বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বাঙালির জীবনে আগস্ট অনেক
হারানোর বেদনা নিয়ে আসে। অনেক শোক আর বেদনাময় স্মৃতির পসরা সাজিয়ে আসে
আগস্ট। প্রতিবছর আগস্ট মাস এলেই প্রগতিশীল, স্বাধীনতায় বিশ্বাসী প্রতিটি
বাঙালির মনে নানা ঘটনা ঘুরপাক খায়। স্বাধীন বাংলাদেশে এ মাসে নেমে আসে
বাঙালি জাতির ওপর কালো থাবা।
ইতিহাসে কলঙ্কিত এক অধ্যায় সূচিত হয়েছে এ
আগস্ট মাসে। ইতিহাসের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে বাঙালি জাতি সে নিষ্ঠুর হত্যার
বিচারের রায় কার্যকরের মাধ্যমে কলঙ্কমুক্ত হলেও ঘাতকদের বিরুদ্ধে তীব্র
ঘৃণার চেতনাকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে এ মাসে। আগস্টকে ঘাতকরা তাদের নিষ্ঠুর
টার্গেটের মাস হিসেবে বেছে নিয়েছে বারবার আর ১৫ আগস্টের পরিচয় বাঙালীকে
নতুন করে দেয়ার কিছু নেই।
এদিনে ক্ষমতালোভী কিছু পাষন্ড, বর্বর, অসভ্য,
জানোয়ার সেনা অফিসারের হাতে সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন বাঙালী জাতির পিতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিবছরের এদিন বাংলাদেশের জন্য জাতীয় শোকের
দিন। বাংলার ইতিহাসে এমন ভয়াবহ কলঙ্কিত ইতিহাসের দিন আর কখনও আসেনি, বোধ
করি আসবেও না। ১৫ আগস্টের ভোরে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালীকে হারানোর ক্ষতি
আজীবন এ জাতিকে বহন করতে হবে।
বাঙালি জাতির বেদনাবিধূর শোকের মাস
আগস্টের আজ তৃতীয় দিন। সর্বত্রই শোকের আবহ। রাজধানীসহ সারাদেশেই বিশাল
বিশাল কালো পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার টানানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে
শ্রদ্ধা জানিয়ে তাতে নানা স্লোগান-কবিতা শোভা পাচ্ছে। শোকের মাসে বাঙালী
জাতি এবার পলাতক খুনীদের ফিরিয়ে এনে ফাঁসি এবং খুনীদের নেপথ্যের
দোসর-মদদদাতাদের মুখোশ উন্মোচন করতে জাতীয় কমিশন গঠনের দাবিতে সোচ্চার।
এবারের
শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুর নেপথ্যের মাস্টারমাইন্ডদের মুখোশ উন্মোচনে জাতীয়
তদন্ত কমিশন গঠনের দাবির পাশাপাশি অতিদ্রুত রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের
তালিকা প্রকাশের প্রচ- দাবি চারদিকে। ডিসেম্বরের মধ্যে তালিকা প্রকাশের
আশ্বাস এসেছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে। সেটি সম্ভব হলে আগামী প্রজন্ম
জানতে পারবে কারা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার শত্রু, পাকিস্তানের দোসর
রাজাকার-আলবদর-আলশামস। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন স্থানে রাজাকার ও
যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা টাঙিয়ে দেয়ার চিন্তাভাবনাও রয়েছে সরকারী তরফে।
আগস্ট
বাঙালীর জীবনে শুধু শোকের নয়; একটি অভিশপ্ত মাসও বটে। এ মাসেই ঘটেছিল
ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কলঙ্কজনক ঘটনা। ঘাতকদের হাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধু
কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। দেশে থাকলে তাঁদেরও জীবন দিতে হতো
নরহন্তারক কাপুরুষদের হাতে।
সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর আজও
হত্যাকারী ও তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। ১৯৮১ সালের মে মাসে দেশে
ফিরে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। কিন্তু
ষড়যন্ত্রকারীরা তার পিছু ছাড়ে না। বার বার তাকে হত্যার চেষ্টা চলতে থাকে।
চলে একের পর এক নগ্ন হামলা। সর্বশেষ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু
এভিনিউয়ে শেখ হাসিনার এক সমাবেশে চলে আরেকটি নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। তৎকালীন
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে মূলত শেখ হাসিনাকে হত্যার
উদ্দেশ্যেই ঘাতকরা ওই সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালায়। কিন্তু গ্রেনেড
লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় তিনি আবারও মৃত্যুজাল ছিন্ন করে প্রাণে রক্ষা পান। তবে
নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড প্রাণসংহার করে আওয়ামী লীগ নেত্রী বেগম আইভি রহমানসহ ২৪
নেতা-কর্মীর। তাই বর্ষ পরিক্রমায় আগস্ট এলেই সেই রক্তাক্ত স্মৃতিগুলো
দেশবাসীর মনে ভেসে ওঠে।
করোনা মহামারীর মধ্যেও সামাজিক দূরত্ব ও যথাযথ
স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনেই নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শোকাতুর
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক
সংগঠন শোকের নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে স্মরণ করছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ
বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ’৭৫-এ ইতিহাসের নিষ্ঠুর ও
জঘন্যতম এই হত্যাযজ্ঞের পর থেকে বাঙালী ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস এবং
পুরো মাসকে শোকের মাস হিসেবে পালন করে আসছে।
মুক্তিযুদ্ধের
নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মাসব্যাপী জাতীয় শোক দিবস এবং ২১ আগস্ট
ভয়াল গ্রেনেড হামলা দিবসের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে।