করোনার প্রকোপ কমছে না।
প্রবেশ করছে নতুন নতুন ভেরিয়েন্ট বা ধরন। তা সত্ত্বেও মাস্ক পরা, হাত ধোয়া
বা সামাজিক দূরত্ব রক্ষার মতো স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এর কারণ,
মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব। লকডাউন কিংবা গণপরিবহন বন্ধ করেও তাদের চলাচল
আটকানো যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, লকডাউনসহ গৃহীত
ব্যবস্থাদি চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দ্রুত মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে।
কিন্তু ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় আমাদের টিকার সরবরাহ বন্ধ হয়ে
গেছে। সৃষ্টি হয়েছে টিকার সংকট। এই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার জাতীয় সংসদে এক
প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নতুন করে
করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহের পাশাপাশি দেশেও টিকা উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া
হয়েছে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশ ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা
চলছে।
ভারতে করোনা মহামারি ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। এর জন্য প্রধানত দায়ী
ভারতীয় যে ধরনটি তা এরই মধ্যে বাংলাদেশেও প্রবেশ করেছে। সীমান্ত এলাকায়
করোনার প্রকোপ অনেক বেড়েছে। কয়েকটি জেলা ও উপজেলায় লকডাউন দেওয়া হয়েছে। এ
অবস্থায় দেশে যেখানে ব্যাপক আকারে টিকা দেওয়া প্রয়োজন ছিল, সেখানে টিকাদান
কর্মসূচি প্রায় থমকে গেছে। চীন যে পাঁচ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে দিয়েছিল
তা দিয়ে খুব ধীরগতিতে চলছে টিকাদান। জাতিসংঘের উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে এসেছে
আরো এক লাখ ডোজ টিকা। অথচ এখন প্রয়োজন ছিল দিনে কয়েক লাখ ডোজ করে টিকাদান।
টিকার এই সংকট দ্রুত কাটিয়ে ওঠা প্রয়োজন। একই সঙ্গে প্রয়োজন এই সংকট তৈরির
কারণ অনুসন্ধান ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। টিকার যে এমন
সংকট হতে পারে তা আগেই বিভিন্ন মহল থেকে বলা হয়েছিল এবং অন্যান্য উৎস থেকে
টিকা সংগ্রহের তাগিদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
বিষয়টি আমলে নেয়নি; এমনকি টিকাচুক্তির প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করার অভিযোগও
রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। জাতিকে এখন এসবের মূল্য দিতে হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী
জাতীয় সংসদকে যা যা বলেছেন, করোনা প্রতিরোধে সেগুলোই হওয়া উচিত এই
মুহূর্তের জরুরি পদক্ষেপ। তিনি জানিয়েছেন, সরকার চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা
সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। চীনের সিনোফার্ম থেকে টিকা কেনার বিষয়টি
মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদনও করা হয়েছে। জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রতি মাসে
৫০ লাখ করে টিকা চীন থেকে পাওয়া যাবে। চীনের সিনোভ্যাক, রাশিয়ার স্পুনিকসহ
অন্যান্য উৎস থেকে আরো টিকা আনার প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে হবে। একই সঙ্গে
দেশে টিকা উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের ১০ কোটি
মানুষকে টিকা দিতে হলেও ২০ কোটি ডোজ টিকা লাগবে। বিশ্বব্যাপী টিকার সংকট
আছে এবং নিকট ভবিষ্যতেও থাকবে। সে ক্ষেত্রে দেশে টিকা উৎপাদন দ্রুততর করা
গেলে আমাদের সামনে টিকা রপ্তানিরও সুযোগ থাকবে।