গল্প
হাওয়া ঊণপঞ্চাশ
কাজী মোহাম্মদ আলমগীর ||
গুলনুরের সংসার তিনতলায়। ভাড়া বাসা।
একদিন দক্ষিণ দিকের মধ্য জানালা দিয়ে দিনের আটটায় হাওয়া ঊণপঞ্চাশ এসেছিল গুলনুরের বাসায়।
গুলনুর বলেছিল, এসো , আমার ব্রহ্মতালুতে বসো।
গুলনুর যেভাবে বলেছিল হাওয়া ঊণপঞ্চাশ সেভাবে বসেছিল।
(এভাবে বলার দায় দায়িত্ব লেখককে নিতে হবে। কারন পাঠক হাওয়া উণপঞ্চাশ বলতে কোন কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করে না ধরে নেয়া যায়।)
পাশের
রুমে বেঘোরে নিদ্রায় নিমজ্জিত ছিল তার স্বামী কফিলুদ্দি। সূর্য ওঠার পর
চিকচিকে আলো, আটটার পরের আলো,দরজাÑজানালার ফাঁক গলে প্রবেশ করতে না পারলেও
একধরণের তেজ তৈরি করেছিল। সেই তেজে বেঘোর কফিলুদ্দির ঘোর কাটে। কফিলুদ্দি
দরজা খুলে। থাকা- খাওয়া- রান্না-ওয়াসরুম- ড্রয়িংরুম-সমুহ ঘরের দরজা একের পর
এক খুলে কপিলুদ্দি গুলনুরকে খোঁজে পায় না। ছেলে মেয়েকেও না।
ছেলে
মেয়ে কি-ার গার্টেনে যতদিন পড়েছে ততদিন সকাল সকাল ওঠেছে। ঘুমের অসুবিধা
হলেও ওঠেছে। কফিলুদ্দির আয় কমে যাওয়ায় ছেলে মেয়ে দুজন এখন প্রাইমারি
স্কুলে। সরকারি প্রাইমারির ক্লাস তো এতো সকাল শুরু হয় না। তাহলে গুলনুর
তাদের নিয়ে কোথায় গেলো।
কফিলুদ্দি মনে মনে বলে, ‘গুলনুর বেগম তুমি কই? আমার পাগলা বউ ...।’
(কফিলুদ্দি ক্ষেপলে গুলনুরকে তুইও বলে)
সাতসকালে গুলনুর কোথায় গেলো কপিলুদ্দির জেয়ানে ধরে না।
২.
গুলনুর
ছেলে মেয়ে দুজনকে নিয়ে স্কুলে হাজির। স্কুলে ফ্রি টিফিন বক্স দিবে।
প্লাস্টিকের টিফিন বক্স। গুলনুরের চেয়ে তার সন্তানদের আগ্রহ বেশি। টিফিন
বক্স পেতেই হবে। গত সপ্তায় দিয়েছে টুথপেস্টÑ টুথব্রাসÑসাবান। সাবান দেয়ার
সময় কোম্পানির পক্ষ থেকে একজন শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা জোরে
জোরে পাঠ করেছেÑ ‘আমি শপথ করছি যে, আমি যখনি সাবান ব্যবহার করবো তখনি
অমুক’ সাবান ব্যবহার করবো।’ এ বিষয়ে কফিলুদ্দি বলেছিল, কোম্পানিগুলো পাগলা
কুকুর হয়ে গেছে। গুলনুর বলেছিল, কোম্পানির কথা কে মানে। আপনি কি তাদের
জন্য ওই কোম্পানির সাবান কিনে আনবেন? আপনে আসলে একটা তুলা পাতলা...।
টিফিন
বক্স নেয়ার সময় গুলনুর লক্ষ্য করে এর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। কিন্তু এ
