ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
টিকা বিতরণে সমতা বিন্যাস করা দরকার
Published : Saturday, 5 June, 2021 at 12:00 AM
লরা স্পিনি ||
মহামারি কি একটা না দুইটা? এ প্রশ্নটিই এক বছর আগে জিজ্ঞেস করা হতো, যখন ধনী দেশগুলোতে, যেগুলোতে বিশ্ব জনসংখ্যার মাত্র ১৫ শতাংশ বাস করে, কিন্তু কভিডে মৃত্যুর ৮০ শতাংশ সেসব দেশে ঘটেছে। এমনটা কি ভাবা যেতে পারে যে ধনী বিশ্ব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল অথবা কোনো না কোনোভাবে ধনী বিশ্বের অধিবাসীরা বয়স্ক ছিল বা বেশি ব্যক্তিকেন্দ্রিক ছিল অথবা ছোঁয়াচে রোগকে ভয় পাওয়া কি তারা ভুলে গিয়েছিল?
তার পরও কেউ কেউ সতর্কবাণী উচ্চারণ করছিলেন যে সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতি এখনো আসতে বাকি যদি একবার রোগটি দরিদ্র দেশগুলোতে আস্তানা গাড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ বিশ্বব্যাংকের বিশ্লেষক ফিলিপ শেল্লেকেনস ও ডিয়েগো সরৌল উন্নয়নশীল বিশ্বে রোগটির ব্যাপক স্থানান্তর হতে পারে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। জনমিতির পরিভাষায় তাঁরা বলেছিলেন, করোনায় মৃত্যুর ৭০ শতাংশ ওই দেশগুলোতে ঘটতে পারে এ কথা ভেবে নেওয়া যায়। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, যা বলা হয়েছে তার ৫০ শতাংশের বেশি কিছু মৃত্যুর ঘটনা সেখানে ঘটেছে। সম্ভবত এর কারণ এসংক্রান্ত ডাটা আন্ডারএস্টিমেট করা হয়েছে এবং মহামারি এখনো শেষ হয়ে যায়নি।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সংক্রমণের বাড়তি হার দেখা দিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায় এর বড় একটা অংশই ঘটেছে ভারতে এবং ভূমধ্যসাগরের পূর্বাংশে ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে; লাতিন আমেরিকায়ও পরিস্থিতি খুব খারাপ। যেসব লোক কাজের সন্ধানে ব্রাজিলে অভিবাসন করেছিল, গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে, এখন সেসব অভিবাসী এই মানবিক সংকট থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাইছে।
অনেক ধনী দেশেই এখনো সংক্রমণ হার উঁচুতে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বেশির ভাগ এলাকায়; কিন্তু টিকার বিতরণ যখন হচ্ছে তখন অনেকেই অনুভব করছেন সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিটা এখনো আসতে বাকি। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজ্য আগুপিছু বিবেচনা না করেই ‘মাস্ক ম্যান্ডেট’ তুলে দিয়েছে। ব্রিটিশ সরকার সবচেয়ে আশাবাদী সংকেত দিয়েছে এ মাসেই যখন পাব (মদের দোকান) আবার খুলে দেওয়া হবে তখন মাস্কের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
