নিজস্ব
প্রতিবেদক:মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা
বেড়েছে উল্লেখ করে নিজেকে ও পরিবারকে নিরাপদ রাখতে দেশবাসীদের সতর্ক ও
সাবধানে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার সকালে
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার
১৪২৪ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান। এবার ৩২ ব্যক্তি ও
প্রতিষ্ঠান এই পুরষ্কার পেয়েছে।
মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলার আশা প্রকাশ করে সবার সহযোগিতাও চান সরকার প্রধান।
কোভিড
১৯ সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার
আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি সবাইকে অনুরোধ করবো যেহেতু করোনায় মানুষ
আক্রান্ত হচ্ছে ব্যাপকহারে, মৃতের সংখ্যা বেড়ে গেছে, কাজেই সবাই একটু
সাবধানে থাকবেন।
“নিজেকে নিরাপদ রাখবেন, নিজের পরিবারকে নিরাপদে রাখবেন,
স্বাস্থ্যবিধিমালাগুলো মেনে চলবেন। নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন। সেটা আমার
বিশেষভাবে অনুরোধ।”
শেখ হাসিনা বলেন, “সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছে
বলেই মানুষ মহামারীর মধ্যেও প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের প্রয়োজনীয় কাজ
সম্পন্ন করতে পারছে এবং বাংলাদেশ উন্নয়নের দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে।”
করোনাভাইরাস
মহামারীর মধ্যে দেশের অর্থনীতির চাকা চালু রাখা ও মানুষের জীবন জীবিকা সচল
রাখতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন প্রচেষ্টার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তিনি।
সুপরিকল্পিতভাবে
এগিয়ে যাওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট সাফল্য অর্জিত হয়েছে জানিয়ে
প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদা বাংলাদেশ পেয়েছে তা ধরে রাখার
আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “আমরা অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন
করেছি। আজকে বাংলাদেশৃ যে বাংলাদেশকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে জাতির পিতা
স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা দিয়ে গিয়েছিলেন। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আজকে
আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আমাদের এটা ধরে রাখতে হবে।”
অনুষ্ঠানে
কৃষকদের আওয়ামী লীগ সরকার সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়ে তাদের
কল্যাণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন সরকার প্রধান।
তিনি
বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারই সেই সরকার যেই সরকার কৃষককে সব থেকে বেশি
মর্যাদা দেয়। শুধু তাই না আমরা বর্গা চাষীদেরও বঞ্চিত করিনি। বিনা জামানতে
বর্গা চাষীদের আমরা ঋণ দেওয়া শুরু করি।
“তার উদ্দেশ্যটা ছিল, তারা যেন তার সর্বশক্তি নিয়োগ করতে পারে উৎপাদনে। এবং যাতে সফলতা অর্জন হয়।”
দেশে
১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কথা জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, “এই
অঞ্চলে আমরা গুরুত্ব দিতে চাই কৃষিপণ্য বা খাদ্য পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের
জন্য। এবং এই অঞ্চলে এই শিল্পগুলো শুধু শিল্পই না, এখানে কৃষির জন্য একটা
বিরাট অবদান রাখতে পারবে।
“কারণ খাদ্যের চাহিদা বিশ্বে থাকবে।
করোনাকালীন সময়ে খাদ্য চাহিদা আরও বাড়বে। সেই কারণেই আমরা যদি আমাদের
উৎপাদন অব্যাহত রাখি, তাহলে নিজেদের চাহিদা যেমন আমরা মেটাতে পারবো
প্রয়োজনে অন্যকেও আমরা সহযোগিতা করতে পারবো। আর রপ্তানির ক্ষেত্রেও আমাদের
পণ্য আমরা বৃদ্ধি করতে পারবো।”
ফলমূল, শাক সবজি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ
সবকিছুই আমরা উৎপাদন বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন করে সেগুলো আমরা
বিদেশে রপ্তানি করতে পারি, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
কৃষি ও খাদ্য
প্রক্রিয়াজাতকরণের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, “এই ১০০টা অঞ্চলে আমরা গুরুত্ব
দেই। এখানে যেন কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে উঠে, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প
গড়ে উঠে, যা আমরা বিদেশেও রপ্তানি করতে পারবো।”
সেভাবেই আপনারা কাজ করবেন বলে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।
কৃষকদের
কল্যাণ ও কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরার পাশপাশি ১৯৭৫
এর পর যারা সরকারে আসেন, তারা সেসব উদ্যোগ ধ্বংস করে দেয় বলেও মন্তব্য
করেন তিনি।
কৃষি উপকরণও কৃষকের কাছে সহজলভ্য করার ব্যবস্থা জাতির পিতা
করে গিয়েছিলেন উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, “কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে
এই বাংলাদেশে আমরা দেখেছি ১৯৯১ সালে বিএনপি যখন সরকারে আসে কৃষকরা সারের
জন্য আন্দোলন করেছিল। ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছিল। কৃষকরা সার
পায়নি, পেয়েছিল গুলি।
“সেই সময় আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা
সরকারে আসলে কৃষকের সারের জন্য দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হবে না। সার প্রত্যেক
কৃষকের ঘরে পৌঁছে যাবে। এরপর সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”
দেশের
জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “২০০৮ সালের নির্বাচনের পর
থেকে পরপর তিনবার আমাদের নির্বাচিত করায় দীর্ঘ সময় পাওয়ায় গবেষণায় যেমন
সাফল্য এসেছে, উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি এবং সেই সাথে
দেশকেও অর্থনৈতিকেভাবে আমরা এগিয়ে নিতে যেতে সক্ষম হয়েছি।”
অনুষ্ঠানে
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে
কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক পুরষ্কারপ্রাপ্তদের হাতে পদক তুলে দেন।
এসময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।