করোনাভাইরাসে
আক্রান্তদের মধ্যে এক দিনে শতাধিক মানুষের মৃত্যুতে দেশে কোভিডে মৃত্যুর
মোট সংখ্যা ১৪ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ১০৮ জনের মৃত্যু
হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে আরও ৫ হাজার ৮৬৯ জনের মধ্যে।
এক
দিনে মৃত্যুর এই সংখ্যা গত ৯ সপ্তাহের মধ্যে মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে
সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল এক দিনে ১১২ জনের মৃত্যুর খবর
দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেটাই দেশে এক দিনে মৃত্যুর সর্বোচ্চ
সংখ্যা।
গত একদিনে মারা যাওয়া ১০৮ জনকে নিয়ে এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ৯৭৬
জনের মৃত্যু হলো করোনাভাইরাসে। আর মোট শনাক্ত গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৭৮
হাজার ৮০৪ জনে।
আগের দিন দেশে ৬ হাজার ৫৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের
সংক্রমণ ধরা পড়ায় কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সেই হিসাবে এক দিনে ন
তুন রোগী কমেছে। তবে মৃত্যুর সংখ্যা ৮১ জন থেকে এক লাফে একশ পেরিয়ে গেছে।
শনাক্ত হওয়া নতুন রোগীদের মধ্যে ১৫৩৯ জনই ঢাকা জেলার। আর খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে গত এক দিনে।
নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২১ শতাংশ ছাড়িয়েছে, বৃহস্পতিবার শনাক্তের হার ২০ শতাংশের কাছাকাছি ছিল।
সরকারি হিসাবে একদিনে আরও ২ হাজার ৭৭৭ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৫৫৯ জন।
করোনাভাইরাসের
নতুন ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার সামাজিক বিস্তার বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটায়
জুনের শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে শুরু করে। এর
আগে সংক্রমণের প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে ঢাকা সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় পড়লেও
এবার ভাইরাসের প্রকোপ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগেও ব্যাপক মাত্রা পেয়েছে।
ঢাকা
নগরীসহ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক ১৫৩৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
এছাড়া খুলনা জেলায় ৩৩২ জন, যশোরে ৩৭০ জন, রাজশাহী জেলায় ২৯৯ জন, চট্টগ্রাম
জেলায় ২৭৪ জন, ঝিনাইদহে ১৭৯ জন, নওগাঁয় ১২৫ জন, বগুড়ায় ১২৫ জন, নোয়াখালীতে
১১৬ জন, চুয়াডাঙ্গায় ১১৬ জন, কুষ্টিয়ায় ১১১ জন, কুমিল্লায় ১০৫ জন এবং
ঠাকুরগাঁওয়ে ১০১ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে।
বিভাগওয়ারী
হিসেবে ঢাকায় দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আগের দিনের জন ২২৭১ থেকে কমে ২১৯৬
জন হয়েছে, যা সারা দেশের মোট শনাক্তের ২৬ দশমিক ২২ শতাংশ।
রাজশাহী বিভাগে নতুন রোগীর সংখ্যা আড়ের দিনের ১০১৮ জন থেকে কমে ৮৭১ জন এবং এবং রংপুর বিভাগে ৮৪৩ জন থেকে কমে ৩৩৬ জন হয়েছে।
কিন্তু চট্টগ্রাম বিভাগে আগের দিনের জন ৬১১ থেকে বেড়ে ৭০৩ জন এবং খুলনা বিভাগে ৯১৭ জন থেকে বেড়ে ১৩২২ জন হয়েছে।
স্বাস্থ্য
অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫৫৪টি ল্যাবে ২৭ হাজার ৬৫৩টি
নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬৪ লাখ ৬৩ হাজার ১১৯টি
নমুনা।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ২২ শতাংশ যা আগের দিন ১৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ শতাংশ ছিল।
দেশে
এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার
হার ৯১ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
পরীক্ষার
বিপরীতে শনাক্তের হার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে খুলনা বিভাগে। এই বিভাগে ২৬২৪টি
নমুনা পরীক্ষা করে ১৩২২ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ শনাক্তের
হার ৫০ দশমিক ৩৮ শতাংশ, যা আগের দিন ৩৮ দশমিক ১১ শতাংশ ছিল।
এছাড়া ঢাকা
বিভাগে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার আগের দিনের ১৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ থেকে
সামান্য বেড়ে ১৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯ দশমিক ০৩ শতাংশ থেকে
বেড়ে ২০ দশমিক ৫৮ শতাংশ, শতাংশ এবং রাজশাহী বিভাগে ১৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ থেকে
বেড়ে ১৯ দশমিক ৮৩ দশমিক শতাংশ এবং রংপুর বিভাগে ৩৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪১
দশমিক ৭৪ শতাংশ হয়েছে।
গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের ২৭ জনই ছিলেন
খুলনা বিভাগের বাসিন্দা। ঢাকা বিভাগে ২৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৩ জন,
রাজশাহী বিভাগে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া সিলেট বিভাগে ৩ জন, রংপুর বিভাগে ১০ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে গত এক দিনে।
মৃতদের
মধ্যে ৭৫ জন পুরুষ এবং ৩৩ জন নারী। তাদের ৮৩ জন সরকারি হাসপাতালে, ১৪ জন
বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। বাসায় মারা গেছেন ১১ জন।
তাদের ৫৮ জনের
বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ২৫ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১৫ জনের
বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৭ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ২ জনের
বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল।
বাংলাদেশে
করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; তা আট লাখ পেরিয়ে
যায় গত ৩১ মে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে গত ৭ এপ্রিল রেকর্ড ৭ হাজার
৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮
মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ১১
জুন তা ১৩ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ১৯ এপ্রিল রেকর্ড ১১২ জনের মৃত্যুর
খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিশ্বে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ১৮ কোটি ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩৯ লাখ ২ হাজারের বেশি মানুষের।