কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের (কুমেক) ১০৪ জন চিকিৎসককে গণবদলি করা হয়েছে। সোমবার (৫ জুলাই) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক প্রজ্ঞাপনে ১০৪ জন চিকিৎসককে গণবদলির কথা জানানো হয়। এদের মধ্যে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ২২ জন চিকিৎসককে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা হাসপাতালে, ২১ জন চিকিৎসককে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে, ৬১ জনকে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালসহ কুমেক হাসপাতাল করোনা ইউনিটে বদলি করা হয়েছে।
তাদের ৭ জুলাই কর্মস্থলে যোগদানের কথা বলা হয়েছে। নতুবা ৮ জুলাই তাৎক্ষণিক অবমুক্ত হিসেবে গণ্য করা হবে।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা পরীক্ষা ল্যাবে প্রতিদিন ছয় শতাধিক রোগীর করোনা পরীক্ষা করা হয়। তিনটি টিমে সেখানে ১৫ জন চিকিৎসক কাজ করেন। তাদের প্রত্যেক পাঁচ জনের টিমের একজন প্রধান রয়েছেন। তিনটি টিমের প্রধানসহ ১৩ জনকে বদলি করা হয়েছে। এতে বন্ধ হয়ে যাবে করোনা পরীক্ষার ল্যাব।
অন্যদিকে বৃহত্তর কুমিল্লার অধিকাংশ ময়নাতদন্ত হয় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে। যে লোকবল তা দিয়ে কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হয়। সেখানে এই ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের তিন জন চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে। এ বিভাগের প্রধান ডা. শারমিন সুলতানা। তিনি এ হসপিটালের একমাত্র নারী চিকিৎসক।
এদিকে, বদলির কারণে হাসপাতালের বার্ন ইউনিট, সার্জারি বিভাগ, ক্যান্সার বিভাগ, আইসিইউ বিভাগ ও মেডিসিন বিভাগও সংকটে পড়বে।
অপরদিকে, করোনা রোগী ছাড়াও কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন অন্যান্য আট শতাধিক রোগী ভর্তি হয়। এছাড়া কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে সাত শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা চলছে। হাসপাতালের চিকিৎসক বদলির ফলে এসব কার্যক্রমে বাধা পড়বে।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক ডা. আতাউর রহমান জসিম বলেন, ‘বদলিটি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে করা হয়নি। এই বদলি কুমিল্লার স্বাস্থ্যখাতকে হুমকির মুখে ফেলবে। আশা করছি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবেন।’
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. রেজাউল করিম বলেন, ‘এই হাসপাতালে কয়েকটি জেলার রোগীর চাপ রয়েছে। বদলির কারণে হাসপাতালের বার্ন ইউনিট, সার্জারি বিভাগ, ক্যান্সার বিভাগ, আইসিইউ ও মেডিসিন বিভাগ সংকটে পড়বে। এছাড়া করোনা রোগী ছাড়াও এখানে অন্যান্য রোগী ভর্তি থাকে। তাদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হবে। আমরা কর্তৃপক্ষকে সংকটের ব্যাপারে জানিয়েছি। আশা করছি তারা বিষয়টি বিবেচনা করবেন।’
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মোস্তফা কামাল আজাদ বলেন, ‘বদলির বিষয়টি নিয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছি। তারা আমাদের এ বিষয়ে লিখিত দিতে বলেছেন। আশা করছি জরুরি ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবেন।’
কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা.মীর মোবারক হোসাইন বলেন, ‘বদলির কারণে যেন কুমিল্লার কোন স্বাস্থ্য সেবায় সমস্যা না হয়, সে বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি কোন সেবা বিঘ্নিত হবে না।’