বিষয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই তার। স্কুলে প্রবেশের সময় সে দেখেছে সাদ্দাম
মনমরা হয়ে বসে আছে। টিফিন বক্স নিয়ে সোজা সাদ্দামের দোকানে আসে গুলনুর।
দোকানের নাম সাদ্দাম ¯œ্যাক্স কর্নার। স্কুল ক্যাম্পাসে একমাত্র দোকান।
সিঙ্গারা ডালপুড়ি মূল আইটেম, সঙ্গে চিপস, চানাচুর, আচার, কেক, চকলেট, কলম,
খাতা, পেন্সিল ইত্যাদি। সুন্দর দোকান। সবচেয়ে সুন্দর ডালপুড়ি বিক্রির
দৃশ্য। সাদ্দামের বাম হাতে একটুকরো কাগজের উপর, পাকা নিমফল রঙের হলদে পুড়ি,
তেলে ভাজা মুড়মুড়ে পুড়ি, পাশে বুটের ডালের টপডেক্সি,পাঁচ ফোড়নের সম্ভাষণ
দেয়া মৌ মৌ ঘ্রাণ, নাকে ঢুকে ক্ষুধার গ্রন্থিকে উদ্দিপ্ত করে। ডাল দিতে
দিতে সাদ্দাম বলতে থাকে, আর দিবো আর... আর। ছেলে মেয়েরা মাথা ঝুলিয়ে হা
অথবা না । তখন বাম হাতে টপডেক্সির কানায় চামচের বাজন, অমনোযোগীরও যোগ ঘটে,
এই সবটা মিলে পাঁচ টাকা। দুটা দশটাকা। প্রত্যেকটির জন্য আলদা সাজন আলদা
বাজন।
গুলনুর সাদ্দামকে জিজ্ঞেস করে, কী হয়েছে সাদ্দাম, মন খারাপ কেনো?
‘ আপা কালকে দেখা করবেন। তখন বুঝবেন কেন মন খারাপ।’
‘আরে বেটা বলো না।’
‘ না আপা,কালকে আমাকে দেখবেন।’
৩.
পরদিন
স্কুলে ছেলে মেয়ে দুজনকে পৌঁছে দিয়ে গুলনুর সাদ্দামের দোকানে যায়। গুলনুর
জানে এ দোকান পেতে সাদ্দাম এবং তার বাপকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। গুলনুর
সাদ্দামের দোকান দেখে। গতকালের ডালপুড়ি যেমন ছিল তেমনি আছে।
গুলনুর বলে, কী সাদ্দাম, তোমার মনের অবস্থা আগের চেয়ে খারাপ দেখছি।
সাদ্দাম
বলে, আপা, আপনারা তো টিপিনবক্স নিয়ে খালাস। কিন্তু কালকে বলা হয়েছে,
বাইরের খাবার যেন কেউ না খায়। এখন আমি কী করি! শুনছি করোনার কারণে স্কুল
বন্ধ হয়ে যাবে। দেখি আল্লাহ কী করে।
‘তুমি সিঙ্গারা ডালপুড়ি বানানো ছাড়া আর কী পারো।’
‘আমি
সিঙ্গারা ডালপুড়িও বানাতে পারি না আপা। এসব আমার মা বানান। আমি শুনছি অটো
চালানো খুব সহজ। দোকান বন্ধ হলে অটো বা সিএনজি চালাবো ভাবছি।’
৪.
গুলনুর
বাসায় গিয়ে মনমরা হয়ে থাকে। ইতোমধ্যে করোনার কারণে স্কুল বন্ধ। গুলনুর
স্বামী কপিলুদ্দিকে বলে,‘আপনার সঙ্গে সাদ্দামের দেখা হয়?’
কপিলুদ্দি বলে, ‘কোন সাদ্দাম’
‘স্কুলে ডাল পুড়ি সিঙারা বিক্রি করে যে...। সাদ্দামের মোবাইল নাম্বার আমার কাছে নাই। আপনার কাছে আছে?’
‘সাদ্দামের মোবাইল নম্বর দিয়ে তুমি কী করবে?’
