ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
‘বাঘ’ বিক্রি করতে এসে জরিমানা ৫০ হাজার টাকা
Published : Friday, 25 June, 2021 at 12:00 AM, Update: 25.06.2021 12:44:37 AM
‘বাঘ’ বিক্রি করতে এসে জরিমানা ৫০ হাজার টাকাতানভীর দিপু: কুমিল্লা ক্যাটস কলোনী নামে একটি ফেসবুক পেইজে বাঘ শাবক বিক্রির কথা বলে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। ছবি দিয়ে ক্রেতাদের কাছে দাম চাওয়া হয় দুই লক্ষ টাকা। দামদর শেষে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রিতে রাজি হয় ক্রেতা বিক্রেতা দুইজনই। বিক্রেতা রাজধানীর স্বনামধন্য কলেজের ছাত্র রাফির বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি এলাকার ফরিজপুরের, থাকেন ঢাকায়। আর ক্রেতা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তরের টীম। অনলাইনে কেনা হবে বাঘের শাবক- দামদরে মিলে যাওয়ায় এবার বাঘ বিক্রেতাকে ধরার অভিযানে নামে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে নিয়োজিত কর্মকর্তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লার কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় বাঘের নামে চিতা বিড়ালের শাবক বিক্রি করতে আসে ইশতিয়াক ও রাকিব। তাদের বাড়িও ময়নামতি এলাকায়। তার দুই জনও কালেজ পড়–য়া। তাদেরকে আটক করে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তাদের টীম। খাঁচায় বাঘ শাবকের পরিবর্তে পাওয়া যায় দু’টি চিতা বিড়ালের বাচ্চা। পরে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে দুই জনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
ঢাকা থেকে আসা ওয়াইল্ড লাইফ ইনসপেক্টর আবদুল্লাহ আল সাদিক জানান, অনলাইনে বন্যপ্রাণী কেনাবেচার বিষয়টি অনেকদিন ধরেই পর্যবেক্ষণে ছিলো। এরই ধারাবাহিকতায় এই অভিযান। তবে শংকার বিষয় যেটি তা হলো- এতে স্কুল কলেজ পড়–য়ারা জড়িয়ে গেছে। জেনে না জেনে অনেকে ফেসবুক পেইজে এই কেনা বেচা করছে। কিন্তু আমাদের ধারনা, বন্যপ্রাণী সংগ্রহে সধারাণ কৌতুহলী তরুনদের ব্যবহার করছে পেশাদার চক্র।  বাঘের শাবক বলেই ক্রেতাদের আকর্ষণ করা চেষ্টা করছিলো চক্রটি।
অভিযুক্ত রাকিবের দাবি, রাফি শাবকগুলোকে এক বন্ধুর কাছে পাঠাবে বলে তাকে জানায়। কিন্তু বিক্রি করে দেয়া হয়েছে এবিষয়ে সে কিছু জানে না। তাকেও মিথ্যা বলে ফাঁদে ফেলা হয়েছে।
ওয়াইল্ড লাইফ ইনসপেক্টর নার্গিস সুলতানা জানান, করোনাকালীন সময়ে সব কিছুই অনলাইনে বিস্তার লাভ করেছে। প্রাণী বেচাকেনার বিষয়টিও বাদ যায়নি। স্কুল কলেজ পড়–য়াদের ফেসবুকের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী সংগ্রহ করে চড়া দামে বেচা কেনা করছে চক্রটি। তবে এভাবে চলতে থাকলে একসময় বনাঞ্চলে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীগুলো একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কুমিল্লা থেকে উদ্ধার হওয়া চিতা বিড়ালের শাবকগুলোকে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে অবমুক্ত করা হতে পারে।
কুমিল্লা থেকে এর আগেও উদ্ধার হয়েছে চিতা বিড়াল ও মেছো বাঘ। তবে বাঘের মত দেখতে এই প্রাণীগুলো আজ বিলুপ্তির পথে। কুমিল্লার লালমাই পাহাড় ও ভারতসীমান্তবর্তী বনাঞ্চলগুলো এখনো বন্যপ্রাণীদের প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য। এই অঞ্চলে বন্যপ্রাণী পাচার রোধে আরো কার্যক্রম বাড়ানো হবে বলে জানালেন কুমিল্লার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মোঃ নুরুল করিম। তিনি জানান, লোকালয়ে বন্য প্রাণী চলে আসলেও সেগুলোকে ধরে মেরে ফেলার একটি প্রবণতা রয়েছে। এছাড়া কৌতুহলীরা অনেকেই তাদের ধরে লালন পালনের চেষ্টা করেন। কিন্তু তা মোটেও ঠিক না। তরুণ প্রজন্মের উচিত বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের বিষয়ে সচেতন থাকা। কেউ যদি বন্যপ্রাণী বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারে তাহলে সামাজিক বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো অবশ্যই ব্যবস্থা নিবে।
বন্যপ্রানী উদ্ধারকারী স্বেচ্ছা সেবক প্রকৌশলী মোশারফ হোসাইনের মতে, কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ী এলাকা, রাজেশপুরসহ ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো এখনো বন্যপ্রাণীদের জন্য প্রাকৃতিক অভয়ারন্য এবিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো গেলে বন্যপ্রাণী পাচার বা অবৈধ ক্রয় রোধ করা যাবে। আর চিতা বিড়াল ও মেছো বাঘ দেখতে অনেকটা বাঘের মত যে কারনে এসব নিয়ে মানুষের আকর্ষণ বেশি থাকে বিশেষ করে তরুণদের। তাই তরুণদের সচেতন হওয়া বেশি জরুরি।