বাংলাদেশ গেমসে নড়াইল শহরের সাদিয়া রহমান একক, দ্বৈত ও দলগত প্রতিযোগিতায় তিনটি স্বর্ণপদক জয় করেছে। দেশের টেবিল টেনিস (টিটি) অঙ্গনে যাকে সবাই মৌ নামে চেনে, তার মা ও বাবার দেয়া নাম সাদিয়া রহমান। এবারের বাংলাদেশ গেমসই প্রথম নয়, এর আগেও তার অনেক অর্জন রয়েছে।
জানা যায়, ২০১৭ সালে জাতীয় টিটি প্রতিযোগিতায় নারীদের দ্বৈত ও দলগত পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ২০১৬ সালে ভারতে ও ২০১৯ সালে নেপালে সাউথ এশিয়ান গেমসে সাদিয়া ব্রোঞ্জপদক পেয়েছিল। এর আগে যুব গেমসে একক, দ্বৈত ও দলগত পর্যায়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
সাদিয়া স্কুলপর্যায়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় চারবার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়। পুরস্কারও নিয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে।
মা শাহনাজ পারভীনের সঙ্গে সাদিয়া রহমানের এ পথচলা সহজ ছিল না। নড়াইল শহরে তারা ভাড়া বাসায় থাকে। সাদিয়া নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর আগেই খেলতে শুরু করে বড়দের টুর্নামেন্ট।
বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসে অংশ নিয়েছে আবাহনী ও বাংলাদেশ আনসার বাহিনীর খেলোয়াড় হিসেবে।
শুধু খেলায় নয়, পড়াশোনাতেও সাদিয়া মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। মাত্র তিন মাস পড়াশুনা করে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জেলার মধ্যে তার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এসএসসি পরীক্ষার তিন দিন আগে খেলা শেষ করে সে পরীক্ষায় অংশ নেয়। এসএসসিতেও জিপিএ-৫ পায়। এভাবে খেলা আর পড়াশোনায় সমানতালে সাফল্য তার।
সাদিয়া রহমানের বাবা মতিয়ার রহমান ছিলেন নড়াইল সদর হাসপাতালের স্টোরকিপার। ২০০৩ সালে হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বামীকে সুস্থ করতে ও সংসার চালাতে গিয়ে সব জমাজমি বেচতে হয়েছে। ২০১৮ সালে মতিয়ার রহমান মারা যান।
সাদিয়ার দাদাবাড়ি বাগেরহাট হলেও বাবার কর্মস্থল ও নানাবাড়ির কারণে নড়াইলে কেটেছে তাদের। সাদিয়ারা দুই বোন। বড়বোন সুমাইয়া রহমানের বিয়ে হয়ে গেছে। থাকেন ঢাকায়। সুমাইয়া রহমানও টেবিল টেনিসে চ্যাম্পিয়ন ছিলেন।
জীবনগল্প বলতে বলতে সাদিয়া রহমান শোনাল তার লক্ষ্যের কথা। সে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে স্বর্ণপদক জয়ের স্বপ্ন দেখছে। সাদিয়া টেবিল টেনিসে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে চায়।
সাদিয়ার মা শাহনাজ পারভীন বলেন, নাচ, গান, আবৃত্তিতেও সাদিয়া খুবই ভালো। নবম বাংলাদেশ গেমসে সাদিয়া হারিয়েছে সোনাম সুলতানাকে। সোনাম ছিল চারবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। সম্পর্কে সে তার খালাতো বোন।
সোনামকে খেলায় হারিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেন সাদিয়া। ‘বিজয়টা খুব দরকার ছিল’, ছোট করে সোনামকে বলেছিল সাদিয়া।
উল্লেখ্য, মৌয়ের খেলা থেকে যে আয় হয়, তা দিয়ে তাদের সংসার চলে।