‘ কী করবো তাতো জানি না। তবে খুঁজ খবর নেয়া যেতো।’
‘
তুমি তার কাছে কৃতজ্ঞ আমি জানি। তোমার ছেলে মেয়েকে টাকা ছাড়া সিঙ্গারা
ডালপুড়ি খাওয়াতো। কিন্তু আমি তো এ দোকান পাওয়ার সময় তার পক্ষে জোর দাবি
করেছি।’
‘আপনি কি উপকারের বিনিময় গ্রহণ করতেছেন।’
‘তুমি যেকোন বিষয়ে বাড়াবাড়ি করো গুলনুর। তোমার ছোটকালের স্বভাব এখনো বদলায়নি।’
৫.
তারপর
একদিন খবর আসে, সাদ্দাম সিএনজি চালােেত গিয়ে বিপদে পড়েছে। তার সিএনজি
ছিনতাই হয়েছে। সাদ্দাম সুস্থভাবে ফিরে আসতে পারেলেও সিএনজি লাপাত্তা। মালিক
অর্ধেক মূল্য জরিমানা করেছে। তাড়াতাড়ি টাকা দিতে হবে।
গুলনুর কপিলুদ্দিকে বলে,‘ সাদ্দামকে কিছু টাকা সাহায্য করেন।’
কপিলুদ্দি বলে, ‘টাকা কোথায়। তুমি কেন সামান্য সিঙারা ডালপুড়ির কথা ভুলতে পারছো না। তুমি কিন্তু সীমা অতিক্রম করছো।’
গুলনুর এবার ভাবে তার গলার চেইন বিক্রি করবে। এ কথা সে কপিলুদ্দিকেও জানায়।
কপিলুদ্দি
গুলনুরের গলার চেইন বিক্রি করে দিবে বললে গুলনুর তার হাতে চেইন দিয়ে
নিশ্চিত মনে অপেক্ষা করে। কিন্তু কপিলুদ্দি চেইন বিক্রির টাকাও দেয় না,অথবা
চেইনও ফেরত দেয় না।
গুলনুর তারপর হতে বলতে থাকে, ‘কী হলো আপনি কি চেইন বিক্রি করেছেন, করলে সাদ্দামকে টাকা দিয়েছেন কি?’
মৌমাছির
গুঞ্জনরে মতো একই কথা বারবার বলতে থাকলে কফিলুদ্দি চিৎকার করে, ‘আমাকে
পাগল বানানোর প্রজেক্ট হাতে নিয়েছিস গুলনুর! তুই গত ছয় মাসের পাওনা
ডালপুড়ি সিঙারার দাম দিয়ে আয় সাদ্দামকে।’
কপিলুদ্দি আবার চিৎকার করে , ‘কুড়ি টাকা করে সাদ্দাম মোট পাওনা হয়েছে তিন হাজার ছয়শ টাকা।’
এমন চিৎকারের পরেও গুলনুর সাদ্দামকে তিন হাজার ছয়শ টাকা দেবার জন্য কপিলুদ্দিকে বলতে থাকে।
কপিলুদ্দি বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে তার স্ত্রীকে দেখতে থাকলে তার মনে হয়, একটা ঘোর অশান্তি তার স্ত্রী ইতোমধ্যে তৈরি করে ফেলেছে।
৬.
তারপর
থেকে গুলনুর কেমন যেন হয়ে যায়। মন দিয়ে সে ঘরের কাজ করে না। ছেলে মেয়েকে
পড়তে বলে না। পড়তে বললেও হিসেব নেয় না। তার রান্না কপিলুদ্দির মুখে
বিস্বাধ লাগে।
কপিলুদ্দি বলে , ‘গুলনুর তোর কী হয়েছে?’
গুলনুর বলে, ‘কিছু হয়নি।’
‘কিছু না হলে তোর এই অবস্থা কেন?’
‘ আমার আবার কী অবস্থা!’
‘
এই যে তুই কেমন হয়ে গেলি। করোনা না হলে স্কুল বন্ধ হতো না। স্কুল বন্ধ না
হলে সাদ্দামের দোকান বন্ধ হতো না। দোকান খোলা থাকলে তোর মাথা ঠা-া থাকতো।
মনে হয় তোর তুলা পাতলা হয়ে গেছে!’
‘ আমার তুলা পাতলা হয়ে গেলে আপনি
বাজারে যান। বাজারে গিয়ে আরও তুলা আনেন। তুলা এনে নতুন বালিশ বানান। সেই
বালিশে শুইয়া আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম
থেকে ওঠে দেখবেন আমার মাথা ঠিক হয়ে গেছে।’
কপিলুদ্দি আবার চিৎকার দিয়ে বলে, ‘আমি এখন কী করুম বুঝতে পারছি না।’ কিন্তু কপিলুদ্দির চিৎকারে গুলনুরের ভাবনায় ছেদ পড়ে না।
গুলনুর অধিক রাত পর্যন্ত জেগে থাকে। খোলা চোখে সে সাদ্দামের সবুজ রঙের সিএনজি দেখে। আবার সেই সিএনজি খুঁজার জন্য অচিন এক জায়গায় যায়।
রক্তের
ভেতর পূর্বপুরুষের, গত হাজার বছরের উপহার মানুষ অনিচ্ছাকৃত পেয়ে যায়,
গুলনুর সেই রকম কিছু একটা পায়। গুলনুর সেখানের লোকদের মামা বলে।
‘ মামা সাদ্দামের সিএনজিটা দেখেছেন?’
‘ কোন সাদ্দাম?’
লোকজন
অবাক হয়ে এই অপরিচত মহিলাকে দেখে। তারা একজন মাত্র সাদ্দামকে জানে যিনি
মিথ্য জীবানু অস্ত্রের মওজুদ করার অপরাধে বুশের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে
গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা গুলনুর থেকে শুনে , সাদ্দাম একসময় সিঙ্গারা ডালপুড়ি
বিক্রি করতো। সে নাকি সিএনজি চালাতো। তারা এই সাদ্দমকে চিনে না।
ঘুম
জাগরণের মধ্যবিন্দু থেকে গুলনুর মামা মামা বললে, কপিলুদ্দি শুনতে পায়
গুলনুর তার মাকে ডাকছে। সে চেয়ে দেখে গুলনুরের মুখে দুশ্চিন্তার ছাফ।
পরবর্তী
কয়েকমাসের মধ্যে গুলনুর শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলে একদিন সাদ্দাম সকল সংবাদ শুনে
গুলনুরের বাসায় হাজির হয়। সাদ্দাম গুলনুরের সামনে দাঁড়িয়ে বিনীতভাবে বলতে
থাকে, আপা আমি সাদ্দাম,আমাকে চিনতে পারছেন? আপা আমি ভালো আছি। আপা আমার কোন
দুঃখ নাই। আমার কোন কষ্ট নাই। আপা আমি সিঙারা ডালপুড়ি না বেচে ভালো আছি।
আপা আমি এখন অটো চালাই। আমার দৈনিক কমে হলেও পাঁচশ টাকা ইনকাম। আপা আপনার
কী হইছে?
সাদ্দামের ভালো থাকা না থাকা গুলনুরকে স্পর্শ করে না।
কপিলুদ্দির মেজাজা প্রথমে অশান্ত হলেও পরে ঠা-া হয় তারপর বলে, সাদ্দাম ঠিক আছে তুমি চেয়ারে বসো।
চেয়ারে
বসে থাকা সাদ্দামের মাথার উপর দিয়ে গুলনুরের দৃষ্টি এমন এক জগতে প্রবেশ
করে যেখানে কোন ব্যক্তি নেই বস্তু নেই, আছে এক নিস্পৃহ লক্ষ্য।
গুলনুর কি হঠাৎ করে এমন হলো আমরা তা জানি না।
তখন
একদিন গুলনুরের মা এবং বাবা গ্রাম থেকে আসে। তারা তাদের স্মৃতি থেকে
কিঞ্চিৎ লেখকের জন্য দান করলে লেখক তাই দিয়ে হাওয়া ঊনপঞ্চাশ বুঝাতে ব্যার্থ
চেষ্ট করে।
গুলনুর ছোটকালে তার মাকে জিজ্ঞেস করেছিল, মা বালিশ কী দিয়ে
হয়? গুলনুর আসলে জানতে চেয়েছিল, বালিশের ভেতরে থাকা বস্তুটির নাম কী।
গুলনুরের মা বলেছিলেন, ‘তুলা।’
‘আচ্ছা, মা, মানুষ মানুষকে তুলা পাতলা বলে কেন?’
