করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের মধ্যে এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আর মৃত্যু আরও বেড়েছে।
স্বাস্থ্য
অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৩ হাজার ৯৫৬
জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা প্রায় আট সপ্তাহের মধ্যে
সর্বোচ্চ।
আক্রান্তদের মধ্যে গত এক দিনে আরও ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা দেড় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
এর
আগে এক দিনে এরচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত ২২ এপ্রিল, সেদিন ৪ হাজার
১৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
আর এক দিনে এর চেয়ে বেশি মৃত্যুর খবর এসেছিল সর্বশেষ গত ৪ মে। সেদিন করোনাভাইরাসে ৬১ জনের মৃত্যুর খবর এসেছিল।
মঙ্গলবারও দেশে ৫০ জনের মৃত্যুর খবর এসেছিল, শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৩১৯ জন।
গত
এক দিনে নতুন আক্রান্তদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৮ লাখ
৩৭ হাজার ২৪৭ জন হয়েছে। আর মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ২৮২ জন।
সরকারি হিসাবে, আক্রান্তদের মধ্যে একদিনে আরও ২ হাজার ৬৭৯ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাদের নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৭৫২ জন।
বাংলাদেশে
করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; তা সাড়ে সাত লাখ
পেরিয়ে যায় গত ২৭ এপ্রিল। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে গত ৭ এপ্রিল
রেকর্ড ৭ হাজার ৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন
পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য
অধিদপ্তর। এ বছর ১১ জুন তা ১৩ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ১৯ এপ্রিল রেকর্ড
১১২ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিশ্বে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ১৭ কোটি ৬৬ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩৮ লাখ ২৩ হাজারের বেশি মানুষের।
করোনাভাইরাসের
নতুন ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার সামাজিক বিস্তার বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটায়
রাজশাহী ও খুলনার ভারত সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ ও মৃত্যু গত কয়েক
সপ্তাহ ধরেই বাড়ছিল। গত কয়েক দিন ধরে ঢাকাতেও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ফের
বাড়ছে।
ঢাকা মহানগরীসহ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ১৩৫ জন নতুন রোগী
শনাক্ত হয়েছে, যা সারা দেশে সর্বোচ্চ। এছাড়া রাজশাহী ৩৪৩ জন, যশোরে ২০৪
জন, খুলনায় ২২২ জন, নাটোরে ১২০ জন, নওগাঁয় ১২৫ জন এবং চট্টগ্রামে ১০৭ জনের
মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
বিভাগওয়ারি হিসেবে ঢাকা বিভাগে গত এক দিনে
১৫৭৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা সারা দেশে মোট শনাক্তের ৪০ শতাংশ।
আগের দিন ঢাকা বিভাগে শনাক্ত হয়েছিল মোট ৯০৭ জন।
রাজশাহীতে দৈনিক শনাক্ত
রোগীর সংখ্যা ৭১২ জন থেকে বেড়ে ৮১৩ জন হয়েছে। খুলনা বিভাগে গত এক দিনে
শনাক্ত হয়েছে ৮১৮ জন নতুন রোগী, যা আগের দিন ৮০০ জন ছিল।
স্বাস্থ্য
অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫১৩টি ল্যাবে ২৩ হাজার ৮০৭টি
নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬২ লাখ ৪২ হাজার ৭৮৬টি
নমুনা।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৬২
শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায়
সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
ঢাকা
বিভাগে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার আগের দিনের ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯
শতাংশ হয়েছে। রাজশাহী বিভাগে ১৮ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৯ শতাংশ। আর খুলনা
বিভাগে শনাক্ত রোগীর হার ৩৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৮ শতাংশ হয়েছে।
ঢাকা জেলায়
পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার আগের দিনের ৫.৩ শতাংশ থেকে বেড়ে এক ধাক্কায়
১০.৬ শতাংশ হয়েছে। আর ঢাকা বিভাগে ১০.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১২.৩২
শতাংশ।
রাজশাহী বিভাগে ১৬.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৯.৬ শতাংশ। আর খুলনা বিভাগে শনাক্তের হার আগের দিনের মতই ৪১ শতাংশ রয়েছে।
গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের ১৭ জনই রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন; ১৪ জন ছিলেন খুলনা বিভাগের বাসিন্দা।
এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে ৮ জন করে, সিলেট বিভাগে ৬ জন, রংপুর বিভাগে ৪ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৩ জন মারা গেছেন।
তাদের মধ্যে ৩৬ জন পুরুষ এবং ২৪ জন নারী। তাদের ৪৬ জন সরকারি হাসপাতালে, ৯ জন বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। বাসায় মারা যান ৫ জন।
মৃতদের
মধ্যে ২৩ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ১৬ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের
মধ্যে, ১০ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর, ৭ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর, ১ জনের ২১
থেকে ৩০ বছর এবং ৩ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল।