গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদে
পেশ হয়েছে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট। করোনার মধ্যেও বাজেটের
আকার হবে এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ ছয় লাখ তিন হাজার ৬২১ কোটি টাকা।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপির আকারও হবে সর্বোচ্চ দুই লাখ ২৫ হাজার
৩২৪ কোটি টাকা। দেশে উন্নয়নের যে গতি তৈরি হয়েছে, তাকে ধরে রাখতে হলে এবং
উত্তরোত্তর আরো এগিয়ে নিতে হলে বাজেটের পরিমাণ বাড়াতেই হবে। কিন্তু সমস্যা
হলো বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে। কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ে বাজেট বাস্তবায়নের গতি
এতটাই শ্লথ যে তা রীতিমতো লজ্জাকর। আবার সরকারের গৃহীত অনেক উন্নয়ন প্রকল্প
বাস্তবায়নের গতিও আশানুরূপ নয়। এসব ক্ষেত্রে আন্ত মন্ত্রণালয় সমন্বয়হীনতা
যেমন দায়ী, তেমনি দায়ী অদক্ষতাও।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবারই
প্রকল্প বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার তাগিদ দিয়ে আসছেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী
বলেছেন, কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না পেলে এখন থেকে তাদের ‘মৌনতা সম্মতির লক্ষণ’
হিসেবে ধরে নিয়ে প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী
এম এ মান্নান জানান, প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনাকে দ্রুত আইনি কাঠামোর
মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে। অর্থাৎ এর পর থেকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে
পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র দিতে ব্যর্থ হলে ছাড়পত্র ছাড়াই প্রকল্পের কাজ
এগিয়ে যাবে।
অর্থনৈতিকভাবে দেশ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। সত্তরের দশকে মার্কিন
কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জার সদ্যঃস্বাধীন এই দেশকে ব্যঙ্গ করে ‘বটমলেস
বাস্কেট’ আখ্যা দিয়েছিলেন। সেই মার্কিন মুলুকের প্রেসিডেন্টসহ অনেক
বিশ্বনেতাই আজ এই দেশকে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ আখ্যা দিচ্ছেন। ১৯৭১ সালে এ
দেশে মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ১২৯ ডলার, বর্তমানে তা দুই হাজার ২২৭ ডলার।
১৯৭১ সালে দেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত ৮০ শতাংশ মানুষ। আজ সেই সংখ্যা
নেমে এসেছে ২০ শতাংশে। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে দেশে বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৭৮৬
কোটি টাকা। এখন বাজেট প্রস্তাব করা হচ্ছে ছয় লক্ষ কোটি টাকা। এই অগ্রগতির
প্রায় পুরোটাই হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য
কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের কারণে এই সত্যটি
আজ দেশে-বিদেশে সমানভাবে স্বীকৃত। একই সঙ্গে এটিও স্বীকার করা হয়, ১৯৭৫
সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ক্ষমতায় না এলে
দেশ এত দিনে আরো অনেক দূর এগিয়ে যেত।
এখন আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পালা।
এখানে ভুল করার বা বদান্যতা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। বাজেট বাস্তবায়নের
প্রধান দায়িত্ব প্রশাসন তথা আমলাতন্ত্রের ওপর। সেই প্রশাসনের দক্ষতা বাড়াতে
হবে। জানা যায়, কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ে চলতি অর্থবছরের শেষ মাসে এসেও বাজেট
বাস্তবায়নের হার মাত্র ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের মতো। এমন হলে বড় বাজেট করেও লাভ
হবে না। বাজেট প্রণয়নের পাশাপাশি আমাদের বাজেট বাস্তবায়নের ওপর আরো বেশি
জোর দিতে হবে।