গুলনুরের
বাপ পাশে বসে ছিডা জালের লসকির ঘরে লোহার ফাই বানতেছিল। মেয়ের কথায় তিনি
আনমনা হয়ে মেয়ের প্রতিই মনোযোগী হন। তিনি বলেন, সঠিক পরিমান তুলা না হলে
বালিশ হয় না। মানুষ মনে করে মাথায় কারো বুদ্ধি কম মানে মগজ কম। তুলা হলো
বালিশের মগজ। তাই কম বুদ্ধিমান মানুষকে মানুষ বলে, তুলা পাতলা।
একদিন
চৈত্র কী বৈশাখ মাসে মাইনুল সাহেবদের বাগান বাড়ির তথা গাঙ্গুলি বাড়ির বিশাল
শিমুল গাছের সকল শিম প্রচ- শব্দে ফেটে যায়। পশ্চিম দক্ষিণ কোনের ঝাঁহা
বাতাস গুলনুরের মাথার উপর দিয়ে সকল তুলা উড়িয়ে নিয়ে যায়। গুুলনুর সেই
উড়ন্ত তুলা এবং শীম ফাটার শব্দ থেকে বের হতে পারেনি। কাউকে বলতেও পারেনি।
এবং আজও না।
কবি ও শাহাদানা কহে ২
আবেদীন মাওলা
কবি কহেঃ
কোন দেশে শহরের উত্তরে বহে যে বাঁকা নদী
কোন দিন তার সত্যি পানি শুকিয়ে যায় যদি
পার হতে লোকের পায়ে একবিন্দু বালুও না লাগে
চরের জমি রোদের তাপে যদি বেদনার মতো ফাটে
যদি সব শুনে কোন পোরকুশলী বলে ‘বেশ সন্দর হবে
উঁচু পাড়ে বিকেল বেলায় নদীজন মুটিমুটি ঘাস খাবে’
সিমেন্ট তৈরি ঘুমটারথ পাড়ে বসিয়ে হল্লামল্লা রবে
ছবি তোলে উল্লাসে সব নেচে নেচে চৈতী গান গাবে।
আরও অনেক বছর পর লোকে যদি গল্প বানায়
জলহীন চোখের জলে নদীর পূর্ব দৃশ্য টানায়
চুপচাপ থাকতে থাকতে যদি কেউ হঠাৎ কথা বলে
কথার ভেতরে যদি টুকরো টুকরো মাংস যায় গলে
কেউ যদি বোতাম খোলে দেখায় ৭১এর মুক্ত আহবান
মুজিবের রক্তেই তো খোলে দিলো নদীর স্বচ্ছ জলজ জবান
অন্নদাসঙ্কর আগাম লিখেন পদ্মা মেঘনা গৌরি বহমান
বলি, নদী নষ্ট করে তঙ্কায় বেঘোর থাকে কোন সে নাদান
শাহদান কহেঃ
আলীবর্দীর নাতি সিরাজকে ধৃতকারী আমি কানকাটা শাহদান
সিরাজের মায়ের কান্না শুনেও আমার কাঁপেনি পরান
সেই আমি,নদী কাহানি শুনে আমার চোখে অশ্রু আসে না
আমি থাকি কালে কালে, ওরাও আমার মতো নির্দয় কানা
যারা খেয়ে স্বীকার করে না দেশের নদী জল ফল শস্যের দানা।
কুকিল , কু-কুকিল ২
আবেদীন মাওলা
হলদে নীম ফল
কুকিল মুখে নিয়ে
হলদে নীম ফল
কুকিল ওঠে গেয়ে
