হেলাল উদ্দিন বরকামতা ইউপি’র নবীয়াবাদ গ্রামের বাসিন্দা। তিনি গত বছরের ১০ মে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। স্ত্রী ও এক সন্তান ছাড়া তাঁর লাশের পাশে কেউ এগিয়ে আসেননি। দাফনে আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী এগিয়ে না আসায় ১১ ঘণ্টা লাশ ঘরে পড়ে ছিল। পরে ১০১ টিমের সদস্যরা গোসল, জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করা হয়। এভাবে চান্দিনা উপজেলার সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা, দেবিদ্বার উপজেলার বাগুরের ইউপি সদস্য শাহ জালাল, চান্দিনা বাজারের ব্যবসায়ী কিংকর সাহা, বাগুর পশ্চিম পাড়ার আবুল হোসেন, শ্রীমন্তপুরের সালমা আক্তার, বেলাশ^রের র্জ্যোতিময় রানী দেবনাথ, নিমসারের প্রফেসর মনিরুল ইসলাম, জাফরাবাদের রাজিব আচার্য্য টুবলু, ইন্দ্রজিৎ দেবনাথসহ মোট ৪৫টি লাশের দাফন কাফন ও সৎকার করেছেন ১০১ টিম। যাদব রায়, খলিলুর রহমান, কাউছার আহমেদ কামরুজ্জামান জেম ১০১ টিমের সদস্য। তাঁরা এ প্রতিবেদককে জানান, করোনায় মৃত লাশের কথা জানিয়ে কেউ ফোন বা মেসেজ দিলে শুরু হয় কাজ। লাশের গোসল, জানাজা, কাফন-দাফন বা সৎকারসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে ১০১ টিম। এখন পর্যন্ত মোট ৪১টি লাশের কাফন-দাফন ও সৎকার করা হয়েছে। ১০১ জনের মধ্যে প্রতি ১০জন করে আবার আলাদা টিম রয়েছে। যারা একটি লাশ দাফন কাফনের পর বিশ্রাম নেন পরের টিমের ১০জন সদস্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। প্রতি টিমে একজন করে আলেম রয়েছেন যিনি লাশ গোসল ও জানাজা পড়ান। হিন্দু রীতিতে লাশ দাফনের জন্যও রয়েছে একজন পুরোহীত। নারী লাশের গোসল কাফন পড়ানোর জন্য রয়েছে কয়েকজন নারী সদস্যও। সম্পূর্ণ ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে প্রতিটি লাশ দাফন কাফন ও সৎকার করা হয় বলে জানান তাঁরা।
গত মঙ্গলবার (১৩জুলাই) ঢাকার একটি হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান ওই এলাকার বাসিন্দা মো.হুমায়ুন আহমেদ। পরে তাঁর স্বজনদের ফোন পেয়ে হাজির হন ১০১ টিমের ১০জন সদস্য। তাঁরা লাশ দাফন কাফন ও জানাজা শেষে দাফন কাফন করেছেন। করোনায় মৃত মো. হুমায়ুন আহমেদের ভাই মো. মাসুম জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমার বড় ভাই মারা যান। পরে ১০১ টিমকে খবর দিলে তাঁরা এসে লাশ গোসল ও দাফন কাফনসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করেছেন।
টিম প্রধান স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মো.লিটন সরকার এ প্রতিবেদককে বলেন, করোনায় মৃত প্রতিটি লাশ দাফনের আগে সুরক্ষা পোশাক পিপিই, হাতে গ্লাভস, চোখে চশমাসহ পুরো পোশাক পরে গরমের মধ্যে কাজ করা যে কতটা কষ্টসাধ্য, তা বলে বোঝানো যাবে না। অনেক সময় দমবন্ধ হয়ে আসে। তারপরও আমরা থেমে নেই। প্রতিটি সদস্য জীবনের সর্বাধিক ঝুঁকি নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছে। আমরা এ পর্যন্ত ৪৫ টি লাশের সৎকার করেছি। তিনি আরও বলেন, এক দিনে তিনটি লাশের সৎকার করতে দুপুর থেকে অর্ধরাত পর্যন্ত কাজ করেছি। টিমের অনেক সদস্যের করোনা পজেটিভ হয়েছে। তাঁরা সুস্থ হয়ে পুনরায় কাজ শুরু করেছে। আমরা এ কাজ চালিয়ে যাব যত দেশ স্বাভাবিক না হবে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাকিব হাসান বলেন, করোনা প্রকোপের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১০১ টিম প্রায় ৪১জনের লাশ দাফন ও সৎকারের কাজ করেছে। এটি খুবই ভালো একটি কাজ। আমি নিজেও তাদেরকে দিয়ে বেশ কিছু লাশের দাফন কাফন ও সৎকার করিয়েছি।
দেবিদ্বারের সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল বলেন, ১০১ টিম লাশ দাফন কাফন থেকে শুরু করে মানুষের বিপদ আপদে ডাক পেলে ছুঁটে যান। তাঁদের এ কাজে আমি সব সময়ই যেকোন সহযোগিতা করব।