অধ্যাপক ডা: মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ ||
কুমিল্লার
কেন্দ্রস্থলে কান্দিরপাড় বড় চৌমুহনীর পশ্চিম দিকে প্রসারিত রানীর বাজারের
দিকে অগ্রগামী রাস্তাটির প্রারম্ভিক অংশটি সরু এবং তার দুপাশে এলামেলোভাবে
রিক্সা ও অটো দাড় করিয়ে রাখার কারণে একটি অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হয়। সরু
অংশটির সম্মুখে অর্থাৎ পশ্চিমে প্রায় ১০০ গজ সম্মুখে রাস্তাটি প্রসস্থ এবং
এই প্রসস্থ অংশের বামপার্শ্বে প্রায় ১০০ গজ লম্বা, ১৫ ফুট প্রশস্থ
সিটিকর্পোরেশনের জায়গার উপর কোন প্রাক্কলন ব্যতীত কতগুলি অস্থায়ী দোকান
আছে। এই অস্থায়ী দোকানসমূহ তুলে দিয়ে ঐ ১০০ গজের পশ্চিামাংশের প্রায় পঞ্চাশ
গজের উপর একটি স্থায়ী চারতলা মার্কেট এবং পূর্বাংশের বাকী পঞ্চাশ গজের
মধ্যে একটি রিক্সা/অটো ষ্ট্যান্ড স্থাপন করলে নগরীর সৌন্দর্য্য ও যানজট
ঐস্থানে মুক্ত করা যায়। ফরিদা বিদ্যায়তনের লাগ পূর্ব পার্শ্বের রাস্তার
তেমাথায় উপর প্রায় ৮ ফুট জায়গার উপর একটি স্থাপনা নির্মাণ করে রাস্তাকে সরু
করা হয়েছে এই ৮ ফুটের দোকানদারকে প্রস্তাবিত স্থায়ী মার্কেটে একটি দোকান
বরাদ্দ দিলে তেমাথাকে প্রশস্থ করে ঐস্থানের যানজটটি নিবারন করা যায় যা
লেখচিত্রে স্পষ্টভাবে দেখানো আছে।
লাকসাম রোডে বিএমএ অফিসের পরে
পুকুরপাড়ে রাস্তার পশ্চিম পার্শ্বে তিনটি দোকান উঠেছে তারপর কিছু খালি
জায়গা তারপর রামঘাটলা এবং ঘাটলা ঘেষে মসজিদ এবং মসজিদের পার্শ্বে কয়েকটি
দোকান উঠেছে- এগুলো সবগুলোই অবৈধ। নীচতলা খালিরেখে পুকুরের পাড়টি বাধাই
করে চারতলা মার্কেট করলে নীচতলায় রিক্সা/সিএনজি/কার পার্কিং এর ব্যবস্থা
করে বাকী তিনতলায় মসজিদ ও মার্কেট করা যায়। এতে ফুটপাতের দোকানদারদের
পুর্নবাসন ও যানজট উভয়ই লাঘব হয়। ঐতিহ্যবাহী রামঘাটটিও যদি পুকুরপাড় পাক্কা
করে বাঁধাই করা হয় তবে রক্ষা হয় এবং ঐ এলাকার লোকজন তা ব্যবহার করে শান্তি
পাবে।
টাউনহলটি এন্টিক্স হিসেবে রক্ষা করে টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহার করে
সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর দিয়ে সুসজ্জিত করতে হবে এবং খোলা তিনদিকই
সবুজায়িত করা দরকার। ইউরোপে এধরনের হাজার বছরের স্থাপনাও একই আকৃতিতে নতুন
টেকনোলজি ব্যবহার করে ঐতিহ্য রক্ষা করে চলছে। আমরা পারবনা কেন। চৌরাস্তার
একটু দুর থেকে মেটার্নিটি রোড পর্যন্ত ঝাউতলা রোডের উত্তরপার্শ্বে তারু
মিয়া মার্কেটের চারতলা ভবনটি কখনোই গ্রহণযোগ্য মনে হয় নাই। বর্তমানে এভবনটি
পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এ ভবনটি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে সেথায় রিক্সা, সিএনসি
ও কার পার্কিং এবং সবুজায়নের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে নগরীর আসল রুপটি
ফুটে উঠবে। মেটানিটি রোডের পশ্চিম পার্শ্বে একেবারে ওয়াইডব্লিউসিএ স্কুলের
গেট পর্যন্ত বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনের একটি একতলা বিল্ডিং আছে। এস্থানে
পাচ বা ছয়তলা বিল্ডিং করে নিচতলায় খালি রেখে পার্কিং এর ব্যবস্থা করলে তারু
মিয়া ভবনের সবাইকে সংকুলান করা যাবে এবং এতেও যানজট হ্রাস পাবে ও নগরীর
সৌন্দর্য্যে আরেকটি সংযোজন ও বলা যাবে।
কান্দিপাড় ছোট চৌরস্তার
পূর্বপার্শ্বের রাস্তায়ই রিক্সা ও সিএনজি থামায় ঘুরায় এবং রাস্তার দুপাশে