হলদে নীম ফল
যুবতীর জ্বলে হিয়ে
হলদে নীম ফল
যুবক বিদেশ গিয়ে
হলদে নীম ফল
মোবাইল মোবাইল দিয়ে
হলদে নীম ফল
অঙ্গ কি বুঝে অঙ্গ না নিয়ে
ফ্যাকাসে নীম ফল
কুকিল কণ্ঠ হারা
ফ্যাকাসে নীম ফল
উকিলের কথা শোনে
ফ্যাকাসে নীম ফল
নোটিশ ডাকে আসে
করমচা নীম ফল
হীম জলে চোখ ভাসে
করমচা নীল ফল
নিয়তী তুই বড় তড়াসে
কবিতা প্রাইভেট লিঃ ২
আবেদীন মাওলা
ইউরোপিয়ান বাণিজ্যে একদা ভয় ছিল
বিষম ভয়। কোম্পানি দেওলিয়া হলে
স্ত্রী পুত্র কণ্যাকেও তলব করা হতো জেল হতো
কিন্তু প্রাইভেট লিঃ হওয়ার পর কোম্পানি নিজেই
একটা সত্তা রুপে দেখা দিল। এবার এসো দেখি
কে আছো পড়াও বেড়ি মাস দ-ে। কার আছে সাহস?
তারপর থেকে কবি ও কোম্পানি এলাহি স্বাধীন
কোম্পানি হলো সৈকতে পতিত ফুলে ওঠা মৃত তিমি
স্ফিত হতে হেতে ভিষন শব্দে ফাটা পর্যন্ত লিমিটেড
কবিরা আফডেট যে যার মতো করে আফডেট
ইচ্ছে করলে তাদের সকল খতিয়ান করা যায় চেক
কোন পশুটা করবো জবাই ১
মো. হুমায়ুন মোর্শেদ চৌধুরী
মনের ভেতর কোন পশুটা উঠছে বেড়ে রোজ
সময় এলো সেই পশুটার সবার নেবার খোঁজ ।
বাড়ন্ত সে পশুর কথা ভাবার সময় আজ ,
কেমন করে নিত্য মোদের করায় খারাপ কাজ?
মিথ্যা দিয়ে গড়া শরীর , লোভে ভরা নাকি ?
হিংসা কিবা কপট সে যে যেমন খুশি আঁকি ।
সেই পশুটার গলায় ছুরি না দেই যদি আগে
কোরবানি টাই বৃথা যাবে পুণ্য পাবার ভাগে ।
অব্যক্ত কথামালা ৩
এম এস ফরিদ
সুখের দোর ঘেঁষে আসে ভাগীদার হতে
হাসির মাঝে আরো হাসি ফুটে ওঠে।
সুখ ভাগাভাগি করে খাই আমরা সবাই
শুধু দুঃখ হলে তা একান্তই তোমার
ওতে বাপু! আমাদের অধিকার নেই।
অথচ সুখের উত্তরসূরির অভাব নেই
শুধু অভাব; ভাবের বোধোদয় হয় না।
দুঃখের পোকায় কুটকুট করে খাওয়া
মানুষের ভেতর অব্যক্ত কথামালা জমাট বাঁধে।
শুধু মুখ খুলে না; তাই কেউ জানেও না।
যেমন গোপন থাকে মেহেদি পাতার রঙ।
ভেতরে চাপা পড়ে স্তুপ হয়ে যায়;
হয়ে যায় পাহাড় আর হয়ে যায় স্থীর।
ঝর্ণার জল ভেজে কাদামাটি হয়
আমার চোখ ভেজে মন পাথর হয়।
তবুও অব্যক্ত থাকে সব কথা; যা অনুক্ত।
কেউ জানতে না চাইলে..