ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
লকডাউন দেখতে এসে আটক তিন শতাধিক
Published : Friday, 2 July, 2021 at 12:00 AM
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের মধ্যে ‘জরুরি প্রয়োজন ছাড়া’ রাস্তায় বের হয়ে রাজধানীতে পুলিশের হাতে আটক হতে হয়েছে তিন শতাধিক ব্যক্তিকে।
কঠোর লকডাউন শুরুর দিন বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেল মোট ৩২২ জনকে আটকের তথ্য জানায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, “যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে কাউকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, কাউকে জরিমানা করা হচ্ছে, কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আইনে মামলা করা হচ্ছে।”
আটকদের মধ্যে ৭৩ জনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আইনে মামলা করা হয় বলে জানিয়েছে ডিএমপির মিডিয়া সেল।
আরও জানানো হয়েছে, সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা নাগাদ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অপ্রয়োজনে বের হওয়া গাড়ির বিরুদ্ধে ২২২টি মামলা হয়। জরিমানা আদায় করা হয় ২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।
লকডাউনে জরুরি সেবার গাড়ি ছাড়া সব ধরনের যান্ত্রিক বাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রায়েছে। সপ্তাহব্যাপী এই লকডাউনে পুলিশ কঠোর ভূমিকায় থাকবে বলে আগেই হুঁশিয়ার করা হয়েছিল। প্রথম দিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ব্যাপক তৎপরতা দেখা যায়।
পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, সেনা সদস্য ও বিজিবি সদস্যরাও লকডাউন বাস্তবায়নে ঢাকায় সক্রিয় ছিল।
নিয়ম না মানায় আটজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করার তথ্যও জানিয়েছে পুলিশ। নিয়ম না মেনে দোকান খোলা রাখায় বিভিন্ন দোকান মালিককে জরিমানাও করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগেই ১৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অপ্রয়োজনে বের হওয়ায়।
এরমধ্যে তেজগাঁও থানা এলাকায় ৩০ জন, শিল্পাঞ্চল থানা ৮ জন, মোহাম্মদপুর ২৬ জন, আদাবর থানা ১৮ জন, শেরে বাংলা নগর থানা ৪০ জন এবং হাতিরঝিল থানা পুলিশ ৪২ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার মাহতাব উদ্দিন জানান, কঠোর লকডাউনের মধ্যে ‘অপ্রয়োজনে’ বের হওয়ায় তার এলাকার বিভিন্ন থানায় দুপুর পর্যন্ত একশর বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে।
দারুস সালাম থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ দুপুরে বলেন, “এ পর্যন্ত ৩৬টি মামলা হয়েছে এবং জরিমানা আদায় হয়েছে ৯৯ হাজার টাকা। আরও আটক হচ্ছে এবং সংখ্যা আপডেট হচ্ছে।”
মিরপুর বিভাগে মোট ৯৮টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
রমনা বিভাগের পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হারুন অর রশীদ জানান, সকালে রমনা থানার সুগন্ধা মোড় থেকে দুজন এবং শাহবাগ মোড় থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার মাহিন ফারাজী দুপুরে বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত ১০ জনকে অপ্রয়োজনীয় চলাফেরার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছি। এর মধ্যে রায়েরবাজার থেকে ৭ জন এবং তিন রাস্তার মোড় থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
লালবাগে ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই বিভাগে ২৫টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং ২৫ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
মতিঝিলে ১৯টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করে ৪৫ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া ৯টি দোকানকে ১৮ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। দুই ব্যক্তিকে মোট ১ হজার ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
পুলিশের ওয়ারী বিভাগে ১৫টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অপ্রয়োজনে বের হওয়ায় গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে। এছাড়া ১৬ জনকে মোট ১ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
গুলশান বিভাগে ২১টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় ৬১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আটক করা হয় ৭ জনকে এবং সাজা দেওয়া হয় ৮ জনকে।
সারা দেশে সাত দিনের সর্বাত্মক লকডাউনের প্রথমদিনে বিধি-নিষেধ মেনে চলা হচ্ছে কিনা তা যাচাই করতে পুলিশের মতো র‌্যাবও বিভিন্ন মোড়ে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে।
এছাড়া মাস্ক না পরায় মিরপুর দারুস সালাম সড়কে তিনজনকে জরিমানা করেছে র‍্যাব-৪ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে দুজন গাড়ি চালক এবং একজন মোটরসাইকেল চালক।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান ওই সড়কে গাড়ি এবং পথচারীকে থামিয়ে চলাচলের কারণ জানতে চান। যারা যৌক্তিক কারণ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের তিনজনকে সাজা দিয়ে বাকিদের সতর্ক করে দেন তিনি।
এসময় সাদা কাগজে ‘জরুরি ওষুধ সরবরাহ ও উৎপাদন’ লেখা একটি ফার্মসিউটিক্যাল কোম্পানির স্টিকার লাগানো গাড়ি আটক করা হয়। চালক সুজন মিয়ার মুখে মাস্ক ছিল না, কোম্পানির কোনো পরিচয়পত্রও তিনি দেখাতে পারেননি।
পরে মাস্ক না পরায় তাকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একইভাবে একটি প্রাইভেটকারের চালককে দুইশ টাকা এবং একজন মোটরসাইকেল চালককে পাঁচশ টাকা জরিমানা করা হয়। র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, “করোনাভাইরাস রোধে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার বাস্তবায়নে কাজ করছি। আমরা শুধু জরিমানা করছি না, কাউকে সতর্কও করছি পাশাপাশি মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে।”
বারডেমের সামনে র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, “সকাল থেকে তল্লাশি করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত যাদেরকে পেয়েছি অধিকাংশই প্রয়োজনে বের হয়েছেন। কেউ চিকিৎসার জন্য বের হয়েছেন, কেউবা বিদেশ যাবেন।”