দাড়িয়ে থেকে একটি কঠিন যানজট সৃষ্টি করে। ভিক্টোরিয়া কলেজ রোডের পূর্ব পাশে
যে ড্রেন আছে এ ড্রেনের পাশে একটা লাইনে রিক্সা ও সিএনজি থামার ব্যবস্থা
করা যায় এমনকি ফাকে ফাকে ছোট বৃক্ষ রোপন করে ছায়ার ব্যবস্থা করা যায় তবে
চৌমুহনীর পূর্ব পার্শ্বের যানজট কমানো যায়। এখানে উল্লেখ করা যায় যে কতগুলি
ঠেলা গাড়ীর দোকান ও চায়ের দোকান অবৈধভাবে সেখানে চলছে এগুলো উঠিয়ে
প্রস্তাবিত অন্যান্য মাকেটে পূর্ণবাসন করা দরকার। চৌরাস্তার উত্তর পাশে
বিল্ডিংটি করার ব্যাপারে আমাদের সকলের বাধার পরেও বাস্তবায়িত হয়েছে যাতে
জলজট, জনজট ও যানজট সবকিছুরই সৃষ্টি হয়েছে। ডিভাইডারের পশ্চিম পাশে রিক্সা
দাড়াতে না দিয়ে জিলা স্কুলের সামনে সকল সবুজায়ন রক্ষা করে এক লাইনে
ষ্টেডিয়াম পর্যন্ত রিক্সা ও কার পার্কিং এর ব্যবস্থা করে দিলে অন্তত:
যানজটটা কিছুটা হলেও কমবে বলে সবাই বিশ্বাস করে তবে প্রশাসন থেকে
ডিভাইডারের পশ্চিম পার্শে রিক্সা থামিয়ে রাখা শক্তভাবে নিষিদ্ধ করার
ব্যবস্থা করতে হবে। এরপরও যে অনুরোধগুলো না করলেই নয় সেগুলো হচ্ছে-
ক্স
সকল সম্ভাব্য রাস্তায় ডিভাইডার দিন এবং যে রাস্তায় যথেষ্ট জায়গা আছে
সেখানে মার্কেট করুন চারতলা বিল্ডিং করে যার নীচতলা খালি থাকবে পার্কিং এর
জন্যে।
ক্স রাজগঞ্জ বাজার, রাণীর বাজারের রাস্তার পাশের একতলা
দালানগুলি প্রায় সবই পরিত্যক্তের খাতায় নাম লিখেছে। নীচতলায় পার্কিং ও তিন
কামরার ঢাকনাযুক্ত ওয়াষ্টেইজ বাস্কেট এর জন্য রেখে চারতলা মার্কেট করে
পরিচ্ছন্ন কুমিল্লার ঐতিহ্য ফেরত আনুন।
ক্স বকুল, চাঁপা, বেলী,
গন্ধরাজ, হাসনাহেনা, আ¤্রপালী, দেবদারু, আমালকি ও কাগজী লেবুর চারা ড্রেনের
পাড়ে লাগিয়ে ব্যাংক, ট্যাংকের সঙ্গে সবুজায়িত কুমিল্লা যোগ করুন।
ক্স
১ বৎসর বিনা ভাড়ায় এবং তারপর নামমাত্র মূল্যে দোকানভাড়া নির্ধারন করলে
যতগুলো মার্কেটের প্রস্তাবনা করা হয়েছে তাতে সকল ফুটপাতের দোকানের স্থান
সংকুলান হবে। যানজটমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে ফুটপাতে কোন দোকানের
অনুমোদন দেয়া যাবে না।
ক্স কান্দিরপাড় ছোট ও বড় চৌরাস্ত রাজগঞ্জ,
টমসমব্রীজ চৌরাস্তার পার্শ্ববর্তী ফুটপাত থেকে ফুটপাত ষ্টীল ফ্রেমে
ওভারব্রীজ বানিয়ে রাস্তা পারাপারের ঝুঁকি এড়ানোর ব্যবস্থা করলেই কিছুটা
নগরীর ভাব ফুটে উঠবে।
ক্স যে লেখচিত্রটি তুলে ধরা হয়েছে এর বাস্তবায়ন
কর্তাব্যক্তিদের আবশ্যিক দায়িত্ব। বাস্তবায়িত হলে নগরবাসী ভোগ করবে এবং না
হলে কর্তাব্যক্তিদের দায়িত্বে অবহেলা বা অনীহা বলে বিবেচিত হবে।
ক্স
খালের বদলে অযৌক্তিক প্রযুক্তিতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা হয়েছে রাস্তার একপাশে।
ম্যানহাউট পিভিসি পাইপ দিয়ে সমগ্র শহর জুড়ে রাস্তার অপর পার্শ্বে টেকসই
প্রযুক্তিতে ড্রেনেজ করে শেষ মাথায় ইটিপি বসিয়ে সহজে নগরীর বাহিরে ডাকাতিয়া
পযৃন্ত প্রবাহের ব্যবস্থা করে দায়িত্ব পালন করেন ও নগরকে জলজটমুক্ত করেন।
নতুবা কর্তাব্যক্তিদে বলছি-৫০ বছর পরে হলেও সম্পদ ও অর্থ বিনষ্ট/ লোপাটের
দায়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আপনাদের কাজে অনীহা ও লুটপাটের জন্য আপনাদের বংশদরদের
থেকে হলেও আদায় করবে বা শাস্তির ব্যবস্থা করবে।
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও সভাপতি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা অঞ্চল