আবার আপনাকে প্রশ্ন করার জন্য ক্ষমা করেও দেওয়া হতে পারে। প্রশ্নটা হলো : মহামারি কি একটা না দুইটা? এখন এ প্রশ্নের সম্পূর্ণ ভিন্ন এক অর্থ দাঁড়িয়েছে। বাস্তবত, একটাই মহামারি আছে। আমরা এর সম্পর্কে ভাবার প্রবণতা দেখাই জাতীয় পর্যায়ে কী প্রতিক্রিয়া ঘটল ও কেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে তার নিরিখে; এটা বেস্ট আঞ্চলিকতার পরিপ্রেক্ষিতে। কিন্তু কোনো বোধ তৈরি করতে হলে আপনাকে একটু পিছু হটতে হবে এবং মহামারির বিষয়টি বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে দেখতে হবে। ভাইরাসটির সব ধরনের পিকিউলিয়ারিটি সত্ত্বেও কভিড তার মতোই থাকবে অন্তত একভাবে : ইতিহাসজুড়ে যত মহামারি হয়েছে তাদের মতোই এটা প্রচ- আঘাত হানবে দরিদ্রদের ওপর।
কোন অবস্থানে আপনি দাঁড়িয়ে আছেন তার ওপর বিষয়টা নির্ভর করে, অবশ্যই খুশি হওয়ার প্রকৃত কারণ রয়েছে। টিকাগুলো এ রোগ অবসানের ক্ষেত্রে কার্যকর এবং প্রমাণ রয়েছে যে টিকাগুলো কভিডের বিস্তারও কমায়। কিন্তু এসবের বিতরণ হচ্ছে চরম অসমভাবে। এখন পর্যন্ত এক-চতুর্থাংশ মার্কিন নাগরিক পুরোপুরি টিকা নিয়েছে, তুলনা করলে ঘানার ২ শতাংশ লোকেরও কম টিকা নিয়েছে। একজন ইসরায়েলি একটা টিকা ডোজ নেওয়ার ক্ষেত্রে একজন ফিলিস্তিনির চেয়ে ২০ গুণ বেশি সম্ভাবনা ধারণ করে; অনেক দেশ রয়েছে যারা এখনো কোনো টিকা চালু করতেই পারেনি।
দেশগুলোর নিজেদের ভেতরেও টিকা বিতরণে অসমতা আছে। অংশত এর কারণ টিকা নেওয়ার বিষয়ে দ্বিধা (ভ্যাকসিন হেসিটেন্সি)। মার্কিন স্বাস্থ্যকর্মীদের বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ের এক জরিপে দেখা গেছে, ৪৮ শতাংশকে এখনো টিকা দিতে হবে, ১৪ শতাংশ ইচ্ছাই প্রকাশ করেনি। অংশত এর কারণ স্থানীয়ভাবে তারা কভিডে কম মৃত্যু দেখেছে। হংকংয়ের লোকেরা টিকা-ক্লিনিক থেকে দূরে দূরে থাকছে; এটা তথাকথিত ‘প্রিভেনশন প্যারাডক্স’-এর ম্যানিফেস্টেশন।
করোনা সংক্রমণে এবং মৃত্যুতে সাম্প্রতিক সময়ে যে বৃদ্ধি ঘটেছে অংশত তার কারণ নতুন ভেরিয়েন্টের বিস্তৃতি। এগুলো আদি জাতের ভাইরাসের চেয়ে বেশি সংক্রামক এবং কিছু জাত খুবই ভয়ংকর। আশান্বিত হওয়ার ভালো কারণ রয়েছে যে টিকা এ জাতগুলোর বিরুদ্ধেও কাজ করবে অথবা টিকাগুলোকে এ কাজের জন্য আপডেট করা হবে। কিন্তু ইত্যবসরে ভেরিয়েন্টগুলো—টিকার ধীর বিতরণের কারণে—ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে একেবারে ভেঙে পড়ার মুখে এনে দাঁড় করাচ্ছে।
এখন যা দরকার তা হলো টিকার সুষ্ঠু বিতরণ, চিকিৎসাসামগ্রী, বিশেষ করে অক্সিজেন রোগীদের জন্য এখন খুব জরুরি, এসবের সরবরাহ বাড়াতে হবে। ‘ভ্যাকসিন ন্যাশনালিজম’ ত্যাগ করতে হবে। আমরা আশা করি, ২০২১ সালে কভিডে মৃত্যু ২০২০ সালে কভিডে মৃত্যুর হিসাবকে ছাড়িয়ে যাবে না।

লেখক : বিজ্ঞানবিষয়ক সাংবাদিক, লেখক