কানাডার একটি পরিত্যক্ত আবাসিক স্কুলে ২১৫ জন আদিবাসী শিশুর গণকবর খুঁজে পাওয়া গেছে। ওই স্কুলের মতো আরো গণকবর থাকতে পারে এমন আশঙ্কায় সারা দেশে অনুসন্ধান শুরুর দাবি জানিয়েছে আদিবাসী সংগঠনগুলো।
কানাডার পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ব্রিটিশ কলম্বিয়ার কামলুপস ইন্ডিয়ান রেসিডেনশিয়াল স্কুল ১৯৭৮ সালে বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাওয়া ওই স্কুল নিয়ে এখন সে দেশের সরকার বিব্রত।
গত সপ্তাহে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সেকয়ে পেম্ক আদিবাসী জাতি পরিত্যক্ত স্কুলটিতে গণকবর খুঁজে পাওয়ার কথা জানায়। নিহত শিশুদের মধ্যে কারো কারো বয়স চার বছরেরও নীচে। ১৮৩১ সাল থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে কানাডার কমপক্ষে দেড় লাখ আদিবাসী শিশুকে আবাসিক স্কুলে পড়তে বাধ্য করা হয়।
আবাসিক স্কুলে পড়তে যাওয়া আদিবাসী শিশুদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চলতো। সেখানে খাওয়া-দাওয়ার সুব্যবস্থা না থাকায় অনেক শিশু অপুষ্টিতে ভুগতো। এছাড়া নির্যাতন, এমনকি ধর্ষণের শিকারও হতো অনেকে। ২০১৫ সালে ‘সাংস্কৃতিক গণহত্যা’ শিরোনামে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন। আবাসিক স্কুলগুলোতে শিশুদের ওপর চালানো নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে সেই প্রতিবেদনে।
কানাডার কেন্দ্রীয় সরকার খুব তাড়াতাড়ি আদিবাসী কমিউনিটিকে আগের অঙ্গিকার অনুযায়ী অর্থ ছাড় দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান চালানোর জন্য আদিবাসী কমিউনিটির পক্ষ থেকে এ অর্থ দাবি করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে তিন কোটি ৩৮ লাখ কানাডীয় ডলার, অর্থাৎ দুই কোটি ৮১ লাখ মার্কিন ডলার দেয়ার আশ্বাস দিলেও এখনো দুই কোটি ৭১ লাখ কানাডীয় ডলার দেয়া হয়নি।
কানাডায় আদিবাসী শিশুদের জন্য চালু করা আবাসিক স্কুল ব্যবস্থার অন্যতম স্থপতি এগার্টন রায়ারসন। ২১৫ জন আদিবাসী স্কুল শিক্ষার্থীর গণকবর খুঁজে পাওয়ার পর তার ভাস্কর্যে লাল রং লেপে দেন বিক্ষুব্ধরা। এছাড়াও গণকবরে শুয়ে থাকা ২১৫ শিশুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে স্কুলের সামনে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পীরা।
গণকবর উদ্ধারের খবরে শোক প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের মুখপাত্র মার্তা মুর্তাদো কানাডায় এমন আরো গণকবর অনুসন্ধানের উদ্যোগে সহায়তার জন্য আগের অঙ্গীকারের চেয়ে দিগুণ প্রণোদনা দেয়ারও আহ্বান জানান।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, এ ঘটনা বড় বেদনাদায়কভাবে আমাদের লজ্জাজনক এক অধ্যায়ের স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে।