আবহাওয়া বিভাগের তথ্য বলছে, রবিবার বরিশাল অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন ছিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি। ১৫ মে থেকে এ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রির নিচে নামেনি। তবে অনুভূত তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি। এ বছর বরিশাল অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল এপ্রিলে ৩৯ ডিগ্রি। তবে ওই সময় এত গরম অনুভূত হয়নি।
সোমবার (২৪ মে) দুপুরে বরগুনা শহরের কয়েকজন শ্রমজীবীর সঙ্গে কথা হয়। রিকশাচালক কালাম মিয়া (৫৫) বলেন, ‘বেইন্নাকালে রিকশা লইয়া বাইরাই, ১১টার পর আর রিকশা চালাইন্নার কোনও কায়দা (উপায়) তাহেনা, গরমের চোডে পরানডা বাইরাইয়া যাইত চায়’।
বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী এলাকা বরগুনার তালতলী উপজেলার মোমেপাড়া গ্রাম। এ গ্রামের বাসিন্দা রোস্তম আলীর বয়স পেরিয়েছে ৭৫ বছর। আবহাওয়ার অবস্থার বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, লক্ষ্মণ মোটেও ভালো নয়। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের আগে এমন অসহনীয় গরম দেখা গিয়েছিল। প্রতিটি ঝড়ের আগে তাপ বৃদ্ধি পায়।
এদিকে নতুন ঘূর্ণিঝড়ের কথা শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপকূলীয় এলাকার মানুষ। এখনও সংস্কার হয়নি ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ। মাঝেমধ্যে নদীতে সামান্য জোয়ারের পানি বাড়লেই অনেক এলাকার বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়। এমন পরিস্থিতির মধ্যে নতুন করে আবার ঘূর্ণিঝড় আসছে শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপকূলীয় এলাকার মানুষ। তারা বলছেন, আম্পানের পর কেবল কিছুটা গুছিয়ে উঠছিলেন। এরই মধ্যে আবার বড় কোনও ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে তাদের একেবারে নিঃস্ব করে দেবে।
বরগুনার নলটোনা ইউনিয়নের সাজিপাড়া এলাকার বাসিন্দা সেলিম শাহনেওয়াজ বলেন, ‘মোগো এই এলাকায় জন্মানোই মনে হয় পাপ, বচ্ছর ঘুরতে পারেনা এর মইদ্দে বড় বড় বইন্যা আয়। মোর বাড়িডা এক্কেরে গাঙ্গের পাড়ে, বইন্যা খবর হোনলেই পরানডা কাইপ্পা ওডে’।
উন্নয়ন সংগঠন অগ্রগামীর সভাপতি প্রভাতী মিত্র বলেন, বাঁধের যেসব জায়গায় আম্পানে ভেঙে গিয়েছিল সেসবের সংস্কার কাজ এখনও শেষ হয়নি। এখন যদি আম্পানের অর্ধেকের সমান জোয়ারের পানি ওঠে, তাহলে আম্পানের চেয়ে বড় কোনও দুর্যোগে পড়বে মানুষ। অনেকেই নিজেদের গুছিয়ে নিতে কাজ করছিলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কথা শুনে এখন সবাই কাজ বন্ধ রেখেছেন।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কাউছার আলম জানান, বরগুনার ৮০৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে বর্তমানে জেলার ৩৫টি পয়েন্টে প্রায় ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়টি মাথায় রেখে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। যাতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ব্যবস্থা নিতে পারি।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির উপ-পরিচালক কিশোর কুমার সরদার জানান, তাদের ৩৭২টি ইউনিটের ছয় হাজার ৩০০ জন স্বেচ্ছাসেবক ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। তাদের সঙ্গে রেডক্রিসেন্টের ১২৮ জন এবং স্থানীয় আরও এক হাজার ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ইয়াস মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বরগুনার ৬৪০টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। শুকনো খাবার ও প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রীসহ রেডক্রিসেন্ট, সিপিপি ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।