তানভীর দিপু:
ভারতীয়
করোনা ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টা নিয়ে সতর্কতা জানিয়েছেন কুমিল্লার
বিশিষ্ট চিকিৎসকেরা। প্রথম ঢেউয়ের মতো করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায়ও
সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং চিকিৎসা সহযোগিতা দাবি করেছেন তারা। গত
বৃহস্পতিবার একটি অনলাইন সেমিনারে মহামারি ও জনস্বাস্থ্যবিদ, কুমিল্লা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিএমএ-স্বাচিপের সদস্য বিশিষ্ট চিকিৎসকগণ জানান,
করোনা মোকাবেলা নিয়ে কুমিল্লার যে সফলতা তা ধরে রাখতে বর্তমানে সংক্রমণের
যে নিম্নমুখীতা আছে তা ধরে রাখতে হবে। এছাড়া বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার
অব্যাহত রাখতে জেলাপ্রশাসনের মোবাইল কোর্ট চালু রাখতে হবে। করোনা চিকিৎসায়
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরো একটি অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনসহ
সেখানে ‘ব্যাকআপ’ অক্সিজেনের সঞ্চালন ব্যবস্থা শীঘ্রই করতে হবে। এছাড়া
কুমিল্লায় আরো একটি পিসিআর ল্যাব প্রয়োজন এবং শীঘ্রই করোনা নিয়ন্ত্রন ও
পরীক্ষার জন্য জনবল বাড়ানো প্রয়োজন। এছাড়া সেমিনারে করোনা চিকিৎসায় কর্মরত-
প্রাণ হারানো চিকিৎসকদের জন্য প্রনোদনার দাবি করা হয়।
অনুষ্ঠানে
প্রধান অতিথি ছিলেন কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব
আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধামন্ত্রীর ব্যাক্তিগত
চিকিৎসক একুশে পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ। ওয়েবিনারের সমাপনী
বক্তব্যে ডা. আবদুল্লাহ জানান, করোনা নিয়ন্ত্রনে কুমিল্লার দাবিগুলো
সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে জানানো হবে। মহামারিকালে কুমিল্লার চিকিৎসকদের যে
সফল কর্মযজ্ঞ তা অব্যাহত রাখারও আহ্বান জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞ হিসেবে
আলোচনায় রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী কুমিল্লার
করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরে জানান, আমাদের জেলায় এখন সংক্রমণ নিম্নমুখী। এটা
একদিকে যেমন ভালো-তেমনি এটাও খেয়াল রাখতে হবে যেন এই বিষয়টি যেন ‘সাপের লেজ
ধরে ফেলা’র মত না হয় যেন তা আবার উর্দ্ধমুখী সংক্রমণের শুরু হিসেবে
প্রতিফলিত না হয়। তাই এই নিম্নমুখী হার অব্যাহত রাখতে হবে। এজন্য একটি
যোগ্য টীম ওয়ার্কের প্রয়োজন। কনটাক্ট ট্রেসিং করার জন্য আলাদা টীম,
জেলাপর্যায়ে এপিডেমোলজি অফিস, নিয়মিত জিনোম সিকোয়েন্সিং এবং
সরকারি-বেসরকারি ডাটা শেয়ারিং করা প্রয়োজন।
করোনা ও ব্ল্যাক ফাংগাস
নিয়ে আলোচনায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও
করোনা ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. রেজাউল করিম জানান, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ও
ব্ল্যাক ফাংগাস মোকাবেলায় কুমিল্লার সক্ষমতা আছে। কুমিল্লার চিকিৎসকরা
প্রস্তুত আছে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এর ডায়গনোসিস সম্ভব। কিন্তু
কুমেক হাসপাতালে প্যাথলজি বিভাগে জরুরি ভিত্তিতে একজন টেকনোলজিষ্ট
প্রয়োজন।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোঃ মহিউদ্দিন
জানান, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ কুমিল্লার সকল চিকিৎসকরা করোনা
মোকাবেলায় প্রশংসার দাবিদার। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের করোনা ইউনিটে
প্রতিদিনই ধারনক্ষমতার বেশি রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কুমিল্লা ছাড়াও
আশেপাশের জেলা থেকে এখানে রোগীরা আসেন চিকিৎসা নিতে। প্রতিনিয়ত এখানে যে
পরিমান অক্সিজেন দরকার হয় এজন্য এখানে একটি আলাদা অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন
জরুরী। এছাড়া ব্যাকআপ অক্সিজেন সরবরাহ রাখার ব্যবস্থা করা জরুরী- না হয় কোন
কারণে অক্সিজেন সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটলে অপূরনীয় ক্ষতি হবে।
কুমিল্লা
মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল আজাদ দাবি করেন, পিসিআর ল্যাবে যেন
জনবল সংকট না হয় এ বিষয়টি লক্ষ্য রাখা খুবই জরুরী। দিন দিন হাসপাতালে নন
কোভিড রোগীর সংখ্যা বাড়ছে যে কারনে আলাদা একটি সংক্রামক ব্যাধি ইউনিট করা
উচিত।
কুমিল্লা সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন বলেন, ভারত ফেরতদের
কুমিল্লায় সফলভাবে কোয়ারেন্টিন করা হচ্ছে। কুমিল্লা দিয়ে যেন ভারত থেকে
অনুপ্রবেশের ঘটনা না ঘটে এজন্য এজন্য জেলাপ্রশাসন, বিজিবিসহ যৌথ তৎপরতা
চালানো হচ্ছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও
জেলা করোনা কমিটির উপদেষ্টা বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আ ক ম বাহাউদ্দিন
বাহার বলেন. প্রথম ঢেউয়ের মতো করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা করতেও আমরা
প্রস্তুত আছি। সর্বোচ্চ প্রবাসী হওয়া সত্ত্বেও এই জেলায় করোনা প্রতিরোধে
সফলতা অনেক। কুমিল্লায় সরকারি এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজ গুলোতে করোনার
চিকিৎসা শুরু হয়েছে। আইসিইউ সংকট কাটানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তারপরও
কুমিল্লায় করোনার চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন তা যেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে
পৌছানো হয় এই অনুরোধ তিনি প্রধানমন্ত্রীর ব্যাক্তিগত চিকিৎসক এবিএম
আবদুল্লাহর কাছে জানান।
বিএমএ কুমিল্লার সায়েন্টিফিক সেক্রেটারি ও
কুমেক এর উপাধ্যক্ষ ডা. মোঃ ইজাজুল হকের সঞ্চালনায় সেমিনারে সভাপতিত্ব
করেন বিএমএ কুমিল্লার সভাপতি ডা. আবদুল বাকী আনিস। স্বাগত বক্তব্য রাখেন
বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ডা. মোঃ আতাউর রহমান জসিম, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা.
তারেক আহাম্মেদ।